বয়সে নবীন বা অধঃস্তন কাউকে নাম ধরে ডাকলে খুশি হয়, সে নিজেকে আপনার ভাবে কারণ মানুষের কাছে প্রিয় তার নাম; নাম দিয়ে সে প্রকাশিত। যে কাউকে ভুল নাম ধরে সম্বোধন করলে সে রাগ করে। উর্ধ্বতন কাউকেও যথাযথ সম্মানসহ নাম ধরে সম্বোধন করলে তিনি প্রকাশিত হওয়ার আনন্দে খুশী-ই হন। পৃথিবীর সকল সৃষ্টির মাঝেই প্রকাশিত হওয়ার ইচ্ছে আছে, আকুলতা আছে।
যার বোধগম্য মৌখিক ভাষা নেই, সেই প্রকৃতিরও নিজেকে প্রকাশের ইচ্ছে আছে, এবং প্রকাশক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় বিভিন্ন উপায়ে। নদীর কথা নেই, কলকল তান আছে। মেঘের কথা নেই, গুরুগম্ভীর পিলে চমকানো গর্জন আছে। ঝরা পাতার ভাষা নেই, মচমচে শব্দ আছে। ফুলের আছে গন্ধ, মশার আছে ভনভন। সর্বত্রই নিজের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার প্রবণতা, “আমি আছি, আমি আছি”। কোথাও বৃষ্টি হলে কাছাকাছি সেই বৃষ্টির ঘ্রাণ পৌঁছে যায়, কারো বাড়ী সুস্বাদু ব্যঞ্জন তৈরী হলে তার ঘ্রাণ আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এর মানে হল, প্রকৃতিতে থাকা প্রতিটি বস্তু-ই তার উপস্থিতি জানান দেয়।
মানুষের মাঝেও নিজেকে প্রকাশের আকুলতা আছে তুমুল। সবাই চায় নিজের সেরাটা অন্যে দেখুক, অন্যে তার প্রশংসা করুক। যে মেয়ে ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছে সে অপরূপা, সে নিজেকে আরো গুছিয়ে রাখে, যে মেয়ের চুল ঘনকালো, সে তার চুলকে আরো যত্ন নিয়ে খোঁপা বেঁধে রাখে। কেউ কথায়, কেউ লেখায় নিজেকে প্রকাশ করে। কেউ ঝগড়া করে, কেউ গীবত করে, কেউ নিজেকে মৌন রাখে। এসবই তার নিজস্ব প্রকাশের ধরণ। কেউ চাইলেই অন্যের মতন হয় না, স্বীয় বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল প্রত্যেকে।
পৃথিবীতে মানুষ হল সেরা প্রাণী, কারণ তার তথ্য আদান-প্রদান বিস্ময়কর ক্ষমতা। একমাত্র জড়বুদ্ধি সম্পন্ন ছাড়া বাদ বাকী সব মানুষের মেধা এক, তবে সেই মেধাকে কাজে লাগানোর ইচ্ছে সবার এক নয়। মানুষের নাগালের ভিতরে সে যা ইচ্ছে করবে তাই করতে পারে। আন্তরিক ইচ্ছে সফল হবার স্তম্ভ। সেই ইচ্ছেটা সবার এক থাকে না, অনেক ইচ্ছে মরে যায় অনেক কারণে।
পৃথিবীর ইতিহাসে সফল তাঁরাই যারা সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্ম নেননি। যত বাঁধা তত তা ডিঙানোর জেদ, ইচ্ছে থাকে। যার সবকিছু আছে, প্রকাশের রাস্তা তার করায়ত্তে, নতুন করে প্রকাশ হওয়ার আর কিছু নেই তার। যার প্রকাশে, নিজের অস্তিত্ব প্রকাশ বিপন্ন, সেই তা কাটিয়ে উঠার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালায়।
জীবনের পথ কণ্টকাকীর্ণ বেশীর ভাগ মানুষের জন্য, এই বেশীর ভাগ মানুষের স্বার্থত্যাগের ফলে, এই দল থেকেই বেরিয়ে আসে সফল মানুষেরা। প্রকাশিত হয় নতুন আলো ছড়িয়ে।
যদি মানুষ নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে না পারত, তবে বুক ফেটে অঘটন ঘটত। অধিক শোকে, বা সুখে মানুষ আকস্মিক তার প্রকাশ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন সে বোবা হয়ে যায়, এমনকি জীবন নাশের আশঙ্কাও থাকে।
তাই অকপটে প্রথমে নিজের কথা নিজেকেই না হয় বলুন, নিজেকে প্রকাশ করুন আর প্রানখুলে হাসুন। পৃথিবীটা ততটা দুঃখের নয় যতটা আমরা ভাবি, ততটা দুঃসহ বোঝা নয় যা আমরা নিজেরাই তৈরী করি।
পৃথিবীটা আসলেই খুব সুন্দর, শুধু সুন্দর রাখতে জানতে হয়।
~রুবি বিনতে মনোয়ার