জমিদার বাড়ি (পর্ব-৩)

Photo of author

By Anis Ahmed Oniket

ডায়রি পড়া শেষ করে মঈনের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে ভিক্টর বলল, তোর কাছে কি মনে হয় ?
মঈন বলল, গোবিন্দ কাঁপা কাঁপা হাতে শেষ শব্দটি লিখেছে চা। তার মানে তার মৃত্যু হয়েছে চা খেয়ে ।
“ আমারও তাই মনে হয়েছে । নওশি মেয়েটা তার মৃত্যুর জন্য দায়ি। আমি ঠিক করেছি এই মৃত্যুর প্রতিশোধ আমি নেব। তোরা কি আমার সাথে কেউ যাবি?
মঈন উত্তেজিত কন্ঠে বলল, আমিও যাব।
লিপন রাজি হতেই পরের দিন সকালে ওরা রওনা দিয়ে সন্ধ্যায় পৌঁছে গেল জমিদার বাড়িতে। শর্ত পড়ে নামের তালিকায় নিজের নাম যখন লিখছিল তখন কেয়ার টেকার দ্বিতীর বারের জন্য বলল , তোমরা ফিরে যাও বাবারা।
ওরা রাজি হলোনা । হেলেনের কামরায় ব্যাগ রেখে পুরো জমিদার বাড়ি ঘুরে দেখে নিলো। বাইরে থেকে ভাত খেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল তিনজন। সারাদিনের ক্লান্ত শরীর বিছানা পেতেই চোখে ঘুম চলে এলো । কিন্তু ওরা আজ ঘুমাবে না।
রাত বারো টা বাজে। লিপন ফিস ফিস করে বলল, সাবধান , চোখ কান সব খোলা রাখ।
কিন্তু মঈন আর ভিক্টর চোখ খোলা রাখতে পারছে না । ওদের দুজনের শরীর কেমন যেন অবশ অবশ হয়ে আসছে। মঈন কিছু বলতে যাচ্ছিল ঠিক তখনই দেখতে পেল ব্যাগ হাতে এক মহিলা ভেতরে ঢুকছে । সাথে মিস্টির প্যাকেট।
মঈন বিছানা ছেড়ে নীচে দাঁড়িয়ে বলল, একি মা তুমি ?
মঈনের মা কান্না কান্না কন্ঠে বলল, তুই আমাকে না জানিয়ে এভাবে চলে আসতে পারলি ?
‘ সরি মা আমার ভুল হয়ে গেছে। তোমাকে শুধু শুধুই কস্ট দিলাম “
“ জার্নিতে আমার কোনো কস্ট হয় নি বাবা । তোরা সবাই ঠিক আছিস তো ?
ভিক্টর বলল, সবাই ঠিক আছি খালা আম্মা । আপনি এবার বিশ্রাম নিন।
লিপন বলল, তোরা একটু কথা বল আমি আসছি।
মঈনের মা বলল, তুমি কোথায় যাচ্ছ ?
“ এই একটু বাথরুমে “
আর কোনো প্রশ্নের সুযোগ না দিয়ে লিপন কেয়ার টেকারের কামরায় চলে এলো । তিনি ঘুমিয়ে আছেন। লিপন আলতো ধাক্কা দিয়ে বলল, চাচা , উঠুন ।
কেয়ার টেকার মাঝ রাতে ডাক শুনে ধড়ফড় করে উঠে বলল, কি হয়েছে বাবা ?
“ কিছু হয় নি চাচা । একটা সংবাদ নিতে এসেছি “
“ কিসের সংবাদ ? ”
“ আপনি কি রাতে দরজা খুলে বাইরে গিয়েছিলেন ? অথবা কাউকে ভেতরে আসতে দেখেছেন ? “
“ না বাবা । তোমরা ফিরে আসার পর সদর দরজা বন্ধ করেছি । আর কেউ ভেতরে ঢুকে নাই “
লিপন কোনো কথা না বলে তাড়াতাড়ি হেলেনের কামরায় এলো । এসেই দেখতে পেল মঈন কি যেন মুখে দিচ্ছে । লিপন দ্রুত দৌড়ে এসে মঈনের হাত ধরে ঝাকি দিলো ।
মঈনের মা বলল, আহা কি করলে? মিস্টিটা ফেলে দিলে। সিরাজ গঞ্জ থেকে তোমাদের জন্য স্পেশাল মিস্টী নিয়ে এসেছি। তুমি একটা খাও।
“ ওর হাত ধোয়া নেই খালা আম্মা। ঠিক আছে আমি খাচ্ছি । কিন্তু তার আগে আপনি একটা মিস্টি খান “
“ আমার ডায়াবেটিস । “
“ একটা খেলে কিছু হবে না। আর আপনি না খেলে আমরাও খাব না “
“ঠিক আছে খাচ্ছি। আগে আমি হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে আসি ।“
মঈনের মা বাথরুমে চলে যেতেই লিপন বলল , তোরা এমন নির্বোধ জানতাম না
মঈন বলল, নির্বোধ কেন বলছিস।
“ এই মহিলা তোর মা নয়, সে তোর মায়ের রুপ ধরে এসেছে । এই ছোট্ট ব্যাপার টা তোরা দুঝন ভুলে গেছিস “
মঈনের মাথাটা হঠাত চক্কর দিয়ে উঠল। সে স্পস্ট বুঝতে পারছে এই মহিলা তার মা নয়। কারন সে তার মাকে বলে এসেছে। বাসের মধ্যে তার মায়ের সাথে কথা হয়েছে।
আধা ঘন্টা হয়ে এলো মঈনের মা আর ফিরলেন না। টেবিলের ওপর মিস্টির প্যাকেট তখনো পড়ে আছে। একটা স্টেজ ওরা পার হয়েছে। তিন জন স্তব্ধ হয়ে বসে আছে । বাকি রাতে কি ঘটবে কেউ জানে না ।
ভিক্টর হঠাতই জানালার কাছে ছুটে গেল। কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে দূর থেকে। গভীর রাতে কে কাঁদে ?
মঈন বলল, তোরা কি পায়ের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিস?
লিপন বলল, হ্যা শুনতে পাচ্ছি। মনে হচ্ছে দোতলায় কে যেন হাটছে।
মঈন বলল, চল গিয়ে দেখি।
যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতেই হঠাত লোড শেডিং , চারদিকে অন্ধকার । রাত একটায় লোড শেডিং নাকি কেউ ইচ্ছে করে মেইন সুইচ বন্ধ করে দিয়েছে কে জানে । তিনজনের হাতে তিনটি টর্চ লাইট । মঈনের হাতে একটা গ্যাস লাইটার । সে শুনেছে আত্মারা আগুন কে নাকি ভয় পায়।
টর্চের আলো ফেলে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে। তিন জনের বুকের ভেতরই ভয় আর উৎকণ্ঠা । দোতলায় উঠতেই সেই কান্নার শব্দ আবার শুনতে পাচ্ছে। ওরা তিনজনই দরজার কাছে চলে এসেছে।
লিপন ফিস ফিস করে বলল, দরজায় কি টোকা দেব ?
মঈন বলল, অবশ্যই , ভেতরে ঢুকে আমাদের দেখা উচিত
লিপন দরজার দিকে হাত বাড়াতেই মেও মেও করে বড়াল ডেকে উঠল। অন্ধকারে বিড়ালের চোখ জ্বলছে।

চলবে…