চিঠি

Photo of author

By Smaranika Chowdhury

বসে আছি আনমনে দুরন্ত দুপুরের রোদের চোখ রাঙা স্যাঁতসেঁতে ঘামানো কটু গন্ধে।

ডোর বেলের তীব্র শব্দে ঋষির ধ্যানমগ্ন জগৎ
থেকে এক ঝটকায় যেন বাস্তবের আস্তাকুঁড়ে
নিপতিত হলাম। অলস পা দুটো টেনে হিঁচড়ে
দরজা পযন্ত নিয়ে গিয়ে অবাক হয়ে গেলাম।

মধ্যে বয়সে নীলখামে চিঠি বহন করে এনেছে ডাকপিয়ন, আমার কাছে কোন এক আজনবীর পাঠানো চিঠি এগিয়ে দিয়ে যখন স্বাক্ষর চাইল,হাতের লেখায় চোখ পড়ে গিয়ে শরীরের কোষে কোষে শিহরনের মাত্রা বেড়ে গেল। ধাক্কাটা সামলাতে কিছুটা সময় নিলাম।এত বছর পরে এ কি বার্তা আমার জন্য নিয়ে এসেছে ডাকপিয়ন। পঁয়ত্রিশ বছর পরে ও হাতের লেখার একটুও পরিবর্তন হয়নি।সে রকম টানা টানা গোট গোট করে স্পষ্ট হস্তাক্ষরে আমার নির্ভুল নাম দেখতে পেয়ে হতম্ভব ভাবটা কাটিয়ে স্বাক্ষর করে চিঠি নিয়ে ডাকপিয়ন কে কিছু বকশিস দিয়ে বিদায় জানালাম।

চিঠি হাতে নিয়ে কতক্ষণ বসে ছিলাম জানিনা।চিঠি খোলার তাগিদ পাচ্ছি না মনের ভিতর থেকে। কি থাকতে পারে তা জানার ও ইচ্ছে করছে না।কি কারণে এতটা বছর পড়ে রণনের চিঠি লেখার প্রয়োজন পড়ল তা হৃদিতার কাছে অস্পষ্ট। সম্পর্কের যা কিছু একটু বাকি ছিল তাও ছিন্ন করে চলে এসেছে পঁয়ত্রিশ বছর আগে।

মা বাবার প্রতি প্রচন্ড অভিমানে সেদিন রণনের হাত ধরে এক কাপড়ে বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। শুধু সার্টিফিকেট ছাড়া আর কিছুই সেদিন হৃদিতা বাসা থেকে নিয়ে আসেনি। তার কাছে স্টাইফেনের কিছু টাকা ছিল।সামান্য পুঁজি নিয়ে রণনের সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্নে রিদিতা ঘর ছেড়েছিল।লেখাপড়ায় রণন কারো থেকে কম না।যেটা কমতি ছিল সেটা হলো রণনদের বংশ মর্যাদার অভাব। কিন্তু রিদিতার মা বাবা কিছুতেই দুজনের সম্পর্ক মেনে নিতে নারাজ। তাই সেদিন রাগ করেই ঘর ছাড়ল।রণন অবশ্য রিদিতার এই পদক্ষেপে খুশিই হলো।কারণ সে ও হৃদিতাকে ভীষণ ভালবাসে।

হৃদিতার হঠাৎ করে রণনের কাছে সেদিন চলে আসাতে অবশ্য বেকাদায় পড়ছিল রণন।কারণ সে মেসে থাকে। মাস দুয়েক বাকি আছে মাস্টার্স শেষ করার। এর মধ্যে হৃদিতা চলে আসাতে রণন মুশকিলে পড়ে গেল।এরপর আবার মেসে তো হৃদিতাকে রাখা সম্ভব না। কি করবে যখন চিন্তা করে কুল পাচ্ছে না তখন রণনের এক বন্ধু তার বোনের সাথে সাবলেট থাকার ব্যবস্থা করে দিল।

কয়েক মাস ভীষণ কস্টে দিন যাপন করতে হয়েছিল হৃদিতা রণনের। অবশেষে চাকরি পেয়ে দুজনের জীবনে স্বাচ্ছন্দ আসলো। দেখতে দেখেতে সাত বছর হয়ে গেল। তাদের ফুটফুটে একটা ছেলে হয়েছে। তখন পযন্ত হৃদিতার মা বাবা তাদের সম্পর্ক কে মেনে নেয়নি।দুজনে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু হৃদিতার মা বাবা এক কথায় জবাব দিয়েছে তাদের মেয়ে মরে গেছে। তাই হৃদিতা আর কখনো মা বাবার সাথে যোগাযোগ রাখে নাই।

