
কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন সমুদ্র দর্শন (পর্ব-৩)

শুরুতে একটা কথা বলে রাখি। আমার শ্বশুর বাড়ি ঢাকায়,আর বাপদাদার বাড়ি কুস্টিয়ার মেহেরপুর। আর আমরা চট্টগ্রামে থাকতাম। ননদ ভাসুরেরা সবাই ঢাকায় থাকেন। তাই ছুটিছাটায় ঢাকায় আসতে হতো, আবার বাবার বাড়ি যাবার জন্যও ঢাকা হয়েই যেতে হতো। উনি যখন রেলওয়ে তে চাকরি করতেন তখন ফার্স্ট ক্লাস রিজার্ভেশন পাশ পেতেন বলে তখন সব সময় রাতে সাড়ে দশটার মেইল ট্রেনেই আসা-যাওয়া করতাম। তারপর চাকরি ছেড়ে দিলেন। এরপর ও দু’বছর পাশে ট্রেনেই আসা-যাওয়া করেছি।
তারপর থেকে ঢাকায় আসার সময় সকালের ট্রেনে আসি যাওয়ার সময় বিকেলের ট্রেনে। সুবর্ন ট্রেন চালু হবার পর আর কথাই নাই। সকাল আর বিকাল চালু আছে এখনো। উনি প্রয়োজনেও পারতপক্ষে বাসে উঠেন না।
আর যেদিন ঢাকায় আসার থাকে সে রাতে উনি একটুও ঘুমান না এবং সবাই কে আজানের আগে উঠিয়ে দেন, রেডি হবার জন্য। আর ট্রেন ছাড়ার অন্তত দেড়ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা আগে স্টেশনে পৌঁছে বসে থাকবেন সেও ভালো। এখনো ঐ নিয়ম চালু আছে। হাজার বুঝিয়ে শুঝিয়ে এমনকি রাগ করেও লাভ হয় নি।
তো সেদিন ও আটটার গাড়ি ধরতে আমরা ছটায় আগ্রাবাদ থেকে গরীবুল্লাহ শাহ মাজারে পনের মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম।আর অন্যদের জন্য কাউন্টারে বসে অপেক্ষা করতে থাকলাম।মোটামুটি সাড়ে সাত টার পরে একে একে পৌনে আটটা, কেউ আটটায় এসে পৌঁছালো।
কিন্তু বাস বাবাজির খোঁজ নেই।তিনি নাকি বিয়ের ট্রিপ নিয়ে কুমিল্লায় আটকে আছেন সেকথা অনেক বাকবিতন্ডার পর জানা গেল।এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলো না। কতৃপক্ষ একখানা মোটামুটি বাসের ব্যাবস্থা করলে বেলা দশ টা র দিকে আল্লাহর নাম নিয়ে কক্সবাজার রওনা হলাম। সব কাপলকে জোড়ায় জোড়ায় বসতে বলা হলে আমার আন রোমান্টিক হাসবেন্ড সদ্য তব্দাখাওয়া চেহারা নিয়ে আমার পাশে চুপচাপ বসে গেলেন।
বাচ্চারা যেহেতু নার্সারি ক্লাস থেকে বন্ধু, তাই তারা আব্দার করলো একসাথে বসার। তাদের আবদারে কোনো অভিভাবক ই আপত্তি করলেন না। অতিথি পরিবার গুলো আলাদাভাবে তাদের নিজস্ব গাড়িতে করে গিয়েছিলেন!
সেদিন রাস্তায় প্রচুর জ্যাম ছিলো। অনেক থেমে থেমে যেতে হচ্ছিল। এরমধ্যে বাসেই আমাদের মধ্যে নাস্তা বিতরণ করা হল। আমি ও ও অন্য ভাবিরা আলাদা আলাদা করে কিছু কিছু বাড়তি খাবার আনায় দেরি হলেও পেটপুরতি নিয়ে দুশ্চিন্তা কম হচ্ছিলো।
তারপর একসময় ফোর সিজনে যাত্রাবিরতিতে আমরা সবাই ফ্রেস হয়ে আরেকদফা নাস্তা, চা -কফি খেয়ে বাইরে একটু ঘোরাঘুরি করে হাত পা ঝাড়া দিয়ে আবারও বাসে উঠে বসলাম।
চলবে…
ফাতেমা হোসেন
৯ই মার্চ, ২০২২ইং