জমিদার বাড়ি (পর্ব-১)

Photo of author

By Anis Ahmed Oniket

গোবিন্দ শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিল সে জমিদার বাড়িতে এক রাত থাকবে। জুয়েল কে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করিয়েছে । কিন্তু তীব্র আপত্তি জানিয়ে লিপন বলল , তোরা কি পাগল হয়েছিস? ঐ অভিশপ্ত জমিদার বাড়িতে একটা পাখি পর্যন্ত থাকেনা। ওখানে একবার রাত কাটালে জীবিত কেউ ফিরে আসে না।

গোবিন্দ বলল, আমরা জীবিত থাকব । গ্রামের মানুষের কুসংস্কার দূর করে দেব।

লিপন বলল, তোরা গ্রাম দেখতে এসেছিস, গ্রাম দেখা শেষ এবার ঢাকায় ফিরে যা।

কিন্তু গোবিন্দ ঢাকায় গেল না। আধ ফালি চাঁদের আলোয় তারা দুজন জমিদার বাড়িতে এলো । মার্বেল বাধানো সিড়ি মাড়িয়ে দুরু দুরু বুকে সদর দরজার কাছে এসে টোকা দিল দরোজায়।

বুড়ো এক কেয়ার টেকার দরজা খুলে অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে থেকে বলল, কি চায়?

গোবিন্দ বলল, আমরা এখানে থাকব।

কেয়ার টেকার বলল, তোমরা কি পাগল হয়ে গেছ! এখনো সময় আছে চলে যাও।

গোবিন্দ বলল, চলে যাওয়ার জন্য আমরা আসিনি। আমরা এখানে থাকব। আপনি সাহায্য করলে আমরা অবশ্যই বেচে থাকব।

” আমি কোনো ধরনের সাহায্য করতে পারিনা। কারন রাতে কি ঘটে আমি কিছুই জানতে পারিনা।”
” ঠিক আছে আপনাকে কোনো সাহায্য করতে হবে না। আপনি থাকার ব্যবস্থা করুন।”
কেয়ার টেকার একটা খাতা এগিয়ে দিয়ে বলল, এখানে কিছু শর্ত দেয়া আছে পড়।

দুজন পড়ল, ” এই অভিশপ্ত জমিদার বাড়িতে যদি কোনো যুবক এক রাত জীবিত অবস্থায় থাকতে পারে তাহলে তাকে নগদ দশ লক্ষ টাকা দেয়া হবে। সেই সাথে নারায়নপুর গ্রামে দশ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হবে। কিন্তু রাত্রি যাপন কালে কোনো যুবকের মৃত্যু হলে কেউ দায়ি থাকবে না।”

অপর পাতায় উনিশ জনের নামে তালিকা ও মৃত্যু তারিখ উল্লেখ করা আছে। জুয়েল নামের তালিকা দেখে ভয় পায়।
জুয়েল বলল, কি করবি?

গোবিন্দ বল, চল, বাড়ি ফিরে যাই।

কেয়ার টেকার বলল, সেই ভাল। মায়ের ছেলে মায়ের কোলে ফিরে যাও।
ওরা সিড়ি দিয়ে নামছে। আচমকা দমকা হাওয়া বইতে লাগল। আকাশে মেঘ নেই। বৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা নেই। ওরা দুজন শেষ ধাপে নামতেই দেখতে পেল একটি মেয়ে আসছে। বাতাসে ওর শাড়ির আচল উড়ছে। হাতে টিফিন ক্যারিয়ার। এই গভির রাতে একজন মেয়েকে দেখে ওরা অবাক হলো।

মেয়েটি কাছে এসে বলল, আপনারা?
গোবিন্দ বলল, গ্রাম দেখতে এসেছিলাম
” জমিদার বাড়িতে কেন এসেছেন ?”
” আমরা এখানে থাকতে এসেছিলাম ”
” এখন কি ফিরে যাচ্ছেন ?”
“জি ”
” ভীতু কোথাকার ”

মেয়েটি পাশ কাটিয়ে ওপরে উঠে যাচ্ছে। তার শরীর থেকে এক ধরনের খুশবু বাতা্সে ছড়িয়ে পড়ছে। মনে হচ্ছে আতরের ঘ্রান।, গোবিন্দ ঘুরে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বল, শুনুন-
মেয়েটি বলল, জি বলুন
‘” আমরা যাচ্ছি না। আজ রাত এখানেই থাকব ‘
” তাহলে আমার সাথে আসুন”
” আপনার পরিচয়”
” আমি নওশি । কেয়ার টেকার আমার বাবা ”

গোবিন্দ, জুয়েল খাতায় নাম লিখে অন্দর মহলে ঢুকল। বিশাল এক কামরা। কোনো আসবার পত্র নেই । কামরার মাঝা মাঝি একটা বড় ঘাট । অল্প দামি বিছানার চাদর। সেই বিছানায় গা এলিয়ে দিল দুজন । কিছুক্ষন পরে কেয়ার টেকার আসতেই গোবিন্দ বলল, চাচা আপনার মেয়ে কে দেখছিনা কেন?

কেয়ার টেকার বলল, আমার মেয়ে তো জমিদার বাড়িতে আসে না বাবা

গোবিন্দ অবাক হয়ে বলল, আপনার মেয়ে নওশি আমাদের অন্দর মহলে রেখে গেছে।

” আমার মেয়ের নাম নওশি এটা ঠিক আছে। কিন্তু সে এই গ্রামে থাকে না।
গোবিন্দ কিছু বলার আগেই বুড়ো কেয়ার টেকার কাছে সরে এলো। তার শরীর কাপছে। কাপা কাপা হাত জুয়েলের কাধে রেখে বলল, তোমরা কি বলছ আমি বুঝতে পারছি না । রাতে সাবধানে থেকো। আমার অনেক কিছু বলার ছিল কিন্তু বলতে পারছি না।

গোবিন্দ পায়চারি করছে। সে চেস্টা করছে এই দুয়ের সমন্বয় করতে। একটা মেয়েকে সে দেখেছে অথচ কেয়ার টেকার তাকে দেখেনি। মেয়েটি বলছে সে কেয়ার টেকারের মেয়ে কিন্তু কেয়ার টেকার বলছে তার মেয়ে এই গ্রামে থাকে না। তাহলে কে এই মেয়ে?

গোবিন্দ ঠিক করল সব ঘটনা সে ডায়রিতে লিখে রাখবে। যদি তাদের মৃত্যু হয় তাহলে পরবর্তী কোনো সাহসি যুবকের কাজে আসবে। তার পরাজয় মানে এই নয় যে বিজয় অসম্ভব।

পুরো ঘটনা ডায়রিতে লিখে রেখে ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখল গোবিন্দ। হাত ঘড়িতে দেখল রাত বারোটা বাজে। গোবিন্দ ব্যাগ থেকে বোতল বের করে পানি খেয়ে বলল, জুয়েল চোখ কান খোলা রাখ, মাথা ঠান্ডা রাখ। আমাদের খুব সাবধান থাকতে হবে।

জুয়েল কিছু বলার আগেই দরজা ঠেলে নওশি ভেতরে ঢুকল । ওর এক পায়ে নুপুর । হাটার সময় ছম ছম আওয়াজ হচ্ছে। ফিরোজা রঙের শাড়ি পরে আছে। কোনো অলংকার নেই । ওর চোখের দিকে তাকিয়ে ভয় হয় গোবিন্দের।

চলবে…