নিশির প্রবাস (পর্ব-১)

Photo of author

By Asma Ahmed

নিশি ক্লাস নাইন এ উঠলো। গতকাল স্কুল এ নিশির বার্ষিক খেলা প্রতিযোগীতা ছিলো। তাই আজ স্কুল বন্ধ। দুপুরে নিশি শুয়ে আছে, গতোকাল সারাদিন রোদে থাকার কারনে একটু জর জর লাগছিল। নিশির মা এসে নিশি কে বল্লো মা একটু উঠো তো, আমাদের ওই বাসায় যে নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে উনারা আসছে। নিশি বুজতে পারছে না নিশি কে এইজন্য উঠতে হবে কেনো। উনারা আসলেন, একটা ভদ্রমহিলা (ছেলের মা) আর একটা ২৮/২৯ বছর এর ছেলে। আম্মা খুব সমাদার করলেন। ছেলে টা যাওয়ার সময় জোর করে নিশির হাতে দুটা ৫০০ টাকার নোট দিয়ে গেলো।

আম্মা আর দাদুর কথায় নিশি বুঝতে পারলো ছেলাটা আমেরিকা থেকে এসেছে, বিয়ে করতে, এবং পাত্রী খুজছিলো। যেহেতু ছেলেটার ফ্যমিলি আগেই নিশি কে দেখেছিলো, আজ ছেলে দেখে গেলো এবং নিশিকে ছেলের পছন্দ হয়েছে। বিয়ে করে কিছুদিনের মধ্যেই বউ নিয়ে যাবে।

নিশি সুন্দরি, ক্লাস সেভেন থেকে ওর বিয়ের প্রস্তাব আসা শুরু হয়েছে, আর অন্যান্য ছেলেদের জালাতন তো আছেই। সেটা ও নিশির ফ্যামিলির অজানা নয়, কারন নিশি সবার ছোট, বড় দুই ভাই, ভাইয়াদের কাছে কিভাবে যেন এই খবর গুলি চলে আসতো। এক সপ্তাহের মধ্যে মোটামুটি ধুমধাম করে নিশির বিয়ে হয়ে গেলো সেই আমেরিকা বাসি ছেলের সাথে। বিয়ের ১০ দিন পর নিশির বর চলে ও গেলেন আমেরিকা। আমেরিকা যেয়ে উনি কাগজ পত্র ঠিক করে নিশিকে নিয়ে যাবে। এর মাঝে চিঠি আদান প্রদান হয়েছে কয়েক বার। যেহেতু কাছাকাছি শশুর বাড়ি, মায়ের বাড়ি, স্কুল, করে করে নিশির বিয়ের ৭/৮মাস হয়ে গেলো। তিন মাস পর নিশির টিকেট সহ চিঠি এলো। নিশির বয়স তখন ১৫ হয়েছে। চিঠিতে একটা এড্রেস দেওয়া ছিলো। যেহেতু নিশির প্রথম বিদেশ যাত্রা, ওই মহিলা ও সেইদিনই যাবে, নিশির কোন অসুবিধা হবে না। একদিন সবাইকে ছেড়ে নিশি পাড়ি জমালো আমেরিকা।

নিশির বর নিশিকে নিয়ে গেলো এয়ারপোর্ট থেকে। ঢাকা ফোন করা হলো নিশি এসে পৌচেছে এই খবর টা দেওয়ার জন্য। নিশি ওর মায়ের গলা পেয়ে খুব কান্নাকাটি শুরু করে দিলো। নিশির বর খুব বিরক্ত হয়ে বল্লো, কি আশ্চর্য এটা লং ডিস্টেন্স কল, এতক্ষণ কথা বলার কি দরকার! তুমি আসছো এই খবর টা দেওয়ার জন্যই ফোন করা।

সারাদিন নিশি একা একা বাসায় থাকে, রান্না করে। ওর বর সকাল ৮ টায় কাজে যায়, রাত ৮ টায় কাজ থেকে আসে, খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে পরে। এর মাঝে প্রায় ৮ দিন হয়ে গেছে।

নিশি খুবি আদরে বড় হওয়া মেয়ে, বিয়ের পর যে ৭ মাস দেশে ছিলো, কিছু রান্না শিখেছে, আর বর এর কথা মতো স্পকেন ইংলিশ কোর্স করেছে। সেদিন ওর বর ওকে বল্লো দেখো এটা এমন একটা দেশ, একার রোজগার এ এখানে কিছুই হয় না, তোমাকে ও কাজ করতে হবে। এখানে কেউ কাজ ছাড়া বসে বসে খায় না। নিশির মাথায় কিছু ঢুকছিল না “ও কি কাজ করবে”। ও জিজ্ঞেস করলো আমি কি কাজ করবো? ওর বর উত্তর দিলো এখানে সবাই কাজ করে, কাজের অভাব নেই, তুমি বের হবা, কাছাকাছি দোকান, শপিং মল গুলি তে জিজ্ঞেস করবা, I am looking for a job, চেস্টা করতে হবে তো, তবেই না পারবা।

শুরু হলো নিশির জিবনের নতুন অধ্যয়…

চলবে…