একটি খোলা চিঠি (পর্ব-১)

Photo of author

By Mahbuba Akhter

(পাঠিয়েছিলাম আমার ভালোবাসার মানুষটিকে এক বছর আগে একটি খোলা চিঠি। তার ঠিকানা আমার জানা ছিলো না,’এফবি’কে দিয়েছি পৌঁছে দেয়ার জন্য। “এফবি”খুঁজে না পেয়ে আজ ফেরত দিয়ে বলেছে আরেকবার পাঠিয়ে দাও চিঠি তোমার বন্ধুকে। তাই ইচ্ছেকে সাথে রেখে আরেকবার পাঠিয়ে দিলাম)

(অনেক দিন ধরে ভেবেছি আমার প্রিয় বন্ধুটিকে চিঠি লিখে দেবো, বলে রাখবো কিছু না বলা কথা। এখন তো ডাকযোগে তেমন চিঠি চলাচল করেনা তাই খোলা চিঠি লিখে ছেড়ে দেয়ার ইচ্ছে, হয়তো কোনো একদিন, কোনো একসময় তার কাছে পৌঁছে যাবে। ইচ্ছে করলে পাঠক আপনারা কিছু উত্তর লিখে দিতে পারেন।’বন্ধু’ আমার ভাবনার মানুষ )

“প্রিয়বরেষু বন্ধু আমার”,
কেমন আছো জানিনা,যদিও জানার ইচ্ছেগুলো এখন তেমনভাবে নাড়া দেয়না।তবুও কেনো হঠাৎই তোমার অস্তিত্ব, তোমার স্মৃতি বারবার জানার ইচ্ছে জাগিয়ে তোলে কেমন আছো তুমি? কোথায় কিভাবে, খুব সুখে, অসুখে, খুব যত্নে, অযত্নে, খুব ভালো, মন্দে।

মাঝে মাঝে নিজের কাছে প্রশ্ন রাখি, আমাদের মধ্যে কী কোনো কাতর অনুনয়, কোনো বোধ, কোনো সুখ জাগানিয়া, বুকের নিতল গভীরে কোনো চিনচিন ব্যাথা,দীর্ঘশ্বাসের স্পর্শ অনুভব ছিলো? ছিলো কী পাওয়ার তীব্র দহন,ভালোবাসার ভুল বুঝাবুঝির খুনসুটি।

হয়তো সবই ছিলো, তা নাহলে এতো সময় গড়িয়ে যাওয়ার পর তোমাকে লিখতে ইচ্ছে হলো কেনো?

তোমাকে জানার, পাওয়ার আকুল প্রচন্ডতা কেনো বলো।

আজকাল ভাবনারা বড্ড এলোমেলো হয়ে গেছে আমার। তোমার কথা মনে হলে বেসামাল হয়ে যায় ইচ্ছের তাবৎ ঘরদোর,বিছানাপত্র,গৃহস্থালি।

জানালাগুলো খুলেই রাখি সকাল দুপুর, বিকেল, রাত অব্দি।কখনো নিজেই বন্ধ হয়ে যায়। পর্দাগুলো টানটান হয়ে থাকে।

বন্ধু আমার, আজ লিখতে ইচ্ছে করে তোমার কিছু ফেলে রাখা স্মৃতির চাদরে জড়িয়ে কিছু অনুপম মুগ্ধতার, সুখময় চমৎকার ভালোবাসার প্রিয় কথা।

সেদিন ছিলো পূর্ণ জোছনার জোয়ার, থৈ থৈ আলোর জল। তুমি দেখিয়েছিলে তোমার চোখে আমাকে আলোর স্নানের পূর্ণতা,ভাসতে শিখিয়েছিলে ঝিলিমিলি তারার আকাশে। রেখেছিলে পুরো বিশ্বাস গোপন সমর্পণে। আমার শ্বাস, চোখ,স্পর্শ,গুছিয়ে নিয়ে দেখিয়েছো অপার স্বপ্নের জলের ভাসান। বলেছো ভয় কী আমিই তো তোমার ইচ্ছের ঈশ্বর।

সকালের স্নিগ্ধ আলোয় দেখেছি তুমি রহস্যময় একটি অলৌকিক মায়ার বাগানে হেঁটে যাচ্ছো নক্ষত্রের সহস্র রুপোলী মেঘের পাটাতনে। হিম বরফে ডুবে যেতে থাকে আমার শরীর,বরফে আগুন জ্বেলে উষ্ণতা নিতে থাকি। আমি ক্লান্ত, বিষাদগ্রস্থ, আমি পেতে চাই তোমার আবাহন। চিৎকার করে ডেকে বলি প্রিয়তম মানুষ আমার তুমি ফিরে এসো,ফিরে এসো তোমার ভালোবাসার নির্সগে।তুমি অহংকারী ফিরিয়ে দিয়েছো আমাকে। আমার সমূহ আকুলতা, অপেক্ষা,তছনছ করে প্রত্যাখ্যান করেছো।

তারপর–গড়িয়ে গিয়েছে ঢের সময় হয়নি দেখা তোমার সাথে আমার,হয়নি কোনো বুঝাবুঝি, ভুলে গেছি লেনদেনের হিসেব নিকেশ।জলের সমুদ্রে ভেসে ভেসে অপেক্ষা করেছি অযুত,নিযুত, সহস্র কোটি দ্রাঘিমা।
আমি ঘর থেকে বেঘর হতে থাকি,ভুলে যেতে থাকি পুজোর সকল মন্ত্র।কষ্টগুলো আগুনের ফুল হতে
থাকে নিঃশব্দে ডুকরে কেঁদে যায়, আমি আমার আমাকে দাহ করি। শ্বাসে -প্রশ্বাসে শুধু তোমাকে
চাই। ঘুমে,স্বপ্নে,জেগে,শ্বাসে,প্রশ্বাসে রাখি পাওয়ার প্রণয় আবহে,আকাঙ্ক্ষার নির্মোহ,নির্লোভ আকুতিতে।

সুজন বন্ধু আমার, এখন সময়গুলো কারুশিল্পের মতো বুকের জমিনে কেটে কেটে বসিয়ে দেয় নানান ছাপ।কখনো চকিতে শুনি তোমার ডাক, বিস্ময়ে ফিরে দেখি তোমার মোহন আলোময় তোলপাড় করা সম্মোহনী দুটো চোখ। আমি ছুটতে থাকি তোমার চোখে চোখ রেখে মুগ্ধ হতে। হয়না আমার পাওয়া, তুমি বড্ড কৃপণ,দাপুটে অহংকারে ফিরিয়ে দাও আমার আমাকে।আমি পলে পলে মরে যাই তোমার অপেক্ষার প্রহর গুনে গুনে।

আমি তোমাকে পেতে চাই বন্ধু আমার, তোমাকে পেতে চাই,সহস্রবার মরে মরে শুধু তোমাকেই পেতে চাই।
আজ লেখার এখানেই ইতি টানছি প্রিয়তম বন্ধু আমার। ফেরত চিঠির অপেক্ষায় থাকি, থেকো ভালোবাসায় বন্ধু।

চলবে…