মেঘলা আকাশ

Photo of author

By Alam M

টুক করে একটা নোটিফিকেশনের ঘন্টি বাজলো। ওপেন করতেই দেখি মেঘলা আকাশ আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চায়। বাহ, কি কাব্যিক নাম। ভাবার জন্যে সময় নিলাম না। এক্সেপ্ট করলাম।

কিছুক্ষণ পরেই দেখি ইনবক্সের ঘন্টি বাজলো।

–কেমন আছো?

ভাবতে লাগলাম, আমিই সবাইকে তুমি করে সম্বোধন করে শুরু করি। এ তো দেখি আমারই দলে। মন্দ লাগলো না। উত্তর দিলাম,

–হ্যাঁ, ভালো আছি। তুমি?

–আলহামদুলিল্লাহ্‌, ভালো।

–কি নাম তোমার? মেঘলা আকাশ তো কারো নাম হতে পারে কি?

–হুম, আমার নাম আঁখি।

–বেশ তো।

অনেকক্ষণ ধরে মেসেজ আমার শেষ মেসেজ “বেশ তো” আর সিন হচ্ছে না। কিছুক্ষণ পরপর ইনবক্স চেক করি। নাহ, সিন হচ্ছে না। আমি ভুলেই গেলাম। এমনটা হবে তা আগেই কিছুটা আন্দাজ করেছিলাম। হয়তো বা কেউ আমার সাথে মজা করতেই এমনটা করেছে।

দুইদিন পর। আমার ফোন সাইলেন্ট করা। কিন্তু নোটিফিকেশন এলইডি জ্বলা নেভা করছে। মেসেঞ্জার ওপেন করে দেখি, মেঘলা আকাশের মেসেজ দেখা যাচ্ছে। আমি সিন করবো কি করবো না ভাবতে লাগলাম। মেসেজ ওপেন না করেও কিছুটা মেসেজ দেখা যায়। অনেকক্ষণ পর ওপেন করলাম। মেঘলা আকাশের মেসেজ,

–সরি সেদিন আমার ডাটা শেষ হয়ে গেছিলো। সরি, সরি, সরি! তোমার সাথে কথা বলতে চাই। তোমার নাম্বার দাও।

আমি উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইলাম। ভাবতে লাগলাম, মেসেঞ্জারেও তো কল দিয়ে কথা বলতে পারে। তবে আমার নাম্বারে ডিরেক্ট কল করে কথা বলার কি আছে? যেখানে মেসেঞ্জারে ফ্রিতে কথা বলা যায়! আমি মেঘলা আকাশের মেসেজ ইগনোর করে রাখলাম। যাতে করে আমাকে মেসেজ সিন করতে না হয়।

এরপর বেশ কিছুদিন পেরিয়ে গেছে। আমি ভুলেই গেছিলাম। কি মনে করে মনে একটু লাড্ডুর স্বাদ পেলাম। ইগনোরড মেসেজ থেকে খুঁজে বের করে শুধুমাত্র একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিয়ে রাখলাম। এবার সাথে সাথেই হাজির।

–এ ক’দিন তুমি কোথায় ছিলো। আমি তোমার নাম্বার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি দাওনি। আমি চাইনি তুমি হারিয়ে যাও। তোমার নাম্বার দাও, প্লিজ প্লিজ প্লিজ…

এবার আমার মনে হলো, তবে খেলাটা একটু না হয় খেলি। আমি আমার সাবসিডিয়ারি নাম্বারটা দিলাম। মেসেজ সিন হলো, কিন্তু কোনো উত্তর নেই। আমার মোবাইলেও কোনো রিং নেই। অপেক্ষা করছি…

পরের দিন সকালে মেসেঞ্জারে দেখি নতুন কোনো মেসেজ নেই। আমি টুক করে আমার নাম্বার মুছে দিলাম, অর্থাৎ Unsent করে দিলাম।

এরপর বেশ কয়েকদিন মেঘলা আকাশের কোনো খবর নেই। হঠাত একদিন মেসেজ,—

–তোমার নাম্বার মুছে দিয়েছো কেনো?

আমি বললাম,

–মুছে দিয়েছি। কেননা, তোমার তো সেভ করে রাখার কথা। অন্তত ডায়াল করে ডায়াল লিস্টে রাখার কথা। কিন্তু তুমি তা করোনি। তোমার নাম্বারটা আমাকে দিয়ে রাখো। আমিই সময় সুযোগ মতো কল দেবো। তাছাড়া তুমি তো ইচ্ছে করলে আমারা মেসেঞ্জারেই কথা বলতে পারি।

–মেসেঞ্জারে কথা বলতে আমার ভাল্লাগে না। কথা কেটে কেটে যায়। তুমি তোমার নাম্বার দাও।

–নাহ, তোমার নাম্বার দাও।

–আমার নাম্বারের শেষে ২২৩ আছে। তোমার নাম্বার দাও।

–এটা কেমন কথা হলো। বললাম তো, আমি কল দেবো। তুমি পুরো নাম্বার দাও।

–নাহ, তোমার নাম্বার দাও। এবার আমি সেভ করে নেবো। দাও, প্লিজ

–আচ্ছা, আমি দিচ্ছি। কিন্তু যখন তখন কল দেয়া যাবেনা। আগে জেনে নেবে যে আমি সময় দিতে পারবো কিনা। আমাকে কাজে থাকতে হয়। সংসারে সময় দিতে হয়। মনে থাকবে?

