রোমান্টিক হওয়ার একটা ইচ্ছে হঠাৎ পেয়ে বসলো ৷ বলা নেই কওয়া নেই এমন একটা উৎকট ইচ্ছের কেনো যে সৃষ্টি হলো তাও বুঝে ওঠা কঠিন বেশ ৷ সময় থাকতে এরকম ইচ্ছে কেনো যে হলো না তাও মনে করা বেশ শক্ত ৷ যাহোক ইচ্ছে তো ইচ্ছেই, আর এমন একটি ভালো আগ্রহকে অবদমিত না করাই শ্রেয় ৷
বয়সের ভারে যখন দেহ মন একসাথেই ভেঙে পড়তে বসেছে, নানাবিধ বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার লক্ষণগুলো যখন জোর কদমে এগিয়ে আসছে তখন রোমান্সের আয়োজন করার ইচ্ছে জাগছে মনে ৷ বলুন, ঠেলা কত প্রকার এবং কী কী !
শৈশব কৈশোর কেটেছে নানাবিধ প্রতিকূলতায়, যৌবন যে জীবনে এসেছে কিনা তা উপলব্ধি করবার কোনো সুযোগই হয়নি ৷ অতঃপর যথেষ্ট চরিত্রবান হওয়া সত্বেও বিয়ে জাতীয় অহেতুক একটা মস্ত বিড়ম্বনাকে সাথে নিয়ে সংসারে সঙ্ সাজতে হয়েছে যা চলমান অমসৃণ অস্বচ্ছ গতি নিয়ে আজও আছে সাথেই ৷ ঈশ্বরের ঈষৎ ঈশারায় সম্ভবতঃ স্খলনজনিত কারণেই প্রজন্মের আবির্ভাব এবং যথারীতি অন্ধ গর্দভের ন্যায় নীরব অশ্রুক্ষরণে অট্টহাসি নিয়ে এখনও বেঁচেই আছি ৷ তারপরেও এতটা বিদগ্ধ যাত্রাপথ পেরিয়ে রোমান্টিক হওয়ার দুর্দমনীয় আকাঙ্ক্ষা জেগে জেগে উঠতে চায়৷
আমার ধারণা এমন কেলেঙ্কারি আলোচনা ফেসবুক ছাড়া কোথাও সম্ভব নয় ৷ কঠিন জীবনের নানাবিধ ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে আসতে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত কিম্বা অমাবস্যা বা পূর্ণিমার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যগুলো দেখবার তেমন সৌভাগ্যও হয়ে ওঠেনি ৷ সবুজ অরণ্য, মেঘ, বৃষ্টি, পাহাড়, নদী, সমুদ্র এসব মন থেকে যেনো দেখাই হয়ে ওঠেনি ৷ জীবন যন্ত্রণার যুপকাষ্ঠে পড়ে সকল রূপ-রস কোথায় কখন কিভাবে অন্তর্হীন হয়ে গেছে ৷
অন্তঃসারশূন্য সময়ে রোমান্টিক সাজবার বাসনা ! বলুন কিরকম বিশ্রী সব ইচ্ছে ! রোমান্টিক হওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে স্মার্ট হওয়ার একটা অপসন আছে অবশ্যই ৷ আবার স্মার্ট হওয়ার আগে শারীরিক গঠন বা পোষাক-পরিচ্ছদেরও গুরুত্ব ফেলে দেয়ার নয় ৷ দৈহিক সৌন্দর্য জন্মগত বা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি একদম৷
ধুলোমাটির পরম আদরে শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে, গ্রামীন হাঁটা-চলায় অভ্যস্ত হওয়ায় সম্পূর্ণ আর্টবিহীন চলাফেরা আমার ৷ পথচলার সময় কোমরের নীচে একরকম এলেবেলে চলা আবার উপরের অংশ বামে একবার আর ডানে একবার অশোভনীয়ভাবে দোলে ৷ নির্ভেজাল ছন্দোহীন চলায় কখনও স্মার্ট হওয়ার সুযোগ নেই ৷ চেহারায় বরাবরই একটা কিম্ভূতকিমাকার ভাব, কথা বলার ধরণে অকারণ তোতলামি, চোখের চাহনিতে স্পষ্ট বোকা বোকা ভাব ৷ কণ্ঠে পুরুষ-মহিলার স্বর একসাথে মিশ্রিত, দেহের চামড়ায় চৈত্রের ছাপ সবসময়ই; আবার সেকেলে জামা-কাপড় তাও শ্রীহীন পরিধান প্রক্রিয়ায় একেবারে যাচ্ছেতাই! এভাবে কী রোমান্টিক হওয়া যায়?
বিভৎস খায়েসের কেনো যে উদ্ভব হয় বুঝিনা ৷ তাছাড়া রোমান্টিক হতে হলে হৃদয়ে প্রেম ভালোবাসা এগুলোও থাকা বাধ্যতামূলক ৷ সেজন্যই যথেষ্ট বিপদ থাকা সত্বেও সদ্য বয়স্ক এক সন্তানের মা মোটামুটি সুন্দরী ডিভোর্স চল্লিশোর্ধ মহিলাকে অনেক কষ্টে প্রেমের প্রস্তাব আরেকজনের দ্বারা দিয়েছিলাম ৷ যিনি প্রস্তাবটি নিয়ে গিয়েছিলেন পরবর্তীতে সেই ভদ্রলোকের সাথেই ভদ্রমহিলার বিয়ে হয়ে যায় ৷ বেচারা ভদ্রলোক এখন আমাকে আর কথাই বলেন না ৷ এধরণের প্রস্তাব বোধহয় সরাসরি দেয়াই শ্রেয় ৷ কিন্তু সাহস হয় না ৷
আবেগিক ভাবনাগুলো একটু আধটু লেখার মাধ্যমেই প্রকাশ করার সুযোগ আছে বলেই হয়তো কিছুটা হালকা হতে পারছি ৷ বাস্তবিক রোমান্টিক সাজার কোনো সুযোগ বা সুবিধাই আর নেই ৷ এজন্যই ফেসবুকীয় রোমান্টিক সাজা ছাড়া অন্যকোনো পথও খোলা নেই ৷ এখানে সত্য-মিথ্যা, বাস্তব-অবাস্তব, সাদা-কালো মিলেমিশে একাকার ৷ কাজেই এ সুবিধাটুকু কাজে লাগায়ে যদি ‘রোমান্টিক’ হওয়া যায় তাহলে ক্ষতি কী !
বাসব রায়
৩ মার্চ, ২০২২ইং