Category: Poems

  • আমি আর নিস্তব্ধতা

    আমি আর নিস্তব্ধতা
    দুজন পাশা পাশি বসে
    দুজনেই চুপ
    তবুও যেন মনে মনে কথা হচ্ছে
    আওয়াজ বিহীন কথা
    শুনছি দুজনে মনে মনে
    প্রকাশের শব্দ তুলে নয়
    অজান্তে ফিসফিসিয়ে…

    তাকিয়ে রই দূর পানে
    নদীর কলতানে দুই কুল যেন বিমোহিত
    তাদের নেই কোনো দুঃখ
    নেই কোনো শূন্যতা
    আছে শুধুই পাড়ের সাথে
    ভাঙা গড়ার করুন খেলা…
    এ তো দেখি আমার চেয়েও বেশি দুঃখের মেলা…
    অজান্তেই হাসি নিস্তব্ধতা কে পাশে রেখে।

    দীর্ঘশ্বাসে আবার বুক ভরিয়ে ফেলি
    নিস্তব্ধতা কে বলি,কথা বলতে
    তার নিস্তব্ধ হওয়ার কারন শুনতে চাই
    কিন্তু সে তো বোবা তার মুখে কথা নাই
    তাহলে কি জানা হবে না এর কারন
    নাকি শুধুই আমাকে বলতে বারন
    তার নিস্তব্ধতার কারন…..।

    আমিও চুপ রয়ে যাই
    নিশ্চুপ শিহরনে কালো ছাঁয়া দেখতে পাই
    হঠ্যৎ পাশ ফিরে তাকাই
    কিন্তু কই, কেউ তো আমার পাশে নাই
    তাহলে আমি অজান্তেই কাকে দেখতে পাই
    নাকি নিস্তব্ধতার নীল আত্মার
    ব্যথার উড়ন্ত মনের কল্পনার পোড়া ছাই….।

    আমিও আজ নিস্তব্ধতার পাশেই রয়েছি
    আমিও আজ বেঁচে থেকেও ছাই হয়ে গেছি
    অস্তিত্বহীন নির্বাক এক জীবন্ত পাখি
    শূন্যতা,একাকিত্ব,নিস্তব্ধতার সাথি হয়ে
    রয়ে যাবো হয়তো একলা ভুবনে তাদের হয়ে
    থাকবো পরে একা শূন্যতা কে নিয়ে
    নিস্তব্ধতার শহরে
    যেখানে আমি একাই জেগে রবো
    প্রতি প্রহরে প্রহরে…..

  • শুধু

    সেই শৈশব পেড়িয়ে এলো দূরন্ত কৈশর।
    দেখা হল নীল ক্যাফে কাব্যের সাথে,
    দেখতে দেখতে ১৭ বছর!
    আজও গোধুলিতে একাকার সময়ের টিপ।
    এরপর কালবৈশাখী প্রলয়,
    অশান্ত বিকেল,রোদেলা দুপুর
    কোথায় যে হারিয়ে গেলে?

    এরপর সাধনা, আরাধনা,
    কলমের দিক্ষা, ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে সময়,
    কালের আবর্তন,
    নির্যাতন, নির্যাতন আরো কত কি!
    সেই তুমি, সেই নদী,।

    নগর জীবনের কোলাহল,
    সেই স্বপ্ন, সেই কাব্য, সেই নীল ক্যাফে
    কথা হল প্রকাশকের সাথে,
    কথা হল, প্রকাশিত হল,
    কবিতা হল, বই হলো,
    বই মেলায় একে একে চারটা বই হল,
    কবিতা কিন্ত হল না,
    হল না ছন্দ,হল না আনন্দ।
    হল সৃষ্টির উল্লাস,
    সে কি উল্লাস? বাঁধ ভাঙ্গা উল্লাস
    হলে না শুধু তুমি??

  • পঞ্চমত

    এক
    মই বেয়েছ তুমি
    তুলে দিয়েছে সে
    উপরে উঠে ধরনী পাওনি
    দায়ী তবে কে !?

    দুই
    রব তুলে সব করেছ
    নীরবে এখন সটকে গেছ
    ঘোলা জলে শিকার হয়নি
    লজ্জায় আর ফিরে সমর্পণ!

    তিন
    উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম
    সব ছিলো দখল
    উপরওয়ালার নীচের খেলা
    এখন সব বেদখল!

    চার
    তুমি ভাবো ভাজা মাছ
    খেতে দেখেনি কেউ
    আসলে ভাই মাছের কাঁটা
    ছড়ানো দেখেছে ফেউ!

    পাঁচ
    খোলস বদলে যতই কর ডন্ডামি
    জাতি এখন সবজান্তা বুঝলানি
    সময় আছে সিধে হও এখনি
    না হলে খেতে পার জাতীয় প্যাদানি!