রনন বেসরকারি একটি কোম্পানি তে ভালো পজিশনে আছে।হৃদিতা সরকারি কলেজের অধ্যাপক। সাত বছরের সংসার জীবনে দু জনের তেমন একটা ঝগড়া ঝাটি হয়নি বললে চলে। কিন্তু সুন্দর সংসারে সেদিন ঝড় উঠলো যেদিন হৃদিতার অন্য খানে পোস্টিং আসলো। রণন কিছুতেই রাজি না হৃদিতা অন্যখানে চলে যাবে। তাই বারবার চাকরি ছেড়ে দেওয়ার জন্য রণন হৃদিতাকে চাপ দিতে লাগলো। এক সময় ঝগড়া যখন তুমুল পর্যায়ে চলে গেল তখন হৃদিতা অনুভব করল তার শরীরে আর একজন শিশুর আবির্ভাব ঘটেছে।এই অবস্থায় সে কি করবে বুজে উঠতে পারছিল না। রণন সুখবর পেয়ে এবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল।সে কিছুতেই হৃদিতাকে চাকরি করতে দিবে না। হৃদিতা যখন স্থির করতে পারছিল না তখন বড় একটা অঘটন হৃদিতার জীবনে নেমে আসল।

সেদিন প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি হচ্ছিল।রণনের বারন সত্বেও হৃদিতা চার মাসের বাচচা পেটে নিয়ে কলেজে চলে গিয়েছিল। কারন সেদিন একটা জরুরি মিটিং ছিল।অবশ্যই সবাইকে মিটিং এ হাজির হওয়ার নির্দেশ ছিল।তাই হৃদিতার না গিয়ে উপায় ছিল না। সুন্দর ভাবে মিটিং শেষ করে যখন বাসায় রওনা দিল তখন হঠাৎ পা পিছলে হৃদিতা পড়ে গিয়ে মিসক্যারেজ হয়ে যায়। এই দুর্ঘটনার জন্য রণন কিছুতেই হৃদিতাকে মাফ করতে পারছিল না। ক্রমান্বয়ে দুজনের মধ্যে একটা দুরত্ব সৃষ্টি হতে লাগলো।

রণনের জগৎ সংসারে কেউ ছিল না। মা বাবা অনেক আগেই মারা গিয়েছিল। যখন রণন টুয়েলভ ক্লাসে পড়ে। চাকরি সুবাদে রণনের বাবা নিজের আত্নীয় স্বজন থেকে দূরে বাস করত।একটা মাত্র ছেলে রণন কে নিয়ে তাদের সংসার ভালোই কাটছিলো। কিন্তু হঠাৎ রণনের বাবা দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হলে সঞ্চিত জমা যা ছিল তা দিয়ে রণনের বাবা সুস্থ হতে পারল না। ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। রণনের মা সংসার সামলাতে প্রচুর পরিশ্রম করতে গিয়ে সে ও কঠিন অসুখে পড়ে গেল। ফলে মাস দুয়েকের ব্যবধানে রণন মা বাবা দুজনকেই অল্প বয়সে হারিয়ে ফেলল। আত্নীয় স্বজন তেমন কারো সাথে যোগাযোগ ছিল না বলে রণন খুবই বেকাদায় পড়ল। লেখাপড়া এবং সব কিছু সামলিয়ে চলতে রণনের প্রচুর ব্যাগ পেতে হলো।ভাগ্যিস মায়ের কিছু গয়না ছিল।রণন সে গয়না বিক্রি করে দিয়ে একটা মেসে উঠে গেল।সাথে কিছু টিউশনি জোগাড় করে ফেলল।এইভাবে পড়ালেখা করতে গিয়ে হৃদিতার সাথে ভার্সিটি তে রণনের পরিচয় হয়েছিল।

রণন যখন অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র তখন সেই ভার্সিটি তে হৃদিতা প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিল।বড়লোকের মেয়ে হৃদিতা রণন কে ভার্সিটির এক সাস্কৃতিক অনুস্টানে দেখতে পেয়ে প্রথম দেখাতেই রণন কে ভালো লেগে গিয়েছিল। এরপর হৃদিতা রণনের পিছে ঘুরতে ঘুরতে একদিন অনুভব করল দুজনেই পরস্পরকে ভীষণ ভালবাসে। তাইতো সেদিন হৃদিতা ঘর ছেড়ে আসার সময় একবারও মা বাবার আদর, ভালবাসা, সম্মান কোন কিছুর কথা চিন্তা না করে এক কাপড়ে ঘর ছেড়ে চলে এসেছিল।

আজকে রনণ অফিসে যাওয়ার আগে সামান্য একটা বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি করতে গিয়ে হঠাৎ রণন নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারল না।ঠাস করে গালে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে রাগে গজ গজ করতে করতে বলেছিল বেশি আস্কারা পেয়ে তুমি আজ আমাদের বেবিটাকে মেরে ফেলেছ। হৃদিতা রণনের এই অগ্নি মুর্তি দেখে এবং চড় খেয়ে সে কি করবে বুজে উঠতে পারছিল না। ধপ করে সে বিছানায় পড়ে রইল। তাদের চার বছরের ছেলেটি বাপের রাগ দেখে সোফার পিছনে গিয়ে লুকিয়ে রইল।

