পড়ন্ত বিকেল (পর্ব-১)

Photo of author

By Sabiha Khan

নদী আজ ভারি ব‍্যস্ত। কানাডা থেকে মেয়ে, মেয়ের জামাই আর একবছর বয়সী নাতনি এসেছে। পাঁচবছর পর মেয়েটাকে দেখছে নদী। বিয়ের পর সেই যে কানাডা গেলো তারপর এই প্রথম তার মেয়ে বাংলাদেশে আসলো। নাতনিটাকে দেখে নদীর মনটা ভরে গেলো। কি সুন্দরই না হয়েছে মেয়েটা। মায়ের গায়ের রংটাই পেয়েছে। অবশ‍্য নদী নিজেও খুব সুন্দর। এখনো নদীকে দেখলে বুঝাই যায় না যে সে শাশুড়ি হয়েছে এবং নান্নী দিদাও হয়েছে। নদীর মেয়ের জামাই অত্যন্ত সুদর্শন। সেইসাথে লেখাপড়া আর পরিবারের সুন্দর শিক্ষা, সব মিলিয়ে অসাধারণ একটি মেয়ের জামাই পেয়েছে নদী।

খাবার টেবিলে খেতে বসেই মেয়ে চিৎকার করে বললো, মা তুমি এওো কিছু রান্না করেছো। আরে আমার প্রিয় খাবার, গরুর মাংসের কালা ভুনাও আছে দেখছি। ইস্ কতোদিন পর খাচ্ছি। মেয়ের জামাই ইমন বললো, মা আপনার মেয়ে আমাকে কিছুই রান্না করে খাওয়ায় না। অথচ আপনি পুরো টেবিলটাই খাবার দিয়ে ভরে ফেলেছেন। নদী একটু লজ্জিত হয়ে বললো, আমিও সংসারজীবনের প্রথমটায় কিছুই পারতাম না বাবা, কিন্তু একসময় নিজে থেকেই শিখতে শুরু করলাম। মেয়ে মিতালি বললো, দেখ মা, কিভাবে রান্না শিখবো? প্রথমেই ডিগ্রীটা শেষ করলাম এবং তারপরেই মেয়ে আসলো সংসারে। ইমন তাড়াতাড়ি বললো, আরে আরে আমি কি মার সাথে একটু মজাও করতে পারবো না তোমাকে নিয়ে।

মিতালি বললো, একমাস থাকবো দেশে, সব রান্না শিখে তবেই প্লেনে উঠবো। ইমন একটু মুচকি হেসে খেতে খেতে বললো, যাক বাবা.. বাঁচলাম। এখন থেকে আর দোকান থেকে খাবার কিনে আনতে হবে না। নদী বললো, তোমাকে আর একটু মাংস দেই ইমন। ইমন বললো, মা আমাকে বরং রুইমাছের দোপেঁয়াজাটা দিন। অনেকদিন পর মাছ খাচ্ছি তাও আবার দেশি মাছ। নদী বললো, কেন? শুনেছি তোমাদের ওখানে সবই পাওয়া যায়। ইমন বললো, সব পাওয়া যায় কিন্তু দেশি মাছ একদম খাওয়াই হয় না। রেষ্টুরেন্টে আমরা মাঝে মাঝেই খেয়ে আসি কিন্তু আপনার হাতের রান্নার স্বাদটাই আলাদা। নদী হেসে বললো, তোমরা কি কালই মিরপুরে যাবে? মিতালি বললো, মা, আমরা একটু পরেই যাচ্ছি মিরপুরে। মিরপুরে মিতালির শশুরবাড়ি। মিতালির বাবা নাতনিকে কোলে নিয়ে বারান্দায় ছিলো। বারান্দা থেকেই বললো, তাই ভালো। আগে বিয়াইন সাহেবার সাথে থেকে এসো।

খাবার পর মিতালি একটা সুটকেস দেখিয়ে বললো, মা এই সুটকেসটা থাকলো। আমি দুদিন পরেই আসবো। সবার গিফট আছে এই সুটকেসে। তোমাকে নিয়ে সবার সাথে দেখা করতে যাবো। নদী বললো, এতো গিফটের কি প্রয়োজন ছিলো? তোর শশুরবাড়ির জন‍্য..

মিতালি নদীকে থামিয়ে দিয়ে বললো, মা, আমি তোমার মেয়ে। অন্তত এই জিনিসটা আমি ভালোভাবেই জানি। ও বাড়ির সবার জন‍্যই আমি আর ইমন মিলে গিফট কিনেছি। আমাদের নিজেদের কাপড় খুব কম এনেছি। কারণ দেশ থেকে ইচ্ছেমতো কাপড় কিনে নিয়ে যাবো। মিতালি আরো বললো, মা, তুমি আমার মেয়ের জন‍্য একটা সুয়েটার বুনে দিবে কিন্তু। নদী যেন একটু চমকে গিয়ে বললো, কি যে বলিস না, ওসব দেশে কতো সুন্দর সুয়েটার পাওয়া যায়। কি নরম, তেমনি সুন্দর ডিজাইন। মিতালি নদীর হাতদুটো ধরে বললো, প্লিজ মা, আমি চাই আমার মেয়ে তার নান্নীর হাতের সুয়েটার পড়বে। ছোটবেলাতে আমি আর ভাইয়া তোমার বুনে দেয়া সুয়েটার পড়েই বড় হয়েছি। কি সুন্দর ডিজাইন তুমি জানো। নদী একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে বললো, ওসব দিনতো কবেই চলে গিয়েছে রে মা, আর তোদের কথা আলাদা। তাছাড়া এখন এই বয়সে ভূলেও গেছি রে। মিতালি ঠোঁট ফুলিয়ে বললো, মা তুমি সুয়েটার না বানালে আমিও মিরপুর থেকে আসবো না। ওখান থেকেই চলে যাবো। আমি জানি, কেন তুমি সুয়েটার না বানানোর কথা বলছো।

কারণ ভাবী…

সাবিহা খান
চলবে…