- বাদামে বাদামে বাদামময়।
- কা আ আ আ চা বাদাম।
- আনোয়ার হাকিম।
ডিজিটাল যুগে আজকাল কত কথাই তো শুনিতেছি। কত কিছুই না দেখিতেছি, জানিতেছি। ফেসবুক,ম্যাসেঞ্জার,হোয়াটসঅ্যাপ, ট্যুইটার, ইন্সটাগ্রাম,ইউটিউব এখন মুড়ি মুড়কির মত সহজলভ্য হইয়া গিয়াছে। এই গুলিই এখন ডিজিটাল প্লাটফর্ম।
আমাদের সময়, তারও আগে, প্রেমিক প্রেমিকাদের শত কথার ফুলঝুড়ির মাঝে বাদাম বিরাট একটা উদ্দীপকের ভূমিকা রাখিত। যাহাদের এই ভাগ্য হয়নাই তাহারাও অতি প্রিয় বন্ধু, সুজন লইয়া পার্কে বা নদীর পাড়ে বসিয়া বাদাম চিবাইতে চিবাইতে বেশুমার আনন্দ উপভোগ করিত। এই বাদাম বলিতে ভাজা বাদামকেই বুঝাইতেছি। ছোট বেলায় বাদাম টানা খাইয়াছি। জিহ্বায় পানি চলিয়া আসিত। সিঙ্গারার মধ্যেও বাদাম পাইয়াছি। প্রকারভেদে কিছু বাদামের সাথে নামে ও চিত্রে পরিচিত হইলেও ইহারা তেমন জনপ্রিয় হইয়া উঠিতে পারেনাই। সম্প্রতি ডাঃ জাহাঙ্গীর কবির ডায়েট চার্টে ইহাকে অতিশয় গুরুত্বযোগ করায় আমরা স্থুলকায়রা ইহাকে আপন করিয়া লইবার কোশেশ করিতেছি। পেশাজীবি হিসাবে বাদাম বিক্রেতাগণ স্ট্যাটাসের দিক দিয়া বরাবরই সমীহ পাইয়া আসিয়াছেন। বালিকা আর রমনীকূল ইহাদেরকে পেলব কন্ঠে বিভিন্ন সম্পর্কে সম্বর্ধিত করিয়া থাকে। আজো ইহার রকম ফের হয় নাই। পৃথিবীতে বাদাম একবারই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মর্যাদা পাইয়াছিল। তবে সেটা কাঁচা বাদাম। সবার মুখে মুখে তখন বাদাম পেশা কুলীন মর্যাদায় উচ্চারিত হইত। আমি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের কথাই বলিতে চাহিতেছি। তিনি হোয়াইট হাউসের জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে নির্বাচিত বলিয়া ঘোষিত হইলে পাপ্পারাজ্জীদের বদৌলতে বিশ্ববাসী প্রথম জানিতে পারে যে তাঁহার পারিবারিক ব্যবসা এই বাদাম। এরপর বাদাম আর বিশেষ সুবিধা করিতে পারেনাই। তবে একান্ত আলাপনে, বিশেষ মুহুর্তে ইহা তাহার আগের সমীহ জাগানো র্যাংকিং ধরিয়া রাখিয়াছে। আমি বাদাম বলিতে চীনেবাদামকেই বুঝাইতেছি। বাদামের সহিত চীনের কি সম্পর্ক তাহা গবেষণার বিষয়। পাবলিক গবেষণা করিয়া খাদ্য নির্বাচন করেনা।
