নিশির প্রবাস (পর্ব-১১)

Photo of author

By Asma Ahmed

নিশি কাজে গিয়ে দেখলো সব ঠিকঠাক,(গতকালের ঘটনায় ও একটু ভয়ে ভয়ে ছিলো, একবার ভাবছিলো সুমন কে বলবে, ভালো হয়েছে বলে নাই) মেনুয়েল এর সাথে একবার দেখা হলো,ও উইশ করলো,মেনুয়াল ও মাথা নেড়ে রিপ্লাই দিলো।
আজ ও বিকালে আরিফ সাহেব এলো, পেমেন্ট দিলো, হাসি বিনিময় হলো, পেমেন্ট দিলো, এক কাপ কফি নিলো, অনেকক্ষন বসে বসে খেলো, চলে গেলো, কোন টিস্যু নেই আজ।
বাসায় গিয়ে নিশি দেখলো একটা শপিং ব্যাগ এ অনেক কিছু,, সুমনকে জিজ্ঞেস করে জানলো এক ভদ্রলোক বাংলাদেশ এ যাবে, তাদের বাসার লোক জন দের জন্য এই গিফট। একবার সুমন ওকে বললো ও না, ওর ও তো ইচ্ছা করে ওর ভাই, ভাতিজা দের কিছু পাঠাতে। (আর জিনিষ গুলি ওদের ই বাসায় যাবে, কারন সুমন এর ভাই রা কেউ বাংলাদেশ এ থাকে না, তাই ওরা গ্রামের বাড়িতে মুভ করেছে) ও কিছু বললো না, ঝামেলা ভালো লাগে না ওর। নিশি একটা ছোট বক্স এ ওর কাটা চুল গুলি দিয়ে দিলো, রেপিং পেপার দিয়ে ভালো করে রেপ করে মুখ আটকে দিলো। উপরে আম্মার নাম লিখে দিলো। সুমন কে দিয়ে বললো এটা কাইন্ডলি আম্মা কে দিতে বইলো। ” কি এটাতে” – আমার চুল গুলি। ” এই গুলি পাঠাচ্ছো কেনো? “

কাটা চুল , মরার পর যার চুল তার সাথে কবরে দিয়ে দিতে হয়, তাই।
“আজাইরা কথা”।
আজ নিশির ডে অফ, আরিফ সাহেব এর সাথে বসবে আজ, কি বলতে চায় দেখা যাক। ও ফোন করলো আরিফ কে, – আজ কি আপনি ফ্রি আছেন? ” কখন কোথায় বলো” – আমি আজ ফ্রি, কিন্তু এখানে আমি তো তেমন কোন জায়গা চিনি না, আর কোথায় কোন বাংগালি দেখে ফেলে সেই ভয় এ আছি। ” রিলাক্স প্লিজ, তুমি ১২ টায়
লা লুইস এর সামনে দাড়াও আমি তোমাকে পিক করছি” – তারপর, কোথায় যাবো? “যেখানে তোমাকে কোন বাংগালি দেখবে না। আমি চাই না তোমার মনে কোন ভয় কাজ করুক”।
উনি আসলেন সময় মতো, গাড়িতে উঠে শুনতে পেলো বাংলা গান বাজছে, ” কেমন আছো তুমি” ভালো আছি। – আপনি বাংলা গান খুব ভালোবাসেন? ” হুম, কারন আমি বাংগালি, হিন্দি ও শুনি, কম ‘ তুমি কোনটা শুনতে চাও? ” – আমার কোন ইচ্ছা নেই, আপনার যেটা ইচ্ছা। “কেনো তোমার কোন ইচ্ছা নেই? ” – নেই,এটার আবার কেনো কি? আরিফ টিপে গান চেঞ্জ করলো, ইংলিশ গান, নিশি চুপ করেই আছে, ওর তো কোন ইচ্ছা নেই। “তোমার একটা ইচ্ছার কথা বলো” – আমার কোন ইচ্ছা নেই। “একটা”, নিশি আনমনে উত্তর দিলো – আমার দেশে চলে যেতে ইচ্ছা করছে। আরিফ নিশির দিকে তাকালো, কিছু বললো না। গান চেঞ্জ করে দিলো,
( তুমি একজন ই শুধু বন্ধু আমার), আপনার প্রিয় শিল্পি কে? ” উনাদের সবার গান ই আমার ভালো লাগে, মান্নাদে, শচিন দেব, সতিনাথ,…..” শহর থেকে দূরে একটা জায়গায় থামলো ওরা, লেক, পার্ক,সুন্দুর একটা জায়গা ।” খিদা লেগেছে” – না, আমি দেরিতে ব্রেকফাস্ট করেছি। ” এখানে রেস্টুরেন্ট ও আছে, এখানে বসবে” – হ্যা বসা যায়। ওরা একটা সুন্দুর জায়গায় বসলো। – বলুন কি বলতে চান?
আরিফ চুপ করে আছে, একটু আনমনা মনে হচ্ছে, আকাশ, গাছ পালা দেখছে, আর ফাকে ফাকে নিশির দিকে তাকাচ্ছে।
” জানো তোমাকে যেদিন আমি প্রথম দেখেছি, আমি জানতাম না তুমি কারো বউ, ভেবেছিলাম কারো মেয়ে, অন্য কোন স্টেট থেকে নিউইয়র্ক বেড়াতে এসেছে, সেইরাত আমি সারারাত শুধু তোমায় ভেবেছি, আমি এই মেয়ে টাকেই এতোদিন খুজছিলাম মনে মনে, স্ট্রাইপ স্কার্ট, রেড শার্ট, মাথা ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে এর ওর সাথে কথা বলছে, পরদিন যখন জিজ্ঞেস করে জানলাম, আমার বুকের ভিতর কেমন একটা অনুভুতি হয়েছিলো আমি বোঝাতে পারবো না, কিন্ত আমি তোমাকে হারাতে চাই না “

