ফিরে আসার পর (পর্ব-৪)

শাহেদ চলে যাবার পর মিথি মুষড়ে পড়েছিল ঠিক কিন্তু মেয়ে দুটোর কথা ভেবে নিজেকে সামলে নেয়। শাহেদ মিথিকে পছন্দ না করুক, মেয়ে দুটো তো কোনও অপরাধ করে নাই। শাহেদ একটা খোঁজ নিতে পারত কোনও একদিন, না তাও নয়। এমনকি নিজের বাবা-মায়ের খোঁজও রাখেনি শাহেদ। এজন্য অনেক সময় নিজেকেই দায়ী মনে হয় মিথির। বিয়ের পর মিথি চেষ্টা করেছে শাহেদের মন জয় করতে, পারেনি।

শাহেদ কেন চলে গেল? রানুকে ভালবেসে বিয়ে করেছে, এ খবর মিথি, শাহেদের বাবা সবাই পেয়েছে।

ভালবাসার এতটাই শক্তি যে নিজের সন্তান ফেলে চলে যাওয়া যায়!

মিথি শুনেছে, রানুর বাবা মস্ত বড়লোক, অনেক বড় কর্মকর্তা। সেই তুলনায় মিথির বাবার তেমন লেখাপড়া ছিল না, উনি ব্যবসায়ী মানুষ, ব্যবসাই করেছেন তাও কোনও বড় ব্যবসা নয়। সমাজে তেমন বড় পরিচয় নেই মিথির বাবার। তবে কি শাহেদ এই পরিচয়টাই খুঁজেছে! যে পরিচয় তাকে আরও বড় করে তুলবে, আরও প্রতিষ্ঠিত করবে! হয়ত! মিথি এসব ভাবত খুব আগে।

যে মানুষ তার দিকে ফিরেই তাকাল না, তার কথা মিথি আজকাল ভাবে না। মেয়েদুটোকে নিয়েই তার জগৎ।

মিথির শ্বশুর, শাহেদের বাবা মিথির ওখানেই নাতনিদের সাথে থাকেন। দেবর ননদেরা আসে, সবার সাথে মিথির সুসম্পর্ক। শাহেদ তাকে ফেলে চলে গেছে কিন্তু মিথি কাউকেই ফেলে দেয়নি।

মেয়েদুটো যেন কখনও নিজেদের অসহায় না ভাবে সেজন্য মিথি শ্বশুরকে এখানেই রাখে। মিথির মেয়েরা জ্ঞান হবার পরে তাদের বাবাকে খুঁজেছে।

মিথির সাথে শাহেদের ঘটনা তাদের দুই পরিবার ছাড়া বাকি সবার কাছে অস্পষ্ট, সবাই জানে শাহেদ সরকারি চাকরি করে। আর মিথির শাহেদের বিষয়টাতে এতটাই নির্মোহ থাকে যে তাকে ঘাটাতে কেউ সাহস পায় না।মিথি তার বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করে, ব্যবসা আরও কিছুটা বাড়িয়েছে সে।আত্মীয়স্বজনের মুখের কথা বন্ধ রাখার জন্য সে কারও সাথে তেমন যোগাযোগ রাখে না। মিথির জমজ মেয়েদের নাম মেঘ আর পাখি।

তারা তাদের বাবার কথা যখন জানতে চাইত মায়ের কাছে, মা বলত তাদের বাবা দূরে চাকরি করে, ছুটি পেলে আসবে। এরপর মেয়ে দুটো বলত, সবার ছুটি হয় তাদের বাবা কি ছুটি পায় না? মিথি বলত তাদের বাবা সবার চেয়ে অন্য রকম চাকরি করে, হয়ত কোনও একদিন ছুটি পাবে তারপর আসবে।

মেয়ে দুটো অনুভব করত যে তাদের মা বাবার বিষয়ে বেশি কথা বলতে চায় না, কাজেই তারাও আর মিথিকে কিছু জিজ্ঞেস করত না। শাহেদের বাবা, তাদের দাদুও বলতেন বাবা ছুটি পেলে আসবেন। মিথি আর তার মেয়েদের সবচেয়ে বড় শক্তি শাহেদের বাবা, কাজেই তাদের দিন খারাপ কাটছিল না।

কেবল বিশেষ কিছু দিন এলে মেয়ে দুটোর মুখ মলিন হয়ে যেত, যেন জোর করেই ওরা হাসত আর মিশত সবার সাথে।

রানুর ব্যস্ততার শেষ নেই। এটা ওটা, সংসারে কত কিছু থাকে। বাড়িটা কমপ্লিট হয়ে গেছে। এবার ওঠার পালা।

সারাদিন যায় গুছাতে। রানুর মনে বেশ আনন্দ খেলে যায়। শাহেদের রুচি আছে বেশ। অনেক অনেক টাকা খরচ হয়েছে বাড়িটা তৈরি করতে গিয়ে। অত্যাধুনিক সব ফিটিংস বাড়িটিতে। রানু হিসেব করে তাদের বিয়ের প্রায় এগারো বছর হতে চলল।

শাহেদের রুমটাতে রানু এসেছে। শাহেদের আলমিরা খুলল। জরুরী কাগজপত্রগুলো আলাদা রাখতে হবে।নয়ত হারিয়ে যেতে পারে। সামনের ড্রয়ারে ভেতরের ড্রয়ারের চাবি ছিল। রানু চাবি দিয়ে ড্রয়ারটা খুলে কাগজ আর ফাইলগুলো আলাদা লাগেজে ভরছে। হঠাৎ একটা ফাইলে রানুর চোখ আটকে গেল। ফাইলটা কৌতুহল বশত সে খুললো।

রানু অবিশ্বাস্য চোখ বিস্ফোরিত হল। এ কেমন করে সম্ভব! শাহেদ এতবড় সত্যটা এতবছর ধরে কী করে লুকিয়ে রাখল? বুকের ভেতরটা রানুর দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। অসহায়ের মত সে নির্জীব হয়ে বসে রইল।

চলবে…