নিশির প্রবাস (পর্ব-১০)

Photo of author

By Asma Ahmed

আজ সুমন এর অফডে, তারপর ও সুমন নাস্তা করে তাড়াহুড়া করে বের হয়ে গেলো, একটা ফোন এসেছিলো। কাল রাতে বললো দুই বেড রুমের বাসা নিতে হবে। এই বাসাটা ঢুকে একটা স্পেস (লিভিং রুমের মতো)ওটার সাথে ওপেন কিচেন। আর ১টা বেড রুম। এনাফ। দুই বেড রুমের বাসা কেনো?
আজ সুনিল কে ফোন করবে, জিজ্ঞেস করবে, আচ্ছা কি জিজ্ঞেস করবে? দুই বেড রুমের বাসা খুজছে, কেমন হাস্যকর হবে বিষয় টা, আচ্ছা আর একটু দেখা যাক। সুনিল কে ফোন করলো তারপর ও একটা, ও তো ফোন করেই না, সুনিল ই ফোন করে, সুনিল ওর ফোন পেয়ে খুব খুশি, এতদিন এ সুনিল কিছুটা জানতে পেরেছে নিশি আর সুমন এর সাংসারিক জীবন যে খুব একটা সুখের না। সুনিল কে উপমার (সুনিলের গার্ল ফ্রেন্ড) কথা জিজ্ঞেস করলো,কিছুক্ষণ কথা বলে রেখে দিলো, মানুষ এর কথা বলার কতো টপিক, সুমন মনে হয় গুটি কয়েক কথা ছাড়া কথা বলতে পারে না।
একটা ফোন এলো, নিশি হ্যালো হ্যালো করলো, ওপাশ থেকে কেউ কথা বলছে না। ইদানীং এটা হয়, একদিন সুমন এর চর ও খেতে হয়েছিলো এই জন্য, বলছিলো তোর ফোন, আমি ধরাতে কথা বলছে না। কয়েকটা বাংগালি প্রোগ্রাম এ যাওয়াতে দেখলো এখানে ভালোই বাংগালি আছে। অনেকেই নিশির সাথে ফোন এ কথা বলতে চায়, খুব ইন্টারেস্ট ও দেখিয়েছে দুই এক জন। ইনিয়ে বিনিয়ে কতো কথা।
এ সবে নিশির পুরুষ মানুষ এর প্রতি একটা বিরুপ ধারনা ছাড়া আর কিছুই আসে নাই।
নিশির আজ ডে শিফট, ও রান্না করে বের হয়ে গেলো কাজের উদ্দেশ্যে।
রাতে বাসায় এসে দেখলো সামনের রুম টাতে অনেক বিয়ার এর ক্যন। সুমন বেড রুমে ঘুমাচ্ছে। অজানা কারনে নিশির খুব ভয় লাগছিলো, মনে হচ্ছিলো খুব খারাপ কিছু আসছে সামনে। সুমন সিগারেট খায় না, তাই বাড়িতে কোন এ্যশট্রে নেই, একটা বাটি তে অনেক গুলি সিগারেট এর ফিল্টার।তারমানে কেউ এসেছিলো বাসায়।
কে হতে পারে?
নিশি কাজে জায়গায় গিয়ে দেখলা, একটা রব রব অবস্তা, একটা কর্নার সাজানো হচ্ছে বেলুন দিয়ে, কি ব্যাপার? কাল মেনুয়েল এর জন্মদিন,
রাত ১২টায় সেলিব্রেশন হবে, সব এম্পোয়িকে থাকতে হবে রাত ১২টা অব্দি, আর ১২টা থেকে প্রথম ১০ জন কাস্টোমার ফ্রি। কি যন্ত্রণা, ওর আজ ১০ টা অব্দি ডিউটি। ২ ঘন্টা ও কি করবে? সেন্ডি বললো তুমি বাসায় যেয়ে আবার আসতে পারো। দেখা যাক। বিকাল ৫ টার মতো, ও ক্যাশ এ বিল করছে, সামনে দেখলো একটা পরিচিত মুখ, আরিফ সাহেব, পিছনে আরো লোক দাড়ানো, তাই একটা হাসি দিয়ে ” How are you” জিজ্ঞেস করা ছাড়া আর কিছু বলার মতো অবস্তা নেই। ওইপাশ থেকে বাংলায় একটা উত্তর এলো, ও বুজলো না, চেঞ্জ ফেরত দিয়ে নেক্সট কাস্টোমার এর দিকে মন দিলো। ( ও ভাবছে এতো ফাস্ট ফুড এর দোকান রেখে এই টা তেই আসতে হবে কেনো উনার!!, আচ্ছা আসতেই পারে, ও খুব বদ হয়ে যাচ্ছে দিন দিন) যাওয়ার সময় একটা টিস্যু দিয়ে গেলো, উনার স্টাইল, কিছু লিখা। নিশি দেখার সময় পাচ্ছে না, ক্যাশ এর এই এক প্রব্লেম, এক মিনিট এর জন্য মুভ করা যায় না, ইস আজ এতো লোক কেনো!! অবশ্য এখন রাশ আওয়ার, ইচ্ছা করলে নিশি এখন ই পড়তে পারে, কিন্ত উনার এক লাইন এর লিখা বুঝতে ও সময় লাগে, আর এটা মনে হচ্ছে একটু বড় লিখা। নিশি পকেট এ রেখে দিলো। কাজের ফাকে ভাবলো ১০ টার দিকে বাসায় ফোন করে সুমন কে বলে দিবে রাত ১২টার প্রোগ্রাম শেষ করে একবারেই আসবে। বাসায় যেয়ে কি করবে, বরং এই দুই ঘন্টা আশেপাশে অনেক সুন্দুর সুন্দুর জায়গা আছে অই গুলি দেখবে। এখন একটু ফ্রি সময় পেলো, বাথরুম এ যেয়ে পড়লো কি লিখা,
যার বাংলা করলে হয়-

