Select Page

হিপনোটিজম

হিপনোটিজম

ইন্ডিয়া থেকে আনা হস্তরেখার বইয়ের পাশাপাশি হিপনোটিজমের বই নিয়ে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। এবার নিজেকে নিয়ন্ত্রন করা শিখতে হবে। কয়েকদিনেই সব কটা বই পড়া শেষ। এবার অনুশীলনের পালা।

খুব ভোরে উঠে ঘরের অল্প আলোতে সাদা দেয়ালে একটা ছোট্ট কালো গোল চিহ্ন দিয়ে স্থির হয়ে বসে চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে থাকার চেষ্টা শুরু করে দিলাম। এক মিনিট যেতে না যেতেই চোখ আর খুলে রাখতে পারিনা। পলক পড়েই যায়। ঝরঝর করে চোখে পানি চলে আসে।

যে কোনোভাবেই চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে থাকতেই হবে। প্রথমদিন বিফল হলাম। মনে হলো এটা একটা অসম্ভব কাজ।

এভাবে করে প্রতিদিন ভোরে অনুশীলন চালিয়ে যেতে থাকলাম। ব্যর্থতা আমার পিছু ছাড়ে না। আধা মিনিট চোখের পলক না ফেলে এক দৃষ্টিতে কোনো স্পটের দিকে তাকিয়ে থাকাও যেনো অসম্ভব বলে মনে হতে লাগলো। সারাদিন কোনো কিছুতেই মন বসে না। ইচ্ছেমতো যেদিকে সেদিকে চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে থাকার চেষ্টা করি।

চেষ্টা আসলেই মানুষকে সফলতা এনে দেয়। ধীরে ধীরে আমার এক দৃষ্টে চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে থাকার সময়সীমা বাড়তে থাকলো। দুই মিনিট, পাঁচ মিনিট, পনের মিনিট, ত্রিশ মিনিট পর্যন্ত চোখের পলক না ফেলে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকার সফলতা পেলাম। নিজেকে কমান্ড দিতাম যে আমার অনেক ক্ষমতা। আমি চাইলেই অনেক কিছু করতে পারি, ইত্যাদি ইত্যাদি। নিজেকে সত্যিই ক্ষমতাবান মনে হতো। মনে করতে পারতাম আমি অনেক কিছু করে ফেলতে পারবো। সে এক অন্য রকম অনুভুতি।

এবার অন্যরকম অনুশীলনে মন দিলাম – Far hypnosis অর্থাৎ দূর সম্মোহন। যখন কারো সাথে কথা বলতাম তখন তার চোখের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থেকে কথা বলতাম আর মনে মনে তাকে নিয়ন্ত্রনের কমান্ড দিতাম। প্রথম প্রথম ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং লাগেনি কেননা বুঝতে পারতাম না সামনের মানুষটা সত্যিই আমার নিয়ন্ত্রনে কিনা। আরো এক ধরনের দূর নিয়ন্ত্রনের প্রাকটিস করা শুরু করলাম। আমার সামনে হেটে যাওয়া কোনো মানুষকে মনে মনে ডাক দিয়ে বলতাম, এই পেছনে ফিরে তাকাও।

কাউকেই নিয়ন্ত্রন করতে পারছিলাম না। মনে মনে ডাকলেও কেউ পেছন ফিরে তাকাচ্ছিলো না। আমি আমার অধ্যাবশায় চালিয়ে যেতেই থাকলাম। অবশেষে আমি আমার বিশ্বাসের ভিত্তিপ্রস্তর করেই ফেললাম।

