বিষয়বস্তু নির্ধারণ যে করবো তা শেষ করে ফেলেছেন অগ্রজ বিজ্ঞজনেরা৷ এমনকোনো দিক নেই যা লিখে যাননি তাঁরা৷ মহান এসব মনীষীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই সবসময়ই৷ আফসোস শুধু এটুকুই যে, পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে কিছু কিছু ভাবনা রেখে গেলে কী ওনাদের ক্ষতি হতো খুব! খুব কী সমস্যা হতো!
এই ধরুন আমাদের বিশ্বকবি এবং কবিদের গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাই প্রায় সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সকলকিছু গানে, কাব্যে, গল্পে-উপন্যাসে আর নাটকে শেষ করে দিলেন! এটা কী মেনে নেয়ার মতো, বলুন? তবুও মেনে নেয়া ছাড়া তো উপায়ও নেই৷ পাশাপাশি আমাদের হৃদয়ের কবি, আমাদের প্রাণের কবি জাতীয় কবি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামও গানে, গল্পে, নাটক আর উপন্যাস দিয়ে শেষ করে দিলেন! একমাত্র বিদ্রোহী কবিতার মাধ্যমেই দ্যুলোক ভূলোকের এফোঁড় ওফোঁড় করে ছাড়লেন! বলুন মানে হয়?
ওদিকে ইউরোপ-আমেরিকার কবি সাহিত্যিকেরা পার্থিব অপার্থিব দর্শনের ভেতর-বাহির একাকার করেই ছাড়লেন৷ শেকসপিয়ার তো নাটক দিয়ে বলা না বলা সবকিছু নির্দ্বিধায় বলে ফেললেন৷ ওদিকে সভ্যতার বিকাশের বাতাস গায়ে মেখে গ্রীক দার্শনিকেরা জাগতিক-মহাজাগতিক সব জায়গায় চষে বেড়ালেন৷ ব্রিটেনের কবি সাহিত্যিকেরা তাঁদের ভাব আর ভাবনাকে আধুনিকীকরণ করতে যা করতে হয় সেটাই করলেন৷ জার্মানীরাও বসে থাকলেন না; যুদ্ধ আর মহাযুদ্ধের মধ্যেই নিত্যনতুন ধারণা নিয়ে লেখালেখি শেষই করে ফেললেন৷ কাকে কী বলবেন বলুন?
এমন কাউকেই পাওয়া গেলো না যে, কিছু কিছু ধারণা বা ভাবনা পরের প্রজন্মের জন্যে রেখে দিতে পারেন৷ স্বার্থপর! বুঝলেন সব স্বার্থপর! রুশ বিপ্লব পূর্ববর্তী রাজাদের সময়ে রাজনদের গুণগানে মুগ্ধ ছিলেন যাঁরা তাঁরাই আবার সম্রাট জার পরবর্তী সময়ে সাম্যের প্রতি এমন মোহগ্রস্ত হলেন যে তা নিয়ে যাই মনে হলো তাই লিখে শেষ করে দিলেন৷ ম্যক্সিম গোর্কী “মা” উপন্যাস লিখে উপন্যাস লিখিয়েদের বারোটা বাজিয়েই ছাড়লেন শেষে৷
আবার আরবভূমিতে কাল্পনিক চরিত্রের ওপর হাজার বছরের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করলেন এরাবিয়ান লেখকেরা৷ সবাইমিলে জোটবদ্ধ হয়ে দুনিয়ার সব ফাঁকফোকরে যা মশলাপাতি ছিলো সবটাই লিখে লিখে শেষ করলেন৷ একবারও ওনাদের উত্তর প্রজন্মের কথা ভাবলেন না৷ বড় কষ্ট হয় জানেন, বড্ড ব্যথা জন্মে অন্তরে৷ তখনকার সময়ে খেয়ে না খেয়ে কালি-কলমের অনুন্নত ব্যবস্থাদির মধ্যেও কে তাঁদেরকে লিখতে বাধ্য করেছিলেন সেটা যদি জানা যেতো তাহলে তাঁরই একদিন কী আমাদেরই একদিন তারই বোঝাপড়া হতো৷
এখন যদিও সাহস করে একটু লিখতে বসবেন ব্যাস্ ধরা পড়ে গেলো অষ্টাদশ শতকে এটা লিখে ফেলেছেন তখনকার কোনো এক পাগলা টাইপের কবি বা লেখক৷ ওঁরা নাকি অনেকটাই উন্মাদ উন্মাদ টাইপেরই ছিলো যতটুকু শোনা যায়৷ বাঁশের কলম, ছাইভস্মের কালি, পাখির ডানা, ময়ূরের পাখনা, গাছের পাতা, বাঁশের পাতা এসব মাধ্যমে লিখতেন ওনারা৷ কিন্তু কষ্ট করে লিখেছেন আর সেই জ্বালা থেকেই ব্রহ্মাণ্ডের নাড়িনক্ষত্র লিখে গিয়ে নিজে নিজে বড় বড় দার্শিনক আর পণ্ডিত হয়ে বসে আছেন! আরে বাবা তখনকার দিনে কে তাঁদেরকে ক্রেস্ট বা উত্তরীয় বা সংবর্ধনা দিতো? তখন এগুলো ওঁরা বুঝতেনও না – আবার বড় বড় পণ্ডিত হয়ে আমাদের আশা আকাঙ্ক্ষাকে গুঁড়িয়ে দিয়ে ওপারে আরামে আছেন৷
কী যে জ্বালা! ফেসবুক বা অনলাইন বা এরকম ভার্চুয়াল সুযোগ পেলে ঐসব বর্ষীয়ান পণ্ডিতেরা আরও কতো কী যে কেলেঙ্কারি ঘটাতেন এটা ভাবতেই গা শিউরে ওঠে, বাপরে বাপ! ভাগ্যিস সে সময়ে এসব আসেনি৷ ওঁরা ভাঙা নৌকা, জেলেগিরি করেই নানারকমের ঘটনা বানিয়ে সাহিত্যের সম্ভাব্য সম্ভার চুষে খেয়ে ফেলেছেন৷ আর আমরা আঁটিটুকুন নিয়ে কাড়াকাড়িতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি৷
বাসব রায়