নিজেকে খুব চিপ/ ক্যাবলা মনে হচ্ছে তোমার কাছে, তুমি কি আমাকে তাই মনে করো?🙄🙄

ইউনিফর্ম এ যে কাউকে এতো সুন্দুর লাগতে পারে, আজ ই প্রথম অনুভব করলাম।🤩🤩

সেদিন এর দুটো গান ই তোমাকে ডেডিকেট করে গাওয়া, তোমাকে জানালাম।🤭🤭

জানিনা আমার নাম্বার রেখেছো কি না,
তারপর উনার নাম্বার…….।
নিশি বুঝতে পারছে না, ওর কি আচরণ এ উনি এমন কথা লিখতে পারে!!!
ও কাজ থেকে বের হয়ে বুথ থেকে ফোন করলো উনার নাম্বার এ, – আমার কোন আচরণ এ আপনার এরকম মনে হলো? “জানি না, মনে হয়েছে” – আজিব, আপনার অকারনে একটা কিছু মনে হবে, আর আপনি বলবেন?
“অকারণ নয়”। – যাই হোক আপনাকে আমি চিপ ভাবি নাই কখোনোই। “আমরা কি একটু সামনা সামনি কথা বলতে পারি? ” – পারি, কাল জানাবো।
“আমি তোমার ফোন এর জন্য অপেক্ষায় থাকবো”
বাসায় ফোন করলো, সুমন ফোন ধরলো না, ও একটা ভয়েজ মেসেজ রেখে দিলো।
কি বলবে আরিফ সাহেব? কি বলতে পারে?
ও কাজের জায়গায় ফিরে দেখলো এলাহি কান্ড, ডান্স ফ্লোর এর মতো করা হয়েছে, ওখানে সব কলিগ রা ডান্স করছে, ১২টা বাজতে এখন ও
১৫ মিনিট বাকি, ওকে সেন্ডি হাত ধরে টেনে ডান্স ফ্লোর এ নিয়ে গেলো, বাহাঃ ওর খুব মজা লাগছে ডান্স করতে,
ও ভুলেই গিয়েছিলা স্কুল এর প্রতিটা প্রোগ্রাম এ ও নাচতো।
১২ টা, সব লাইট অফ হয়ে গেলো ২ সেকেন্ড এর জন্য, লাইট অন হলো মেনুয়েল আসলো, সবাই একসাথে উইশ করলো। কেক কাটা হলো, একে একে সবাইকে কেক খাওয়ালো, ওকে ও খাওয়ালো।
তারপর শুরু হলো,

একজন একজন করে মেয়ে মেনুয়েল এর কাছে যাচ্ছে, মেনুয়েল একটা করে গিফট এর বক্স তুলে দিচ্ছে, আর মেনুয়েল এর ঠোট এ একটা করে কিস করছে, আবার উইশ করছে, আর ছেলেরা হেন্ডশেক করছে।
নিশির পালা এলো, ও গিফট এর প্যাকেট মেনুয়েল হাত থেকে নেওয়ার সময় মেনুয়েল সবার মতো ওকে ও কিস করতে গেলো, ও গিফট এর প্যাকেট নিয়েই এক ঝটকায় সরে গেলো। মেনুয়েল এর দিকে তাকাতেই ভয় লাগছে।
ও সেন্ডি কে আগেই বলে রেখেছিল সাবওয়ে স্টেশন অব্দি ওরা একসাথে যাবে। সেন্ডি ওকে বললো “তুমি কাজ টা ঠিক করো নাই” – কোন কাজ টা?
” তুমি দেখো নাই? যখন মেনুয়েল তোমার দিকে তার মুখ বাড়িয়ে দিয়েছিলো, তুমি ঘুরে একটা দৌড় দিলা, অপমান এ মেনুয়েল কেমন লাল হয়ে গিয়েছিলো”, – আমি মেনুয়েল কে আমার ঠোট এ কিস করতে দিবো!!
আমাদের মদ্ধে এইগুলি নেই। “তুমি গাল এর সাথে গাল লাগিয়ে ও উইশ করতে পারতে, মেনুয়েল খুব অপমানিত হয়েছে, ওর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, আর ওখানে ও সবাই এটা নিয়ে কথা বলছিলো”।

চলবে…