আজ কয়েকদিন যাবত রণন হৃদিতার ছেলে রাইয়ান মা বাবার ঝগড়া দেখে আসতেছিল।তাই সে বাড়িতে কিছুটা ভয়ের মধ্যে দিন কাটাতো।সারাক্ষণ গোমড়া মুখে মোবাইল স্কিনে চোখ রেখে ঘরের কাজের ছেলেটির সাথে সময় কাটাতো। কাজের ছেলেটা খুব যত্নের সাথে রাইয়ান কে দেখাশোনা করত। কিন্তু আজকের এই পরিস্থিতির জন্য রাইয়ান হৃদিতা কেউ প্রস্তুত ছিল না। রণন তার অপরাধের জন্য সরি না বলে গাড়ি নিয়ে অফিসে চলে গেল। এদিকে হৃদিতা সমস্ত অপমান সহ্য করে বিছানায় পড়ে রইল।

কতক্ষণ হৃদিতা এইভাবে বসেছিল মনে নেই। সম্বিৎ আসলো যখন তার কপোলে রাইয়ানের হাত পড়ল। ভয়ে ভয়ে রাইয়ান মাকে ডেকে বলল খাবে না মা। রাত হয়ে গেল।উঠো খেয়ে নাও।

হৃদিতা চোখ মুছে রাইয়ান কে খোলে নিয়ে চুমু খেয়ে বলল ক্ষিধে পেয়েছে তোমার। চলো কি খাবে বলো বানিয়ে দিচ্ছি।আশে পাশে কাজের ছেলেটা ছিল।মা ছেলের কথা বলতে শুনে বলল সে রান্না করে ফেলছে। টেবিলে বসে যেন খেয়ে নেয়।কারণ সকাল থেকে রাইয়ান না খেয়ে ছিল। এ কথা শুনার সাথে সাথে হৃদিতা বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসল।সে রাতে রণন বাসায় ফিরল না।

সেদিনের ঘটনার পর দুজনের মধ্যে যা একটু ভালবাসা ছিল তাও অভিমানের পাহাড়ে দিনের পর দিন একটু একটু করে দুজনে দূরে সরে যেতে লাগলো। হৃদিতা আগেই তার রেজিগনেশন উইড্রো করেছিল। তাই দু তিন মাসের জন্য পোস্টিং ক্যান্সেল করে সেই কলেজে নিয়মিত যাওয়া আসা করছিল। সেদিনের ঘটনার পর রণন কোনদিনই হৃদিতার সাথে কথা বলার চেস্টা করেনি। হৃদিতা ও নিজ থেকে এগিয়ে আসে নি কথা বলার জন্য।
দেখতে দেখতে পাঁচমাস হয়ে গেল।দুজনের মুখ দেখাদেখিও একসময় বন্ধ হয়ে গেল।রাইয়ান চারবছর পেরিয়ে পাঁচ বছরে পা দিল। আস্তে আস্তে পরিস্থিতির সাথে রাইয়ান ও মানিয়ে চলতে শুরু করল।

হৃদিতার স্পষ্ট মনে আছে। সেদিন প্রচন্ড ঝড় বৃস্টি হচ্ছিল। সেদিন যেন হৃদিতা মরন ঘুম দিয়েছিল। ঘুম থেকে উঠতে উঠতে অনেক বেলা হয়ে গিয়েছিল। সামার ভ্যাকেশন ছিল।তাই কলেজে যাওয়ার তাড়া নেই। ঘুম থেকে উঠে দেখে যে বেলা এগারো টা বেজে গেছে।তাড়াতাড়ি চুলটা বেঁধে বাথরুমে ঢুকে গেল। একেবারে স্নান সেরে বের হয়ে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে যখন ব্রেক ফাস্ট করার জন্য রাইয়ান কে ডাকতে শুরু করল দেখল কোন সাড়াশব্দ নেই ঘরের মাঝে।সারা বাড়ি খুঁজে রাইয়ান রণন কাজের ছেলে কাউকে দেখতে না পেয়ে হৃদিতা মনে মনে ভয় পেয়ে গেল।