অতি সম্প্রতি বাদাম আবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন খেতাব পাইয়াছে। তাও মুখ রোচক, কুড়মুড়ে ভাজা বাদাম না। এক্কেবারে উদ্ভিদজাত ফ্রেশ কাঁ আ আ আ আ চা বাদাম। ভারতের বীরভূম জেলার ভুবন বাদ্যকার নামীয় এক প্রৌঢ় জীবিকার তাগিদে পুরানো মোটর সাইকেলে করিয়া ইহা ফেরি করিয়া বেড়ায়। তিনি সিটি গোল্ড বা চেইন বা মোবাইলের ভাঙ্গা বডির বিনিময়ে কাঁ আ আ চা বাদাম বিনিময়ের আর্থিক সূত্র গানের কলিতে সুর তুলিয়া গ্রামান্তরে ঘুরিয়া বেড়াইতেছেন। ইহাতে দিন শেষে তাহার দুই-আড়াই শত টাকার সংস্থান হইয়া থাকে। ইহা তিনি বহুদিন যাবতই করিয়া আসিতেছেন। কিন্তু প্রচারের পাদ প্রদীপে আসেন নাই। সম্প্রতি কোন এক টিক টকার বা ইউটিউবার ইহাতে মোহিত হইয়া ইহাকে ক্যামেরাবন্দী করিয়া ছড়াইয়া দিয়াছে।মুহুর্তেই ইহা ভাইরাল হইয়াছে। এখন ইহাকে নিয়া ছেলে মেয়েরা অসংখ্য টিক টক করিতেছে।বাংলাদেশ হইতেও টিক টকাররা ছুটিয়া গিয়াছে বীরভূম জেলায় ভুবন বাদ্যকারের গ্রামে। তাহার ইন্টারভিউ লইতেছে। ফেসবুক খুলিলেই তাহাকে ও টিকটকারদেরকে একই গান বিভিন্ন ভঙ্গীতে বিভিন্ন অনুষঙ্গ যোগে নাইতে, গাইতে দেখা যাইতেছে। ইহাতে ভুবন বাদ্যকারের ভাগ্যের চাকা স্থায়ীভাবে কতটুকু ঘুড়িবে বলিতে পারিনা। রাণু মন্ডলকে লইয়া এইরুপ একবার মাতামাতি হইয়াছিল। স্টেশনে রাত্রি যাপনকারী রানু মন্ডলের উত্থান বোম্বের রেকর্ডিং স্টুডিও পর্যন্ত হইয়াছিল। কিন্তু মোহ ভঙ্গ হইবার পর ইহার ব্যাক টু প্যাভিলিয়ন হইয়াছিল সেই রেল স্টেশনেই। তবে ভুবন বাদ্যকার এই ক্ষেত্রে আলাদা বলিয়াই মনে হইল।বাংলাদেশের এক তরুণীর প্রলুব্ধকর কথায় তিনি জিহ্বায় পানি না আনিয়া বলিয়াছেন স্ত্রী,পুত্র,কন্যা লইয়া তিনি এইভাবেই সুখে থাকিতে চাহেন।
আজ দুই বাংলা বাদামে বাদামময় হইয়া গিয়াছে।তাও আবার কাঁ আ আ আ চা বাদামে। কয়েকদিনের মধ্যে হয়ত ইহার ব্যাপ্তি আরো বাড়িতে পারে। আরো কয়েকদিন পর হয়ত নতুন কোন প্রোডাক্ট আসিয়া ইহার জায়গা দখল করিয়া লইবে। ভুবন বাদ্যকাররা কাঁ আ আ চা বাদাম বিক্রী করিয়াই জীবনাতিপাত করিতে থাকিবে। ছেলেবেলা হইতে দেখিয়া আসিতেছি এক প্রকার লোকে বান্দর নাচাইয়া ক্যানভাস ইত্যাদি করিয়া জীবিকার পথ করিয়া নিয়াছে। বান্দরের সেই অবস্থার কিন্তু উন্নতি হইতে দেখিনাই। আজ ভুবন বাদ্যকারকে নিয়া যাহারা টিক টক, ইউটিউব কনটেন্ট বানাইতেছে তাহারা কি নিছক নিজেদেরকে ভাইরাল করিবার জন্য অথবা ইউটিউব হইতে ডলার কামাইবার জন্যই ইহা করিতেছেন? আর আমরা যাহারা ইহা দেখিয়া অফুরান আনন্দ পাইতেছি তাহারা কি বান্দরের খেলা দেখিতেছি? ভুবন বাদ্যকারের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হইলে আর তাহার ভীমরতি না হইলে প্রচারের এই ঝলকানি তাহার জন্য সুখকর হইতে পারে। সেটাই কাম্য।