মানে কি? আপনি তো জানেন আমি ম্যারেড।
” এইজন্য ই বন্ধুত্ত চাই “

কেমন বন্ধুত্ত? কপাল কুচকে নিশি জিজ্ঞেস করে।
” শেয়ারিং, কেয়ারিং, ফিল ফর ইচ আদার”
( নিশি এতো কঠিন কথা বুঝে না) – কি শেয়ারিং? কি ফিল করার আছে?
“তোমার ভালো লাগা, খারাপ লাগা, আনদ্দ, দুঃখ, কস্ট, অনুভুতি সব”

আর ফিলিং?
“একটা মানুষ এর সাথে যখন তোমার বন্ধুত্ত হবে তুমি তার জন্য ফিল করবা না? যেমন আমার সাথে যদি তোমার বন্ধুত্ত হয়, তুমি যদি শুনো আমার খুব শরির খারাপ, তোমার খারাপ লাগবে না? আমি প্রতিদিন তোমাকে ফোন দিই, একদিন দিলাম না, তুমি মনে করবা না, আজ কেনো ফোন দিলো না, কোন বিপদ হলো কিনা? ” – হুম।
” আমি বন্ধুত্তের হাত বাড়িয়েছি, আমাকে ফিরিয়ে দিও না প্লিজ, আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না,
আগলে রাখবো”।
লাস্ট এর কথাটার নিশির বুকে কেমন একটা অনুভুতি হলো

আগলে রাখবো।
নিশি বললো আমার খিদা পেয়েছে, ” চলো, কি খাবে? কি ধরনের খাবার তুমি পছন্দ করো?”

একটা হলেই হয়। ইটালিয়ান একটা রেস্টুরেন্ট এ গেলো, ওকে জিজ্ঞেস করে করে অর্ডার দিলো, প্রন লাইক করে কিনা? প্রন সুসি, আরো কতো কি। ” তোমরা কয় ভাই বোন?”

দুই ভাই আর আমি সবার ছোট। “তারমানে তুমি একমাত্র মেয়ে” -হুম। আচ্ছা তোমার পেরেন্ট এতো তাড়াতাড়ি তোমার বিয়ে দিয়েছেন কেনো? অবশ্য ভালো হয়েছে, না হলে তোমার দেখা পেতাম না”

নিশি বিস্তারিত বললো কিভাবে ওর বিয়ে হয়েছে।
খাবার এর সময় আরিফ খুব যত্ন করে এটা এভাবে খেলে মজা লাগবে, ওটার সাথে এটা খাও, মজা লাগবে,(নিশির হঠাত খুব মন খারাপ লাগছিলো, আম্মার কথা মনে পরছিলো)।
“আইসক্রিম খাবে ” – না, আর কিছু খেতে পারবো না।
“জানো পুরর্নিমার রাতে এই পার্ক টা এতো অপরুপ লাগে, ভিষন সুন্দুর”

আপনি পুরর্নিমা বোঝেন?
“কেন আমাকে কি তোমার অন্য গ্রহের মানুষ মনে হয়? পুরর্নিমর রাতে আমি একা একা খোলা জায়গায় যাই, অনেক রাত অব্দি থাকি”

আমারা পুরর্নিমার রাতে সব ভাই বোন রা ( চাচাত, ফুপাত) মিলে ছাদে অনেক রাত অব্দি থাকতাম, অনেক মজা করতাম।
“এই পুরর্নিমার সন্ধায় আসবে আমার সাথে?”
— কাজ এর উপর ডিপেন্ড।
ফেরার সময় রাস্তায় গাড়ি দার করিয়ে, আইসক্রিম কিনলো,” কিছুদিন পর খুব ঠান্ড পরে যাবে, আর খেতে পারবে না”
ড্রপ করার করার সময় আরিফ বললো
“আমার উপর কি ভরশা করা যায় না?”

আমি তো না বলি নাই।
নামার সময় ও ধন্যবাদ দিলো, আরিফ কে দেখেই বোঝা গেলো এই ধন্যবাদ বলাতেই উনি খুব খুশি।
অনেক দিন পর অনেক ভালো একটা দিন কাটলো আজ।
সুমন আজ ও বললো দুই বেড রুমের একটা ফ্লাট দেখতে হবে, সময় ই পাচ্ছি না। ( নিশি কে শোনানো)
আজ কাজের জায়গায় উইকলি রুটিন দিবে, ওরা যেটা করে কাজে গিয়ে সবচেয়ে প্রথম দেখে কার ডিউটি কখন, আর কতো আওয়ার।
নিশি নিজের চোখ কে বিশশাস করাতে পারছিলো না, ওর যেখানে প্রতি সপ্তাহে আওয়ার – এভারেজ ৫২/৫৪ ঘন্টা দিতো, এই সপ্তাহে মাত্র ৩০ ঘন্টা!!
চেঞ্জ করে উপরে গিয়ে দেখলো ক্যাশ এ ও অন্য একজন।
ও বুঝলো সেদিন মেনুয়েল এর সাথে ওই আচরণ এর মুল্য।
জানে না সামনে কি অপেক্ষা করছে!!

চলবে…