সে আসলে খেয়াল করেনি।গ্লাস দিয়ে একটা খাম ডাইনিং এ চাপা দেওয়া ছিল। হঠাৎ মানুষ ভয় পেয়ে গেলে অনেক কিছুর উপর চোখ গিয়ে ও গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে না।হৃদিতার ও তা হয়েছিল।অনেক মাস পড়ে হৃদিতা রণনের মোবাইলে কল করতে শুরু করল।বারবার ফোনে একই কথা বারবার বাজতে লাগলো। এই মুহুর্তে আপনার ফোনটি বন্ধ আছে।প্লিজ কিছুক্ষণ পরে আবার ডায়াল করুন। কথাগুলো হৃদিতার কানে যাচ্ছিল না।সে বারবার ফোন করতে আছে।প্রায় ঘন্টা খানেক ফোন করতে করতে গলার পানি শুকিয়ে গেল।প্রচন্ড তৃষ্ণায় যখন জগ নিয়ে পানি খেতে গেল তখন খামটি হৃদিতার চোখে পড়ল। কিন্তু খামটি না নিয়ে দু গ্লাস পানি ঢক ঢক করে খেয়ে ফেলল।ততক্ষণে হৃদিতার শরীরে কাঁপন শুরু হয়েছে। কোনমতে খামটি নিয়ে সোফায় বসে পড়ে খামটি খোলতে শুরু করল।শরীরে আর একফোঁটা শক্তি ও ছিল না যে তাড়াতাড়ি খুলে পড়বে। কাঁপা হাতে আরও দেরি হয়ে যাচ্ছিল।খুলতে পারছিল না।অবশেষে খাম খুলে দেখতে পেল রণনের দু চার লাইন লেখা চিঠি টা বের হয়ে আসল। হৃদিতা পড়তে শুরু করল চিঠি টা।

আমি চলে যাচ্ছি রাইয়ান কে নিয়ে বিদেশে। কোন দেশে যাচ্ছি জানার প্রয়োজন নেই। কাজের ছেলেকে কয়েক মাসের বেতন দিয়ে বিদায় করে দিয়েছি। বাসা ভাড়া তিন মাসের দিয়ে গেলাম। আশা করি এর মধ্যে একটা ব্যবস্থা করে ফেলতে পারবে। তুমি তোমার কলেজ নিয়ে থাকো। আমি ফিরে আসবো ভুলে ও আশা করবে না। ভালো থেকো।

চিঠি পড়ে হৃদিতার মাথার উপর আকাশ টা যেন ভেঙে পড়ল। এতটুকু বুজতে দেয়নি রনন হৃদিতাকে। মানুষ এত নিষ্ঠুর হতে পারে জানা ছিল না। অথচ এই মানুষের জন্য আজ হৃদিতার সব থেকে ও কিছু নেই। নিঃস্ব হয়ে গেল হৃদিতা। পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পুরো একমাস সময় লেগেছিল।কাউকে কিছু জানাইনি। শুধু এপ্লিকেশন করেছিল হৃদিতা। যেখানেই পোস্টিং দিতে ইচ্ছুক কলেজের দিতে পারে। তার কোন সমস্যা নেই। কলেজ আমার এপ্লিকেশন দেখে একটু অবাক হয়েছিল বইকি। কিন্তু কোন প্রশ্ন না করে আমাকে পাহাড়ি এক কলেজে বদলি করে দিল।

পঁয়ত্রিশ বছরে নানা জায়গায় বদলি হয়ে এই অজপাড়াগাঁয়ে একটা কলেজের প্রিন্সিপাল হয়ে মোটামুটি ভালই আছি।নিজের কাজ নিজে করি।কাউকে সাহায্য করার জন্য রাখিনি। তার ও অবশ্য কারণ আছে। কেউ থাকলে তার উৎসাহ থাকবে আমাকে জানার।আমি কারো কাছে খোলা বই হতে চাই না। তাই এড়িয়ে চলতাম সবকিছু। শুধু কলেজ আর আমার ছোট্র বাসা ছাড়া খুব বেশি বের হতাম না।অবসরে বই পড়ে কাটিয়ে দিতাম।

নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে থাকাতে খুব বেশি অসুখ আমাকে কাবু করতে পারে নাই।অবশ্য খুব ভোরে মাঝে মাঝেই প্রকৃতির সাথে নিজেকে জড়িয়ে ধরার জন্য একটু দূরে পাহাড়ি এলাকায় সুন্দর ঝড়নার কাছে গিয়ে আনমনে অনেক কথার ছলে নিজেকে মেলে দিতাম। প্রকৃতিও অনেক সময় যেন আমায় মিস করত।যখন যেতাম গাছে গাছে ফিসফাস আওয়াজ এসে কানে কানে অনেক কথা বলে যেত।পাখিরা আনন্দে কিচিরমিচির করে আমাকে ভোরের গান শুনাতো।প্রজাপতি আমার চারধারে ঘুরে ঘুরে রঙিন পাখা মেলে নাচ করত।সেই অপরুপ শোভার টানে আমি ছুটে যেতাম প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়ার জন্য। অন্যান্য দিনের মতো আজকের দিনটি ও শুরু হয়েছিল একই নিয়মে।তবে শরতের কিছুটা গরম কিছুটা শীতের আমেজে শরীর টার মধ্যে ঋতু বদলের একটা আবহ শরীর কে যেন কাবু করে দিচ্ছিল। তাই দুপুরের কলিং বেলের আওয়াজ টা আমার মধ্যে বিরক্তিকর মনে হল।

