নিশির প্রবাস (পর্ব-১২)

Photo of author

By Asma Ahmed

পরের শিফট এ সেন্ডি এলে সেন্ডিকে নিশি জানালো, ওর আওয়ার কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেন্ডি বললো এখন এভাবেই চলবে, পরের সপ্তাহে আরো কমিয়ে দিবে, ( যাতে তুমি নিজ থেকে চলে যাও) – আমি এখন কি করবো? ” তোমার এখন ই নতুন চাকরি খোজা উচিত।” খুব মন খারাপ নিয়ে নিশি কাজ থেকে বের হলো। বাসায় এসে রান্না শেষ করে, সুমন এর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। এই সময় আরিফ এর ফোন এলো, নিশির গলা শুনে হয়তো আন্দাজ করেছে কিছু
” কি হয়েছে তোমার? ” – কই কিছু না তো। ” না, সত্যি করে বলো, কালকে আমরা প্রমিজ করেছি শেয়ার করবো সবকিছু” – সত্তিই কিছু হয় নাই, এম্নি।
“ঠিক বলছো না তুমি”। সুমন আসার সময় হয়েছে,ফোন রাখি,” মিসিং ইউ”। একটু পর সুমন এলো, খাওয়া শেষ করুক, তারপর বলবে, আজ নিশি কিছু খায় নাই, তাই সুমন এর সাথে খেতে বসলো। খাওয়া শেষ করে, নিশি সুমন কে বললো একটা কথা আছে,
” নিশি সেইদিনের পুরা ঘটনা সহ আজ আওয়ার কমিয়ে দেওয়ার বিষয়, পুরা টা বললো।(সব টা শুনে সুমন নিশির চুল ধরে, চড় থাপ্পড়, অনেক মারলো, আর বললো “একটা কিস করলে কি তোর সতিত্ত চলে যাইতো?
আনকালচারড, মুর্খ এর দল।”
এক সময় মনে হচ্ছিল ও অজ্ঞান হয়ে যাবে। ও পাশের রুমে কাউচ এর উপর যেয়ে শুয়ে অনেক কাদছিলো আর ভাবছিলো, ও সুইসাইড করবে। সকালে উঠে দেখে সুমন কাজে চলে গেছে।
ও বাথরুম এ আয়নার সামনে গিয়ে দেখে, ওর চোখ ফোলা,যে কেউ দেখে বুঝবে অনেক কান্নাকাটি করেছে, আর গালে, গলায় হাল্কা দাগ। ও বুঝতে পারছে না এই অবস্তায় কাজে যাবে কি করে!! না যেয়ে ও উপায় নাই। সাবওয়ে তে ওকে লোকজন ঘুরে ঘুরে দেখেছিলো। ও চেনঞ্জ করে উপরে যাওয়ার পার, কলিগ দুই তিন জন জিজ্ঞেস করলো।ও বললো শাওয়ার নিতে যেয়ে পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলাম।
গা ব্যাথা করছে, কস্ট হচ্ছে কাজ করতে। ও এখন ফ্রন্ট এ কাজ করে, দম নেওয়ার সময় নেই, রিসিট দেখে সার্ভ করার সময় দেখে সামনে আরিফ ট্রে না নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ও একটু হেসে বললো স্যার ইটস ইউর, আরিফ ট্রে টা নিয়ে সামনের একটা টেবিল এ বসলো, খাচ্ছে না কিছুই, ওর দিকে তাকিয়ে আছে, নিশির অসস্তি লাগছে। একটু পর একটা টিস্যু এনে দিলো এক বয় ( আমি জানতাম something is very wrong, তোমাকে দেখে আমি কথা হারিয়ে ফেলেছি, তুমি তোমার বস কে বলে এখনি বের হয়ে আসো, তুমি না বের হলে আমি সারাদিন এইখানেই বসে থাকবো, তোমার কাজের শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করবো)
নিশির কাজ করতে খুব কস্ট হচ্ছে, পুরো শরির ব্যথা করছে, মাথে বেথ্যা করছে। ও একসময় মেনুয়েল কে যেয়ে বললো, মেনুয়েল ওকে দেখে, ছুটি দিয়ে দিলো। ও বের হওয়ার সাথে সাথে আরিফ ওর হাত ধরে গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে ওকে বসতে বল্লো। ওর কোন শক্তি নাই কথা বলার।
“অসুধ কি খেয়েছো? “