–হুম, দাও।

–015a**222pq

–Thank you.

–My pleasure!

–এখন রাখছি। পরে কথা হবে। বাই

–bye, take care.

এরপর আর কোনো খবর নেই। অচেনা নাম্বার থেকেও কোনো কল আসেনি। বেশ কিছুদিন পর,

–hi

–হুম, বলো মেঘলা আকাশ!

–আমার তো একটা নাম আছে, বলিনি?

–হুম, বলেছো। তবে মেঘলা আকাশ নামটাই বেশ আছে।

–জানো, কয়েকদিন ধরে আমার মনটা ভালো নেই।

–কেনো? কি হয়েছে? কথা বলবে বলে এতো করে নাম্বার চাইলে, অথচ কল দেবার কোনো খবর নাই।

–মোবাইলে টাকা ছিলোনা। তাই কল দেয়া হয়নি।

–রাখো, আমি এখনই কল দিচ্ছি।

আমি মেসেঞ্জার থেকে বিদেয় নিয়ে কল দিলাম। দেখি সত্যি সত্যিই একটা মেয়ের কন্ঠ। তাহলে নাম্বারটা অন্তত ভুল দেয়নি।

–হ্যালো, আমি রুমি বলছি। চিনতে পেরেছো।

–হুম, (একটু আহলাদী সুরে) তুমি এতো ভালো কেন? তোমাকে কিন্তু দাড়িতে হেব্বি লাগে।

–ধুর, কি যে বলো না! আমার বয়েস এখন ৫৫ প্লাস। আর তুমি দেখছো, হেব্বি! হাহাহা

–আসলেই তুমি… নাহ, থাক, বলবো না।

–কেনো? বললে সমস্যা কি?

–একটু লজ্জা লাগছে।

–লজ্জা লাগলে আর বলতে হবেনা। এখন আমারও লজ্জা লাগছে।

–জানো, আমার না মনটা ভালো নেই। মনটা একটু ভালো করে দাও না গো…

–কেনো? কি হইছে?

–গতকাল অনলাইনে একটা জামা দেখেছিলাম। দাম বেশি না। কি যে জোস কালার। আমি তো জামাটার জন্য ফিদা হয়ে গেছি।

–দাম কি খুব বেশি? তোমার বাবাকে বলো। নিশ্চয়ই কিনে দেবেন।

–আরে ধুর, তোমার শ্বশুর আব্বা অনেক কিপ্টা। জামার দাম মাত্র ৩৬০০ টাকা। এটা কি খুব বেশি দাম? তাও কিনে দিতে চায় না।

–আমার শ্বশুর আব্বা, মানে?

–তুমি তো দেখছি সত্যি সত্যি টিউব লাইট। আমার আব্বা মানে তোমার শ্বশুর আব্বা তো…

আমি মনে মনে ভাবছি যে মেঘলা আকাশ তার আকাশের মেঘ কাটাতে কিছু খসাতে চাইছে। হুট করে তো আর কিছু বলা যায়না। তাই আমি কথায় সায় দিলাম।

–হাহাহা, সত্যিই আমি টিউব লাইট। এক কাজ করতে পারো। তুমি ঐ জামাটার একটা স্ক্রিনসট দাও তো দেখি।

বলতে বলতেই দেখি আমার ইনবক্সে একটা লাল জামার স্ক্রিনসট। আমি দেখে বললাম,

–বাহ, বেশ সুন্দর তো। রঙটা নিশ্চয়ই তোমাকে অনেক মানাবে, যদিও তোমাকে আমি দেখিনি।

–আমাকে দেখতে চাও? দেখলে পাগল হয়ে যাবে।

–তাই নাকি?

–আমি যেমন দেখতে, তেমন সেক্সি লুক। তুমি চোখ ফেরাতে পারবে না।

আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম যে জামাটার টাকা হাসিল করার জন্যে মনে হয় ভিডিও সেক্সও করবে। আমিও খেলতে লাগলা। দেখি কতোদূর যায়। আমি আমার সেফ জোন মাথায় রেখে আলাপ চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম।

–বলো কি? এই বুড়োটালে লোভ দেখাচ্ছো?

–কে বলেছে তুমি বুড়ো? তোমাকে দেখে তো আমারই…

–আমারই কি?

–তুমি বুঝোনা?

–হাহাহা… আমি তো টিউব লাইট

–আরে নাহ… তুমি এখনও…

–এখনও কি?