চিঠিটা নিয়ে কতক্ষণ বসে ছিলাম মনে নেই।

এত বছর পরে রণন কেন চিঠি লিখল,ঠিকানা পেল কোত্থেকে সেই চিন্তা করতে গিয়ে মনের মাঝে একটা তীব্র অভিমান গুমরে উঠলো। রণন না হয় আমাকে ত্যাগ করেছে। কিন্তু রাইয়ান সে তো অনেক বড় হয়েছে।সে তো মায়ের খোঁজ নিতে পারতো।সেও মাকে ভুলে গেল তার নিষ্ঠুর বাপের মতো।হয়তো বিদেশের মাটিতে রাইয়ান একদম পালটে গেছে।যে ছেলে মাকে ছাড়া থাকত না তাকে নিশ্চয়ই আমার নামে বানিয়ে বানিয়ে নোংরা কথা বলেছে।তাই বড় হয়ে রাইয়ান মাকে ভুলে গেছে।

রাইয়ানের কথা মনে পড়তেই তাড়াতাড়ি চিঠি টা পড়তে শুরু করলাম।রণন এই চিঠিতে ও অনেক কঞ্জুসামি করেছে।তেমন কিছু লেখে নেই।শুধু ঢাকার একটা হোটেলের ঠিকানা দিয়ে লিখল বাংলাদেশে এসেছি আট দশদিন হলো। তোমাকে খুঁজে পেতে সময় লেগেছে।চিঠি পেয়ে এই ঠিকানায় চলে এসো।জরুরী কথা আছে।প্লিজ দেরি করো না।মোবাইল নাম্বার সাথে দিলাম।

চিঠি পড়ে কি করব বুজতে পারছি না।অভিমানি মন যেতে সায় দেয় না।এত বছর যে মানুষ একটু খবর নিল না। ছেলে কে নিয়ে আমার কাছ থেকে পালিয়ে গেল সে আজ ডেকেছে বলেই যে যেতে হবে এর কোন মানে নেই।হৃদিতা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো সে যাবে না।চিঠি টা জানলা দিয়ে বাইরে ফেলে দিল।কেনই বা সে যাবে।

অনেক আগেই রাত হয়ে গেছে।আজকে আর দুটো ভাত চড়িয়ে খেতে ইচ্ছে করছে না।বাসায় কলা আনা ছিল। কলা বিস্কুট খেয়ে হৃদিতা শুয়ে পড়ল। কিন্তু দু ঘন্টা ঘুমের সাথে আর মনের সাথে যুদ্ধ করে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে অন্ধকারে টর্চ নিয়ে হৃদিতা ফেলে দেওয়া চিঠি টা এনে আবার পড়তে লাগলো। কারণ রণন একটা কথা ও ছেলে কেমন আছে লিখেনি। মায়ের মন ব্যাকুল হয়ে গেল।অভিমান কে এক পাশে রেখে সে ব্যাগ গোছানো শুরু করল।সকাল বেলায় ঢাকার বাস ধরার জন্য সব গুছিয়ে নিল।সাথে কলেজের উদ্দেশ্যে একটা চিঠি লিখে জানিয়ে দিল ব্যক্তিগত কাজে দু চার দিনের জন্য সে ঢাকায় যাচ্ছে।চিঠি টা হৃদিতার বাসা থেকে দূরে থাকে এক ছাত্রের হাতে দিয়ে সব কিছু বুজিয়ে বলে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিল।

হৃদিতার ঢাকা পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় একদিন লেগে গেল। খুব ভোরে পৌঁছে গেছে বলে বাস কাউন্টার এ ঘন্টা দুয়েক বসে রইল।কারন এত ভোরে সে হোটেলে যেতে চাচ্ছে না। আবার রণন যে নাম বলেছে হৃদিতা সেই হোটেল চিনতে পারছে না। পুরো পঁয়ত্রিশ বছর সে এই ঢাকা ছেড়ে চলে গেছে। পথ ঘাটের ও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তাই ভালো করে সকাল হওয়ার অপেক্ষায় থাকল।এর মধ্যে মোটামুটি ফ্রেশ হয়ে গেছে।আলো ভালো করে ফুটলে কিছু একটা মুখে দেওয়ার চিন্তা করছে হৃদিতা। আসার সময় এত তাড়াহুড়ো করে এসেছে যে পথের জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসবে তা একদম মনে আসেনি।

