সব মিলে ২১ জন তাও আবার আমাদের চাপে পড়ে। ভালো ছেলেদের ভাবখানা এমন যে গন্ডমূর্খ ও স্প্যানিশ ষাঁড় দের সাথে কে লড়াই করে। মধু বাবুর হাতে টাকা ও লিস্ট তুলে দেওয়া হলো। রিং মাস্টার সুবীর একটু পয়সাওয়ালা,ওকে বললাম মাসিমার থেকে একটু বেশি মাল জোগাড় করিস কিন্তু, মাল খেতে হবে যে। হো … হো.. করে হেসে উঠলাম। সুবীরও একটু গম্ভীর ভাব দেখিয়ে, সে কথা বলতে… সে কথা বলতে, ভাবিস না মাল তো ভুতে জোগাবে।
মাহেন্দ্র ক্ষণ আগত,সবাই বাস স্ট্যান্ডে স্থিত। টিকিট হাতে মধুদা থুরি বাবু। হাতে টিকিট ধরাচ্ছে, নম্বর অনুসারে যে যার জায়গায় বসে পর। একটু বিমাতাসুলভ হলো কারণ আমাদের স্থান পিছন দিকে। স্যার কেমন যেন হলো। পেছন থেকে সবচেয়ে ভালো দেখায়। আর না হয় আমরা দুজন পিছনে যাচ্ছি। থাক থাক চলবে স্যার। বাস চলছে দার্জিলিং মোড় পেড়িয়ে সুকনা ছাড়িয়ে পাহাড়ী আঁকা বাঁকা পথ দিয়ে এগিয়ে চলেছি। বাঁকে কখনো ও আমার ঘাড়ে আবার আমি ওর পেছন থেকে আমরা গান ধরলাম “মেরে স্বপ্নো কি রাণী কব আইগি তু…..”
স্যার নিশ্চুপ। বকা না দেবার কারণ ‘আরাধনা’ সিনেমা একসাথে দেখেছিলাম কোনো কারণে স্কুল ছুটি হওয়ায়। আমরা লুকিয়ে তৃতীয় ক্লাসে আর স্যারেরা প্রথম ক্লাশে। মধ্যাহ্ন বিরতির সময় ধরা পড়ে গেলাম এবং কয় এক ঘা ও পড়েছিল।
প্রায় চার ঘণ্টায় পৌঁছে গেলাম। গ্রীষ্মেও ভালোই শীত শীত ভাব। ব্যাগ থেকে সোয়েটার বের করে সবাই গায়ে চরালাম। বুকিং করা হোটেলে উঠে, স্যারের ঠিকানা মতো ঘরে উঠলাম। এবারের টায় ভুল করেননি। আমাদের পাশাপাশি দুটো রুম এবং শেষ মাথায়। স্যারেরা সামনে,আর পরপর ভালো ও সুবোধ বালকেরা। চল তাড়াতাড়ি খেয়ে নে বোটানিক্যাল গার্ডেনে যেতে হবে। সময় নষ্ট করা যাবে না।
খেয়ে গার্ডেন মুখো, টিকিট কেটে ভিতর ঢোকা। ঘন্টা দুই বিভিন্ন গাছপালা,ফুল চেনালেন সায়েন্টিফিক নাম দিয়ে। আমাদের কাছে সব সমান সায়েন্টিফিক বা আন সায়েন্টিফিক। বাঘ ডাসার আবার বাঘের ভয়।
মধু বাবুরা আবার কবে বায়োলজি ও বায়োলজিক্যাল নাম জানলেন, উনিতো ইংরেজি দ্বীতিয় পত্রের সাবজেক্ট টিচার(জ্ঞানের ফর্দা ফ্রাই ওটা গ্রামার হবে)। বুঝতে পারলাম বুড়োরা কেনো পুরোনো চাল ভাতে বাড়ে বলেন। এসকার্সন করিয়ে করিয়ে দুধে জীব ও উদ্ভিদ বিদ্যায় মা সরস্বতী হয়ে গেছেন। অনেক হয়েছে চল তোরা,বাকিটা বাড়িতে গিয়ে পড়িস । আর তোদের তো বলা না বলা সমান। পাশেই পদ্মজা নাইড়ু জুলজিক্যাল পার্ক.. বুঝেছি স্যার। কি বুঝলি? মানে আপনি চিড়িয়াখানা র কথা বলছেন। আচ্ছা চিড়িয়া তো সহজেই বলে দিলি। আমরাও একটু আধটু পড়াশোনা করি একদম ছাট মাল ভাববেন না। বুঝিরে বাবা বুঝি, এমনি এমনি ৯,১০ পার করে ইলেভেন এ পৌঁছায়নি।হন্তদন্ত হয়ে জুতে পৌছালাম। একের পর এক রেড পান্ডা,স্নোলেপার্ড, হরিণ, বিভিন্ন পাখি ,লামা, হিমালয়ান ভাল্লুক ইত্যাদি দেখালেন ও লেখালেন, অবশ্যই উল্লুক…. না মানে রথীন ও ছিল। উল্লুক নামেই পরিচিত।