–এখন বলবো না। রাতে কথা হলে বলবো। আজ রাতে কথা বলতে পারবে? আমি একা থাকবো। ছোট বোনটা ভার্সিটির হলে চলে যাবে।

–তুমি তো জানো যে আমার বউ আছে। আমি কিভাবে সময় ম্যানেজ করবো?

–তোমার বউকে বেড়াতে পাঠিয়ে দাও। আমার লাল জামাটা না পেলে কিন্তু রাতের মেঘলা আকাশকে পাবেনা। আমি তোমাকে পাগল করে দিতে চাই। তুমি কি পাগল হতে চাওনা?

এবার আমি আমার মনে মনে নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কথা ভাবতে থাকলাম। উত্তর বললাম,

–আচ্ছা, আমি কি তোমাকে অনলাইন থেকে তোমার ঠিকানায় অর্ডার দিতে পারি? তোমার ঠিকানাটা দাও। আমি ওদেরকে পে করে দেবো।

–তোমাকে অর্ডার দিতে হবেনা। তুমি আমাকে টাকাটা দিয়ে দিলে আমিই অর্ডার দিয়ে আনাতে পারবো।

–টাকাটা কিভাবে দেবো? তোমার ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার দাও।

–ব্যাংকে পাঠালে বেশি ঝামেলা হবে। আমাকে আবার ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে হবে।

–তাহলে কি করা যায়?

–তুমি আমাকে বিকাশ করে দাও। খরচ সহ দিও।

–আমার যে বিকাশ নাই।

–বিকাশ না থাকলে কি বিকাশ করা যায়না বুদ্ধু

–না থাকলে কি করবো? আমার এনআইডি হারিয়ে গেছে। সেটা নতুন করে তুলতে হবে। ততোক্ষন তো আমার পক্ষে বিকাশ একাউন্ট করা সম্ভব নয়।

–তুমি আসলেই বুদ্ধু। কোনো বিকাশের দোকান থেকোও তো পাঠানো যায়।

–আরে তাই তো। আমি সত্যিই বুদ্ধু টিউবলাইট…

–আর বলতে হবে না। এই নাম্বারেই আমার বিকাশ করা আছে। তুমি কখন দেবে? আমি আজকেই অর্ডার দিতে চাই। আমি আজকেই তোমার সামনে জামাটা পড়ে রাতটা উদযাপন করতে চাই। আমার এখনই শরীর ঝিম ধরেছে। তোমাকে পেলে যে কি করবো… আজকে বিকেলেই বিকাশ করবে কিন্তু।

–আচ্ছা করবো তো। অফিস থেকে ফেরার পথে দিয়ে তোমাকে কল দেবো। এখন রাখি?

–আচ্ছা… রাতটা মিস করতে চাইনা জান! উম্মম্মমাহহহহহ…

–bye, take care, sweetheart!

লাইনটা রেখে দেখি কথা হয়েছে প্রায় আধা ঘন্টা। মোবাইলের ক্যালকুলেটরে হিসেব করে দেখলাম কল বাবদ খরচ হয়েছে ২৪ টাকা। দুইটা বেনসন কম খেয়ে এই এমাউন্ট এডজাস্ট করতে হবে। হাহাহা

আমি এখন পাংখা। ওরে মেঘলা, ওরে আকাশ… আমি টিউবলাইটও না, বুদ্ধুও না। জামাটা সত্যি আমারও অনেক পছন্দ হয়েছে। আমি মোবাইল বের করে গাড়িতে বসেই অর্ডার দিলাম আমার বাসার ঠিকানায়। আমার কিশোরী বউটার নিশ্চয়ই পছন্দ হবে।

মোবাইল থেকে সাবসিডিয়ারী SIM কার্ড খুলে ফেললাম। মেসেঞ্জার থেকে মেঘলা আকাশকে ইগনোর করে দিলাম।

তিনদিন পর-
আমি অফিসে। দুপুর তিনটায় বউয়ের ফোন। বললো, তোমার নামে একটা পার্সেল এসেছে। টাকা লাগবে। কি করবো? আমি বললাম, ঘরের খরচের টাকা থেকে তুমি ৩৬০০ টাকা দিয়ে পার্সেলটা রেখে দাও। আমি বাসায় এসে তোমাকে দিয়ে দেবো।

বাসায় ফিরে মেসেঞ্জারে মেঘলা আকাশ সার্চ দিয়ে খুঁজতে লাগলাম। অনেকগুলো মেঘলা আকাশ। কিন্তু সেই মেঘলা আকাশের কোনো খবর নেই। টাকাটা না পেয়ে আহত হয়েছে। রাগে দুঃখে আমাকে ব্লক করেছে। আমি খুশি। আমার কিশোরী বউটাও খুশি। রাতে লাল টকটকে জামায় বউটা দেখতে কেমন লাগবে সেই ভাবনায়….