কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন সমুদ্র দর্শন (পর্ব-৬)

Photo of author

By Fatema Hossain

নাফ নদীর ঢেউ আর উড়ে চলা গাংচিলের অপার সৌন্দর্য দেখে গল্পে গল্পে এগিয়ে যেতে থাকলাম। বাচ্চারা খুব খুশি। ওদের কিশোর সুলভ আচরন নিয়ে মেতে উঠলো, সাথের কোনো কোনো সৌখিন ভাই ভাবি যাত্রীরা জাহাজের কিনারে দাঁড়িয়ে তখন টাইটানিক এর নায়ক নায়িকার রোজ আর জ্যাকের বিখ্যাত পোজে ছবি তোলাতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।

ওদিক থেকে আসা জাহাজ পাস করে গেল।আমি একযাত্রীর ফেলে রাখা প্রথম আলো পত্রিকা নিয়ে শব্দজট ছাড়ানোয় ব্যাস্ত হয়ে গেলাম।

কতক্ষণ হয়েছে জানিনা,আসেপাশের যাত্রিরা বলেউঠলো জাহাজ এবার সমুদ্রে নামছে।তারপর পরই বেশ দুলুনি অনুভব করলাম।উনি বল্লেন দেখ নদি ছেড়ে সমুদ্রে ভাসা শুরু করেছে, আর পানির রঙ দুই রকম! নদীর পানি নিল আর সমুদ্রের পানি ফেনাযুক্ত ধূসর সাদা!একটু ঘোলাটে।আমি অবাক বিস্ময়ে চেয়ে রইলাম!মুগ্ধতায় মনটা ভরে গেল। দূরে বার্মার (মিয়ানমারের) গাছপালা মাটি দেখতে পেলাম। অমনি প্রিয় সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্যপাধ্যায়ের লেখা বার্মার কাহিনি স্মৃতির পাতা থেকে এসে দু’চোখের পাতায় যেন ভর করলো!

এভাবেই একসময় জাহাজ যখন সেন্টমার্টিন এ এসে ভীড়লো তখন দুপুর শুরু হ’য়ে গেছে। বাইরে প্রচন্ড রোদ।জাহাজে উঠবার আগে যেমন অনেক টা পথ হেটে আসতে হয়েছিল তেমনি নামার পরও অনেক টা পথ হাটতে হল।পথের দু’ধারে ছোটো ছোটো অনেক দোকান। স্থানীয়রা নানাবিধ জিনিস এর পসরা সাজিয়ে বসে আছে। আমাদের অনেকেই দোকানপাটে ঢুকে যাচ্ছে দেখে ভাই এরা স্মরণ করে দিলেন খাবার জন্য হোটেল বুক করা আছে তাড়াতাড়ি না পৌঁছাতে পারলে খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে।তাড়া খেয়ে সবাই টমটম ধরতে এগিয়ে গেলে আমি আর উনি একটা দোকান থেকে উনার জন্য একটা হ্যাট আর আমার জন্য একজোড়া প্লাস্টিকের চপ্পল নিয়ে নিলাম কাদা-পানিতে নামার জন্য। আমরা পিছে পড়ে গেলাম। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে একটা টমটম পেলাম। সেটা ধরে হোটেলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।

একটা বেড়ার হোটেলে বাসের কন্ট্রাক্ট ছিল দুপুরের খাবারের। আমরা সেখানে পৌঁছে হাতমুখ ধুয়ে যে যার মতো খেতে বসে গেলাম।

এখানে একটা কথা বলার আছে। যাত্রার প্ল্যনিং এর প্রথম থেকে সাথে থাকা একটা প্রফেসর দম্পতি সবজান্তা ও স্বার্থপর আচরণ করে যাচ্ছিলেন।এখানেও তারা সবার আগে তাদের দুই বাচ্চাকে আলাদা খাবার খাওয়ালেন।অন্য বাচ্চারা না পেয়ে মন খারাপ করে রইল।এরকম কথা ছিলো না।সবাই একই রকম খাবার খাবে এরকম প্রস্তাব নাকি তাদেরই ছিলো। কিন্তু তারা সময়ে রং পাল্টে ফেললেন। আমাদের অন্যবাচ্চাগুলো ও আমরা ধৈর্য ধরে শান্ত থাকার চেষ্টা করলাম।

সৈকত কাছেই। তারও কাছে লেখক হুমায়ুন আহমেদ এর সমুদ্র বিলাস কুটির।এক্সাইটেড হয়ে রয়েছি কখন দেখবো। খাওয়া শেষে হেটে হেটে সমুদ্র বিলাসের পিছন দিক থেকে সামনের গেটে পৌঁছালাম।আবেগে উৎফুল্ল হয়ে গেলাম।কত কথা মনে আসতে লাগলো। পিছনে বাইরের কিছু অংশ নস্ট অব্যাবহৃত হয়ে পড়ে আছে। ভিতরে তো যেতে পারলাম না তাই গেটের কাছে দাঁড়িয়ে ভেতর টা যতটা দেখা গেল দেখলাম। রঙিন রঙিন কটেজ।গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম। তারপর এগিয়ে গেলাম প্রবাল দ্বীপের সৈকতের দিকে।চৈত্রের এই ভর দুপুরে মোহময়ী যেন ইশারায় তার কাছে ডাকছে আমাদের…

চলবে…

ফাতেমা হোসেন
২৪/৩/২২