জানিয়ে রাখছি, আমার ২০ বছর বয়েসেই বিয়ে করতে হয়েছিলো। পারিবারিক ভাবেই বিয়ে। বিয়ের গল্প পর্ব অন্য কোনোদিন সময় হলে বলবো। মাত্র ১৬ বছরের ছোট্ট বউ আমার। একদিন দেখি আমার বউটা আক্কেল দাঁতের ব্যথায় অস্থির হয়ে গেছে। সে তার চোয়ালে হালকা স্পর্শ পর্যন্ত করতে দিচ্ছে না। এতোটা ব্যথা! তখন আমার মনে হলো দেখিতো আজ আমার বউটাকে নিয়ন্ত্রনে নিতে পারি কিনা। যেই ভাবনা সেই কাজ। আমার বউকে বললাম, আমি তোমাকে যা যা বলবো তুমি শুধু তা একটু মনোযোগ দিয়ে শুনবে। তাহলে আমি তোমার ব্যাথা সারিয়ে দিতে পারবো। অল্প বয়েসি বউ আমার কথায় বিশ্বাস করলো। আমি ওকে সোফার ওপর শুতে বললাম। ও শুয়ে পরলো। চোখ বন্ধ করতে বললাম। ও চোখ বন্ধ করলো।

আমি আমার ভেতরের সমস্ত শক্তিকে একসাথ করার প্রচন্ড ইচ্ছেশক্তির প্রয়োগ করলাম। নিজেকে বিশ্বাস করাতে লাগলাম যে আমিই পারবো। মুখে শব্দ করে বলতে থাকলাম –

এই যে দেখো তোমার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। তোমার কিছুই হয়নি। তোমার অনেক ভালো লাগছে। সুন্দর হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। এই যে দেখো তোমার দাঁতে এখন কোনোই ব্যাথা নেই। আছে কি? ব্যথা নেই তো! তোমার এখন অনেক ঘুম পাচ্ছে। তুমি এখনি ঘুমোবে। তোমার দাঁতে কোনোই ব্যথা নেই। তোমার এখন শুধু ঘুম আর ঘুম…

দুই মিনিটের মধ্যেই দেখি বউ আমার গভীর ঘুম। কোনো নড়াচড়া নেই। আমি ইচ্ছে করেই ওর চোয়ালে হাত দিয়ে চাপ দেই। কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এরপর ডাকাডাকি শুরু করি। দেখি ঘুম আর ভাঙ্গে না। আমি ঘাবড়ে যাই। মনে মনে ভাবতে থাকলাম, আমি কি ওকে জাগাতে পারবো না! মগ ভরে পানি নিয়ে মুখে পানির ছিটা দিয়ে জোরে জোরে ডাকতে থাকলাম। অবশেষে ঘুম ভাঙ্গে। জানতে চাইলাম, দেখোতো তোমার দাঁতে এখন ব্যাথা আছে কিনা? সে বলে কোনো ব্যথাই নেই।

এবার আমার নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। আমার মনে হতে থাকে, আমি ইচ্ছে করলে অনেক কিছু করতে পারি। আমার অনুশীলন আরো বাড়িয়ে দিলাম। আমি যাকে তাকে পেছন থেকে মনে মনে ডাকা শুরু করলাম, – পেছনে থাকাও। একসময় দেখলাম, যাকেই তাকাতে বলি সেই পেছন ফিরে তাকিয়ে কি যেনো ভাবে আবার আপন মনে চলে যায়।

ব্যাপারটা ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। আমি যার তার ওপর হিপনোটিজম প্রয়োগ করতে থাকি। এ যেনো এক ভয়ঙ্কর খেলা…

আমার এ ভয়ঙ্কর অসুস্থ্যতা থেকে আমার নিজেকে নিজেই বের করতে হয়েছিলো। এবার নিজেকে উল্টো সম্মোহনের পালা, – আমার কোনোই ক্ষমতা নেই; আমি একজন অতি সাধারন মানুষ; আমি একজন অতি নগণ্য মানুষ; আমি একজন অতি সাধারন মানুষ; আমার কোনোই ক্ষমতা নেই…

আমার কোনোই ক্ষমতা নেই…

About The Author

Alam M

I’m Alam, a tireless seeker of knowledge, occasional purification of wisdom, and also, coincidentally, a WEB DESIGNER. I am good at WordPress Malware removal and Google Page Speed. I’m a Mathematician and love to play with numbers. I do write blogs occasionally.