কিছু না। ওর কপালে হাত দিয়ে দেখলো ওর জর, ও দুইটা ট্যেবলেট দিয়ে বল্লো তোমার রেস্ট দরকার। নিশি পাগলের মতো বলে উঠলো, আমি বাসায় যাব না। (এই মুহুর্তে নিশির মনে হচ্ছিলো কেউ ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখুক) ” আচ্ছা যেও না, কি খেয়েছো” – খেয়েছি। আরিফ একটু দূরে একটা রেস্টুরেন্ট এর সামনে গাড়ি দাড়া করালো, নিশির হাত ধরে বললো “এসো কিছু খাবে” নিশি কিছু বললো না, আরিফ মেনু সামনে দিয়ে বললো “কি খাবে বলো” – স্যুপ, আর কিছু না। আরিফ সি ফুড স্যুপ এর অর্ডার দিলো। ” তুমি কি আমাকে বলবে কাল কি হয়েছিলো? “
নিশি চুপ করে আছে, কিছু বলতে পারছিলো না, ওর চোখ ছলছল করে করছে। ” আচ্ছা থাক বলো না। হঠাত নিশির হাত দুটি ধরে বললো, “প্লিজ আমাকে হেল্প করো, আমি কিছু করতে পারছি না, কারন তুমি আমাকে কিছু করতে দিচ্ছো না, আমি কাল ফোনে তোমার ভয়েজ এ টের পেয়েছি, কিন্তু আজ তোমাকে দেখে, আমি কি করবো, কি বলবো কিছু বুঝে উঠতে পারছি না “
— কারো কিছু করার নাই।
” কেনো নাই, তুমি আমার সাথে থাকলে আমি অনেক কিছু করতে পারবো, প্লিজ এইটুকু বিশশাস রাখো আমার উপর” – স্যুপ খাই।
আরিফ ওকে বাচ্চা দের মতো করে স্যুপ খাওয়ালো। তারপর একটু দূরে একটা পার্ক এ নিয়ে গেলো, তখন প্রায় সন্ধা হয়ে আসছে, বেশ ঠান্ডা পড়ছে। একটা বেঞ্চ এ বসলো ওরা। নিশির খুব শরির খারাপ লাগছিলো, শিত ও করছিলো, আরিফ বুঝতে পারলো, উনি আকাশী কালার একটা পুলওভার পরা, উপরে কালো ওভার কোট, সে ওভার কোট টা খুলে নিশির গায়ের উপর দিয়ে দিলো, ওরা পাশাপাশি বসে আছে, ” তোমার কি ইচ্ছা করে না তোমার জীবন টা তোমার মতো করে বাচতে? “
–আমার ইচ্ছায় কি আসে যায়?
” তোমার জীবন কার ইচ্ছায় আসবে যাবে ?”
নিশি বল্লো আমার শরির টা ভালো লাগছে না। আরিফ নিশির মাথাটা নিজের ঘাড় এ রেখে বললো, একটু রেস্ট নাও। নিশি কিছুক্ষণ সত্তিই ঘুমিয়ে পড়েছিলো। উঠে বললো — সরি, কয়টা বাজে? ” ৬টা, সরি কেনো ” — এই যে আপনাকে কস্ট দিলাম, আপনার ঘাড় ব্যেথা করছে নিশ্চয়ই।
” যদি পারতাম ওই সময় টা আমি লক করে দিতাম “
নিশি বললো চলেন রাত হয়েছে,
“চলো।” ( আরিফ এর একটা বিষয় নিশির খুব ভালো লাগে, ও কখোনো কিছু নিয়ে চাপাচাপি করে না)
নিশির বাসায় যেতে ইচ্ছা করছে না, ভোর বেলায় দেখে অনেকেই সাবওয়ে তে ঘুমিয়ে থাকে, মন চাইছে ওখানে যেয়ে ঘুমিয়ে থাকে।
(দিপ ছিলো শিখা ছিলো, শুধু তুমি ছিলে না বলে) গাড়িতে গান টা রিপিট হচ্ছে। ” তুমি কি এখন একটু বেটার ফিল করছো? ” — হুম অনেক টা। “শোন বাসায় যেয়ে কিন্তু অবশ্যই কিছু খাবে, তারপর ঘুমাবে।”
নিশি কোন উত্তর দিলো না।
বাসা চলে আসছে,
” ভালো থেকো” — হুম।
রান্না করতে ইচ্ছা করছে না, কালকের মাংস আছে, ওটাই গরম করে টেবিল এ দিলো,( কি আর হবে, আজ ও না হয় দুই একটা চড় খাবে। প্রেসার কুকার এ ভাত বসিয়ে দিয়ে লাইট অফ করে শুয়ে আছে, ফোন বাজছে, — হ্যালো, ” অইপাশ থেকে চুপ, গান বাজছে
( যে আখিতে এতো হাসি লুকানো) নিশি কিছু বলছে না, জানে এটা কার ফোন। ও একটু পর লাইন কেটে দিয়ে শুয়ে পড়লো। সুমন এসে জিজ্ঞেস করলো “এতো তারাতারি শুয়ে পরেছো যে” — খেয়েছো? ( নিশি একটু অবাক হলো, কখোনোই সুমন ওকে খাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করে নাই) – খেয়েছি।
সুমন খেয়ে নিলো, এমনকি কালকের তারকারি যে দিয়েছে সেটা নিয়ে ও কিছু বললো না। ( হয়তো বা কালকের ঘটনার জন্য গিলটি ফিল করছে) খাওয়া শেষ করে সুমন খুব উতফুল্ল গলায় বললো “শোন দুই বেড রমের বাসার কথা বলেছিলাম না, ওটা পেয়ে গেছি, ১ তারিখ শিফট করবো”

– আচ্ছা।
এখন নিশি বুঝতে পারছে সুমনের এই অন্যরকম আচরণ এর কারন। দুই বেডরুম এর কথা যখন ই উঠেছে, তখন ই সুমন এভোয়েট করেছে, বা বিরক্তি প্রকাশ করেছে।

চলবে….