একটা ছোট খাটো রেস্টুরেন্টে গিয়ে ব্রেকফাস্ট শেষ করলো।এবার রাস্তায় নেমে যখন সি এন জি ওয়ালাকে হোটেলের নাম বলল যাওয়ার জন্য তখন কেউ এত দূরে যাওয়ার আগ্রহ দেখালো না। হৃদিতা বড় রকম মুশকিলে পড়ে গেল। সাথে বেলা ও বাড়তে লাগলো। অবশেষে প্রায় দ্বিগুন ভাড়া দিয়ে একটা ক্যাব পেল।কি আর করবে।সে ক্যাব নিয়ে রওনা দিল হোটেলের দিকে। নানা চিন্তায় নানা ভাবনা হৃদিতা কে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। কেন এত বছর পরে তার কাছে রণন চিঠি দিল।সেই চিঠি চাইলে নাও পেতে পারত।কিন্তু রেজিস্ট্রি চিঠি বলে হৃদিতার কাছে দ্রুত পৌঁছাতে পেরেছে।এক একবার ইচ্ছে করছিল ফিরে যাওয়ার জন্য। কি দরকার জীবন সায়াহ্নে এসে কস্ট দেওয়া মানুষটার মুখোমুখি হওয়া। কিন্তু পরক্ষণে রাইয়ানের কথা মনে পড়াতে বুকের ভিতরে মোচড় দিয়ে উঠলো। এত দিনে ছেলে নিশ্চয়ই বিয়ে তা করে সংসারি হয়েছে। হয়তোবা দু একটা বাচ্চার বাবা সে।আজ পাশে থাকলে বাচ্চাগুলো নিশ্চয়ই ঠাকুরমা ডাকত।নানা কল্পনায় হৃদিতার চোখ লেগে আসলো।কতক্ষন ঘুমিয়ে ছিল মনে নেই ড্রাইভার এর ডাকে ঘুম ভাংলো।

হোটেলে পৌঁছে ড্রাইভার যখন খালাম্মা করে ডাক দিল হৃদিতা বুজতে পারছে না কোথায় আসছে। একটু ধাতস্থ হয়ে ব্যাগ থেকে চিঠি টা নিয়ে দেখল হোটেলের নাম ঠিক আছে কিনা।পুরোপুরি নাম মিলিয়ে দেখে ড্রাইভার কে টাকা দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে সোজা রিসেপশনে গিয়ে রণনের নাম বলাতে রুম নাম্বার জানিয়ে দেওয়া হলো। হৃদিতা সাথে সাথে রুমে না গিয়ে হোটেল লবিতে বসে নিজের সাথে আবার বোঝা পড়া করতে লাগলো। কিছুক্ষন কাটিয়ে সে রুমের দিকে পা বাড়ালো। লিফটে নাইন টিপে হৃদিতা অপেক্ষা করতে লাগলো। দশ তলার সিক্সটি ফোর বলেছিল রুম নাম্বার। লিফট থেকে বের হয়ে ডানদিকে মোড় নিয়েই দেখতে পেল রুম নাম্বারটি। রুমের সামনে গিয়ে আবার ইতস্ত করতে লাগলো। অবশেষে রুমে নক করল।

দরজা খুলতেই রণনকে দেখে হৃদিতা চমকে উঠল।কি সুপুরুষ ছিল রণন। কিন্তু তার গভীর চোখ দুটো ছাড়া শরীরের আর কোন অংশ রণনের বলে মনটা মানতে রাজি হচ্ছিল না।রণন স্বাভাবিক ভাবেই হৃদিতাকে ভিতরে আসতে বলল।যেন সে জানত হৃদিতা চিঠি পাওয়ার সাথে সাথে অবশ্যই চলে আসবে। ধীর পায়ে হৃদিতা ভিতরে ডুকে চমকে উঠল।অবিকল সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারি সেই ত্রিশ বছরের রণন যেন সোফায় বসে আছে। হৃদিতা কিন্তু ভালো করে খেয়াল করলে দেখতে পেত তার সামনে যে ইয়াং বয়সের রণন কে দেখতে পাচ্ছে তার হাতে খেলনা শোভা পাচ্ছে।সে একমনে তার খেলনা গুলো নিয়ে খেলা করে যাচ্ছে।

হৃদিতা রুমে ঢুকে রণন কে ঠিক চিনতে পারছে না। মনে হচ্ছে আশি বছররের এক বৃদ্ধ যেন হৃদিতার সামনে দন্ডায়মান। আর যে সোফায় বসে আছে সে অবিকল প্রথম দেখা বুদ্ধিদীপ্ত, চৌকস,সুন্দর যুবা পুরুষ রণনের মতো। আর একটু খেয়াল করলে হৃদিতা দেখতে পেত যুবা রণনের হাতে কিন্তু খেলনা শোভা পাচ্ছে।

