তব্দা কি! অন্যের অভিধানে কি বলে আমার জানা নেই। তবে আমার অভিধানে তব্দা খাওয়া হলো স্তম্ভিত হয়ে নির্বাক হয়ে যাওয়া।
এরকম আমার প্রায় ই হতো আগে। এখনো হয় তবে খুব কম। আমি মানুষ টা একটু বেশিপ্র্যাক্টিকাল। তাই অবাক হবার মতো কোনো বিষয়ে ও খুব একটা অবাক হইনা।এজন্য অনেকেই হয়তো আমার সাথে কথা বলে মজা পান না। সেটা তাদের ব্যাপার! আমি কি করতে পারি!
আমি এক বিশেষ নীতিও ধারণ করি তা হল,টেনসন লেনেকা নেহি টেনসন দেনেকা। আর আমার হাসবেন্ড ফুল টাইম সিরিয়াস পাবলিক। টেনসন নিতেই ভালোবাসেন। এবং উনি সেই টেনসন কৌশলে আমার মাঝে স্প্রেড করতে চান। একই কথা অনেক বার বলেও যখন কাজ হয় না তখন ব্যাচারা মন খারাপ করে অন্য ঘরে গিয়ে বিড়ি ধরান।উনার এই যে একটা বিশেষ সংগী আছে বিড়ি। সুখে দুখে ভাবে অনুভবে,রাগে অনুরাগের সংগী! আমার কে আছে যে আমি অযথাই টেনশন করবো?
তারপর ও মাঝে মাঝে তব্দা খেয়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়ি। আমার বড়ো ছেলে কেজি তে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার আগে ই বানান করে অনেক শব্দ ও বাক্য লিখতে পারতো। তাই পরীক্ষা নিয়ে আমার কোনো টেন্সন ছিলো না। জানি ভালোই করবে। আগের রাতে ফ্ল্যাটের এক বাচ্চার বার্থডে তে গিয়ে আনন্দ করলো। আনন্দের মাঝে তখনই ঢাকা থেকে অনেক গেস্ট এসেছিল আমাদের বাসায়। তাই বার্থডের প্রোগ্রামের মাঝে চলে এসেছিলাম। ওর দুই ফুপুর ফ্যামিলি এসেছিল। তাদের সাথে কথা বলে অনেক রাতে ওরা চলে যাবার পর অতি পরিশ্রমে তব্দা খেয়ে গেলাম। আমার মাথা ও মন কাজ করছিল না আমি আর ওকে কিছুই পড়াতে পারিনি বা কিভাবে পরীক্ষা দেবে তাও বলে দিইনি। তো সকালে উঠে ওকে নিয়ে পরীক্ষার হলে গিয়ে ছেড়ে দিয়ে বললাম যা যা আসে সব লিখ। আমি জানি সে পারে। কিন্তু আমি বুঝিনি সে শিশু,তাকে ক্ষণে ক্ষণে ই মনে করিয়ে দিতে হয়। যথারীতি সে বিশাল খেলার মাঠ দেখে পাগল হয়ে গেল। কি যে লিখেছিল কে জানে। পরে প্রতিবেশীর বাচ্চার কাছে শুনলাম ও নাকি বেশির ভাগ সময় কে কি করছে তাই দেখেছে।তবুও দশম হয়েছিল।
প্রাইমারি সেকসনে যখন পড়তো তখন রেজাল্ট দেয়া হতো ক্লাসে। সেবার ক্লাস টু থেকে থ্রি তে উঠবে, সেবারই প্রথম মাঠে রেজাল্ট দেয়া হচ্ছিল। আমি সাধারণত রেজাল্ট আনতে যেতাম না ওর বাবা যেতো। সে বার কি কারণে উনি যেতে পারেন নি,আমি ও সংসারের কাজকর্ম সেরে তখনই গেটে ঢুকেছিমাত্র রেজাল্ট ঘোষণা হচ্ছে। আমি আমার বাচ্চার রেজাল্ট শুনে তব্দা খেয়ে গেলাম। দুই সেকসান মিলে সে থার্ড হয়েছে!সবাই আমাকে বলছে কিন্তু তব্দা খেয়ে চুপসে আছি।কি করা উচিৎ কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না!
এরপর এস এস সি পরীক্ষার রেজাল্ট এর দিন।
তার দুতিন দিন আগে ওর পা এর প্লাস্টার খোলা হয়েছিল। পরীক্ষা দিয়ে মামা বাড়ি গিয়ে ফেরার আগের দিন খেলতে গিয়ে লিগামেন্ট ছিঁড়ে গিয়েছিল। ঐ অবস্থায় ঢাকা হয়ে চট্টগ্রামে ফিরেছিলাম। এর এক সপ্তাহের মধ্যে ওর দাদি মারা গেলেন। ১৭/৬/২০০৮তারিখ দাদি মারা গেলেন ২৬/৬/২০০৮ রেজাল্ট হলো। বাইরে সকাল থেকে বৃষ্টি। ও কোত্থেকে যেন রেজাল্ট পেল। এ প্লাস পেয়েছে। আমরা ও তাই ই আশা করে আছি।বাবু তাড়াতাড়ি নামাজে দাঁড়িয়ে গেল। এর একটু পর আমি আর বাবু নাসিরাবাদ স্কুলের দিকে রওনা হলাম। স্কুলে বোর্ডের দিকে তাকিয়ে বল্লো আম্মু আমি তো এ প্লাস পাইনি বি পেয়েছি! আমি আবার তব্দা খেয়ে গেলাম। কিংকর্তব্যবিমূঢ়! এমন সময় ওর বন্ধু আরিক দৌঁড়ে এসে ওকে বল্লো, “আরে এটা সায়েন্স এর রেজাল্ট চাট। আমাদের টা ওদিকে চল দেখবি।আন্টি আসেন দেখেন। গেলাম দেখলাম সত্যি সত্যিই ডে সেকসানে সে একমাত্র এ প্লাস। কিন্তু সেই তব্দা খেয়ে আছি কোনো প্রতিক্রিয়া হচ্ছে না। ওই অবস্থায় দুই নাম্বার গেটের কাছে ওর অংকের স্যারের বাসায় গেলাম। স্যার আমাকে দেখে ধরে ফেললেন। বল্লেন, “আপনি খুশি হন নি। এমন চুপ করে আছেন কেন।সেলিব্রেট করেন।” উনার কথায় সম্বিৎ ফিরে পেলাম। বাসায় এসে আধামন মিস্টি কিনে বিতরণ করেছিলাম।
তখনও সাথে সাথে গোল্ডেন কিনা জানা যেত না। পরদিন ২৭/৬ এ ওর জন্মদিন। ও মিস্টি নিয়ে আমার আম্মা কে সালাম করতে খুলসি রওনা হয়েছে বাসায় ল্যান্ড ফোনে ওর এক বন্ধু (আজ আর নাম মনে নেই) খবর দিল আন্টি নয়ন গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। পরে জানলাম স্ট্যান্ড ও করেছে।
এরকম তব্দা খাওয়া গল্প আরও আছে। সময় করে আবারও বলবো!