যা লেখালেখি করেছিলাম হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষার পর কাকিমা কেজি দরে আমার জ্ঞানের ভাণ্ডার বেচে দিয়েছিল। সেদিনের মতো শেষ। স্যার ক্লান্ত , চল হোটেলে ফেরা যাক। ফেরার সময় কিছুটা সময় ম্যালে কাটিয়ে ফেরা, ভুল ভাবেননি, মাল রোডে আমরা সেভেন মাস্কেটিয়ার্শ ই ছিলাম। দুজন স্যার ঘরে ঢুকে ঘর বন্ধ করলেন।নির্দেশ মত ছেলেরা বলে ডিনার রাত ঠিক ৮.৩০টা স্যার বলেছেন।স্যাররা কোথায়? ঘরেই আছে। এখন বুঝি এক আধপেগ ঘর বন্ধ করে টেনেছেন।
রাত ৬.৩০টা মাস্কেটিয়ার্শ দের মধ্যে ফিসফাস আর মন উসখুস ও চঞ্চলতা পরিলক্ষিত, সুবীর কেন্দ্রীক দৃষ্টি। সুবীর বলে ওঠে চল সামনেই সিমলা হোটেল, ঢুকুর ঢুকুর করে দু পেগ ওটি( old travrin whiskey) মেরে আসি। ইলেভেনে ই রাজা বাদশাহ হয়ে গিয়েছিলাম, মাঝে মধ্যেই বিয়ার হুইস্কি খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলা শুরু করে দিয়েছিল। ঠিক ৮.১৫মি তেই হোটেল প্রবেশ এবং দূরত্ব রেখে চলা। খাওয়া দাওয়া সেরে হোটেলে এসেই মধুবাবু বলেছিলেন কাল ভোর তিনটায় উঠে সবাই রেডি হয়ে নিবি,৩.৩০মিঃ জীপে উঠে টাইগার হিল আর সানরাইজ উপভোগ করবো। আকাশের রূপ পরিবর্তন ও আলোর খেলা দেখবি। আমি একটু ঘুম কাতুড়ে ছিলাম,স্যার ভূগোল শিখে কি হবে? চোপ ব্যাটা বলে গলা খেঁকিয়ে উঠলেন। একটু ভয় পেয়ে ছিলাম আমরা। মাই বিয়ার থেকে টাইগার হয়ে ওঠায়। চুপকরে ঘুমতে যা। এখন বুঝি মালের গন্ধ পেয়েছেন বা আমাদের মধ্যে কুইশলিং ছিল। ম্যাঁও,ম্যাঁও করে ঘরে ঢুকে ছিটকিনি।
রাত তিনটা ,ঠক টক, তোরা ওঠে পর গাড়ি এসেগেছে। কোন ভাবে লেপ থেকে বেরিয়ে গিরগিটি মতো দ্রুত রূপ পাল্টে নিলাম আমরা সাত। একটু গম্ভীর পরিবেশ, গতকালের ধমকের জন্য। মধু বাবুরা এগিয়ে এসে বলেন কিরে এমন চাঁদ পানা মুখ গুলো কে ব্যাঙ পানা করে রেখেছিস যে। না মানে ঘুম ঠিকমতো হয়নি তো তাই। এখনো ঘোর কাটেনি? ঠিক বুঝলাম না সমস্বরে বলে উঠি।না মানে ঘুম ঠিকমতো পুরো পুরি হয়নি বুঝি? রাতে লেট করেছিস ঘুমতে । চল এবার দেখে মুগ্ধ হয়ে জাবি। স্যাররা কিছুটা নরমাল করলেন। আমি একটা ক্লিক থ্রী ক্যামেরা এনেছিলাম, সেটা নিলাম। সুবীর আগফা নিল। গাড়িতে উঠে বসলাম সবাই।
ঘুম থেকে বাঁদিক দিয়ে সরু ও খাড়া রাস্তা বেয়ে আমাদের ল্যান্ড রোভার্স গাড়িগুলো গ্যাগ গ্যাগ করে এগিয়ে চলেছে। ভীষণ ভয় হচ্ছে,গাড়ি উলটে যাবেনাতো। ভয় উৎকন্ঠার মাঝে অন্ধকারে থাকতেই টাইগার হিলের ভিউ পয়েন্টে গিয়ে উঠলাম। বেশ ভিড়, সবার হাতে ক্যামেরা, সবাই দৃষ্টি পূর্ব দিগন্তে স্থির। অন্ধকারেই দেখছি সোয়েটার,জ্যাকেট, বাঁদর টুপি, কম্বল , চাদরে সবাই ঢাকা। ঠান্ডা বেশ জম্পেশ। মনে মনে ভাবছি চা হলো ভালোই হতো। মধুবাবু মনস্তাত্ত্বিক এর মতো মন বুঝে,এক চা ওয়ালাকে ডাকলেন।
সবাইকে এক গেলাস করে চা ও দুটো করে কুকিজ বিস্কুট দাও দেখি ভাঙ্গা ভাঙ্গা নেপালি তে চা বিক্রেতার উদ্দ্যেশে বলেন। কুকিজ ডুবিয়ে চা খেয়ে চাংগা হয়ে চেঁচামেচি জুড়ে দিলাম কারণ পূর্ব দিগন্তে অন্ধকারের রূপ রং রাগ ভেঙে রঙিন হতে আরম্ভ করেছে।ক্যামেরা হাতে আমরা তৈরী।