আসলে হৃদিতা একটা ঘোরের মধ্যে আছে বলে দুজনকেই সে ভালো করে খেয়াল করে নি। অতঃপর রণন হৃদিতা কে বসতে বলে যেই কথা বলতে শুরু করল অমনি কাশির প্রকোপে কিছুই বলতে পারল না। হৃদিতা পাশের টেবিলে রাখা পানি নিয়ে তাড়াতাড়ি রণন কে দিল। পানি খেয়ে রণন একটু আতস্থ হলো।

হৃদিতাকে এক নজরে রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রণন এবার বলা শুরু করল।

আমাদের ছেলে রাইয়ান। সে শরীরে বড় হয়েছে। কিন্তু রাইয়ান কে যে বয়সে আমার সাথে বিদেশে নিয়ে গিয়েছিলাম তার বয়স সেখানেই আটকে আছে। হৃদিতা আর রণনের ছেলে রাইয়ান শুনার পর থেকে হৃদিতার কানে যেন আর কিছুই যাচ্ছিল না। হৃদিতা রাইয়ান কে জোরছে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরল।এতদিনের জমাট বাধা বুকের কান্না গুলো যেন আজ সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের মতো শব্দ করে যেন তীরে আঁছড়ে পড়তে লাগলো। রণন নিশ্চুপ অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে রইল।

ঘন্টা খানিক পড়ে একটু ধাতস্থ হয়ে হৃদিতা রণন কে কিছু না বলে শুধু থাকিয়ে রইল। এদিকে রাইয়ান কিন্তু হৃদিতাকে ছাড়িয়ে নিল না। সে তার মাথাটা হৃদিতার বুকের মধ্যে রেখে বসে রইল।

রনন এবার বলতে শুরু করল অপরাধী ভঙ্গিতে মাথা নিচু করে।

রাইয়ান কে যখন বিদেশে নিয়ে গেলাম কাজের চাপে প্রথম দু বছর তার দিকে খেয়াল রাখতে পারেনি।সে অনেক চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল। তেমন একটা কথা আমার সাথে বলত না। নিজের মধ্যে থাকতে পছন্দ করত।আমিও আর তেমন জোর করে রাইয়ান এর সাথে কথা বলতাম না। তাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু স্কুল থেকে একদিন আমার কাছে ফোন আসল। আমি সাথে সাথে স্কুলের প্রধানের সাথে কথা বলার জন্য স্কুলে চলে গেলাম। প্রিন্সিপাল সাহেব বললেন রাইয়ান স্কুলে মনোযোগী নয় এবং তার মধ্যে এখনো বাচ্চাদের আচার আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমাকে বলল তাকে যেন নিউরো ডাক্তার দেখানো হয়। সেদিন আমি স্কুল থেকে এসে জরুরি একটা কাজে খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। ভুলে গেছি রাইয়ান কে ডাক্তার দেখানো খুবই জরুরি। সেদিনের পর থেকে রাইয়ান আর স্কুলে যায়নি।ডাক্তার দেখানোর কথা মনে পড়ল পুরো একবছর পরে। তখন তার বয়স দশ বছর হয়ে গেছে। বিদেশে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে কিন্তু রাইয়ান একদিনের জন্যও তোমাকে খুঁজে নাই। কিন্তু তার চঞ্চলতা বেমালুম হারিয়ে গিয়েছিল।

ডাক্তার দেখানোর কথা মনে পড়ার সাথে সাথে সেদিনই আমি ডাক্তার এর কাছে নিয়ে গেলাম।কিন্তু ততোদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ডাক্তার বলল দুই থেকে ছয় বছরের মধ্যে মস্তিষ্কের বহুল মাত্রায় বিকাশ ঘটে নব্বই শতাংশের মতো। এই সময়ের মধ্যে, প্রতি সেকেন্ডে প্রায় দশ লক্ষ নিউরাল সংযোগ হয়।দক্ষ কার্যকারিতার জন্য একটা বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই সংযোগকারীতা হ্রাস পায়।এটাই হলো সেই সময়,যখন মস্তিস্ক তার ভিতরের জটিল নেটওয়ার্ক সংযোগগুলিকে পুনর্বিনাশ করে,যা পরবর্তী জীবনে কোন মানুষের উপলব্ধি, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা এবং সামাজিক দক্ষতা ইত্যাদি তৈরি হওয়ার নেপথ্যে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে। এই সময়ে বাবা মা’র সঙ্গে কথাবার্তা এবং তাদের শিশুদের যত্ন নেওয়াটা ভীষণ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক বিকাশের সাথে সাথে মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য শিশুর কতটা পুষ্টি প্রয়োজন তার দিকে ও সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

রাইয়ানের বেলায় আমার গোয়ার্তমি আজ রাইয়ান কে তার বিকাশের অন্তরায় সৃষ্টি করল। তার বিকাশ ততটুকুই রয়ে গেছে যতটুকু তে তাকে আমার সাথে বিদেশে নিয়ে গিয়েছিলাম। আমার ইগো তারপরেও তোমার সাথে যোগাযোগে বাধ সাধলো। অনেক চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু তবুও তোমার স্মরনাপর্ন হইনি।হয়তো জীবনের শেষ মুহুর্ত পযন্ত এইভাবে থাকতাম।কিন্তু বছর দুয়েক আগে হঠাৎ আমার ক্যান্সার ধরা পড়েছে। এখন লাস্ট স্টেজ। ডাক্তার বলেছে আমার হাতে সময় একদম কম। মাত্র ছয়মাস বাঁচব। আমি মারা যাওয়ার পর রাইয়ান কার কাছে থাকবে এই চিন্তা মাথায় আসার পর থেকে তোমার সাথে যোগাযোগ করার জন্য গত এক মাস হন্য হয়ে তোমাকে খুঁজে বেড়িয়েছি। অবশেষে তোমার ঠিকানা পেলাম। সরাসরি যাওয়ার সাহস হয়নি। তাই চিঠি দিয়ে জানালাম।

এখন তুমি রাইয়ান কে নিয়ে গেলে আমি শান্তি তে মরতে পারব।হৃদিতা এতক্ষন একটা কথা ও বলল না।সে এই পরিস্থিতিতে পড়বে কল্পনা ও করতে পারেনি। তার নাড়ি কাটা ধনকে সে এই অবস্থায় ফেলে যেতে পারে না।আজকে রাইয়ানের এই অবস্থার জন্য সেও কম দোষি নয়। সে যদি সেদিন রণনের সব কথা শুনে চাকরি টা তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিত তাহলে রাইয়ানের এই অবস্থা হতো না। তাই হৃদিতা ও সমান দোষী। আজকে দুজনের ইগোর খেসারত দিচ্ছে রাইয়ান। কথা বলতে বলতে বিকাল হয়ে গেল।হৃদিতা বুজতে পারলো আজ ফিরতে পারবে না। তাই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।তাতে জার্নির ধকল টা ও যাবে। একই রুমে থাকবে হৃদিতা চিন্তা ও করতে পারলো না।যদিও তাদের ডিভোর্স হয়নি তবুও হৃদিতা রিশেপসনে গিয়ে নিজের জন্য আর একটা রুম বুক করল। রাতের বেলা রণন ডিনারের অর্ডার দিয়ে দিল। আট টায় ডিনার শেষ করে রাইয়ান এর কাছে গিয়ে হৃদিতা বলল চলো আজ তুমি আমার সাথে থাকবে।

রাইয়ান যদিও মা হিসেবে হৃদিতাকে ভুলে গেছে তবুও কোন উচ্চ বাচ্য করলো না। হৃদিতার পিছু পিছু অন্য রুমে চলে গেল। সারা রাত হৃদিতা ঘুমাতে পারলো না। রাইয়ানের মাথায় হাত ভুলাতে ভুলাতে ভোরের দিকে একটু চোখ লেগে আসলো। চোখ খুলে দেখে সাতটা ভেজে গেছে। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে রাইয়ান কে ও ফ্রেশ করিয়ে রণনের রুমে গিয়ে দেখে যে রণন এর মধ্যে রাইয়ানের কাপড় চোপড় সব কিছু ঘুচিয়ে রেখেছে। হৃদিতা আর কিছু বলল না। ব্রেক ফাস্ট শেষ করে রাইয়ান কে সাথে নিয়ে রওনা দিল।

রুম থেকে বের হওয়ার সময় পাপাকে বাই দিতে বলল।রাইয়ান ও বাবা কে বাই দিয়ে মায়ের হাত ধরে বের হয়ে গেল। কোন কথা রণনকে বলার নাই। হৃদিতা তাই ধীর পায়ে রুম থেকে বের হয়ে হোটেল লবিতে এসে কিভাবে ক্যাব পাওয়া যায় তা রিসেপশনে জিজ্ঞেস করল।হোটেল পক্ষই ক্যাব ঠিক করে দিবে বলে আধা ঘন্টা অপেক্ষা করতে বলল।হৃদিতা রাইয়ান দুজনে বসে লবিতে আস্তে আস্তে কথা বলতে লাগলো।

কথা বলতে বলতে হৃদিতার কিছু একটা মনে পড়ে গেল। সে রাইয়ানকে সঙ্গে নিয়ে রণনের রুমে গেল। কোন ভনিতা না করে হৃদিতা রণনকে বলল চলো আমার সাথে। এই ছয় মাস তুমি আমি রাইয়ান এক সাথে থাকব।দেখি যদি এই ছয় মাসে রাইয়ানের কিছু অগ্রগতি হলে নিজেদের অপরাধ একটু কম হবে মনে করব।

স্মরনিকা চৌধুরী
১১/২/২২ইং