  • থেকে যাও না প্রিয়

    হয়তো তুমি,নয়তো কেউ না
    তবুও থাকো না পাশে আমার
    ছাঁয়া না হলেও অনুভবে
    আলতো পরশে মন পবনে ছুঁয়ে যেও
    মিশিয়ে নিবো অস্তিত্ব শহরে
    পাবো না জানি তবুও ভাববো আছো আমার
    খুব ছোট করে চাইবো বার বার
    তবুও থেকে যাও না আমার…

    হঠাৎ হঠাৎ ভাববো তোমায় নিয়ে
    সময় গড়ালে বসে অসময়ে
    ভেবো না,ভাববো বলে ভালোবাসি
    ভালোবেসেছি বলেই তোমায় ভাবি
    এ ভাবনার নেই তো কোনো অন্ত
    ছোট্ট মনের শেষ প্রান্তে
    তোমার প্রেম সূর্য যাবে অস্ত…

    শোন প্রিয় আবার তোমায় ভাবি
    থেকে যাও না অনন্তকাল ধরে
    ভাবনার জগতের নিকুঞ্জের গভীরে
    সুভাসের আলোয় মাতাল সেই বনে
    আসবো,বসবো পাশে,বলবো তোমায়
    দেখবো তোমায় প্রেমের আলোয়
    থেকে যাও না প্রিয়…

    চাই না তো আমি আর কেউ থাকুক
    তুমি নয়তো কেউ না
    কতো আকুতি থেকে যাওয়ার
    ছলছল নয়নে গভির দৃষ্টিতে কি বুঝো না
    রেখে দিবো প্রিয়,তেমনি করে
    যখন এসেছিলে প্রেম নিয়ে
    মনের দুয়ারে বসন্তের প্রথম প্রহরে…
    থেকে যাওয়া প্রিয়…

  • সুখের আশায়

    মাঝে মাঝেই কেনো এমন হয়
    দুঃখ গুলো নেমে আসে মনের ঠাঁয়
    কষ্ট গুলো দুমড়ে মুচরে দেয় ভেতরটায়
    মাঝে মাঝেই কেনো এমন হয়?

    আমি বার বার ব্যর্থতা কে মেনে নেই
    তবুও কেনো কালো আঘাতে জর্জরিত হই
    আশার প্রদীপ নিভু নিভু করে
    দমকা কালো হতাশার বাতাসে
    মাঝে মাঝেই কেনো এমন হয়?

    আমি আবারও ভাবি দুঃখ কে নিয়ে
    দূরে সরিয়ে একলা হয়ে শূন্যতা কে নিয়ে বাঁচতে
    তবুও চাই দুঃখরা দূরে থাকুক
    কেনো আবার কাছে আসে মনের অসুখে
    আবারও জড়াই নিজেকে দুঃখে
    কাঁদো কাঁদো দুঃখ ভরা মনে নিজেকে
    ভালো রাখার বৃথা চেষ্টা
    মাঝে মাঝেই এমন হয়।

    এই মাঝে মাঝেটাই কেনো জানি
    হঠাৎ করে জীবন ছেয়ে দেয় হতাশার মেঘে
    নিরাশার বাতাসে ভাসায় যতো মনের আবেগ
    ইচ্ছে গুলো শুকনো পাতার মতোন
    হাওয়ায় উড়তে থাকে
    ধুলো কনায় মিশে নিজেকে লুকিয়ে রাখে
    কেনো এমন হয়?

    তবুও আমি এই মাঝে মাঝে আসা দুঃখ কে
    আগলে রাখি,ধরে রাখি বাঁচিয়ে রাখতে
    দুঃখের আড়ালে সুখেরা থাকে বলে
    পাবো না জানি,তবুও আাশায় বাঁধি বুক
    একদিন হয়তো পাবো দেখা আমি
    শত আশায় বাঁচিয়ে রাখা সেই সুখ,,,।

  • এভাবেই হয় ভালোবাসা

    সুন্দর সকালে
    সময়টা বেশ
    তুমি এসে ভরে দিলে
    রয়ে গেলো রেশ।

    মোহনীয় ভংগিতে
    তাকালে যে তুমি
    লজ্জায় লাল হয়ে
    মরে গেছি আমি।

    তুমি কি লজ্জা
    পাচ্ছোনা বলো
    দু’চোখের চাহনিতে
    সব এলোমেলো।

    ভালোবাসা এইভাবে
    আসে বুঝি হায়
    কথা না বলেও
    তো ভালোবাসা যায়।

    প্রতিদিন দেখা হয়
    কথা হয়না
    বলতে চাই যে
    সাহস পাইনা।

    কেমন লাজুক চোখে
    দেখো যে আমায়
    চুপ করে যাই আমি
    মন হেসে যায়।

    তুমি তো আমার তুমি
    কবে যে হবে
    মনের বাড়িতে
    কি সাথে মোর যাবে?

  • কখনো অজন্তা কখনো ইলোরা

    …এবং অন্ধকার ছিলো নিরাকার ছিলো,
    ছিলো অচেতন
    ছিলো অনন্ত চির শান্ত অক্লান্ত অন্তঃসলীলা
    ফল্গুধারা মন!

    একে একে এঁকে বেঁকে এসেছিলো তপোবন, বোধিবৃক্ষ, গুহা
    করোটি পাহাড় গলগথা,মরীচিকা বালিয়াড়ি
    বলেছিলো মন্ত্রমহা!

    যখন মন যা বলেছে তখনই ডেকেছে
    সেই নামে ওরা
    আমিও তেমনই ডেকেছি তোমায় কখনো অজন্তা, কখনো ইলোরা!

    …এবং নিষেধ ছিলো, ভেদ ছিলো,
    ছিলো জেদ অবাধ্যতা
    পোড়ার ভয় ছিলো, তবু ছিলো আগুনেই
    হাত দেবার বারতা!

    ছিলো কোজাগরী ছিলো অপ্সরী মদালসা
    লাস্যময়ী আহ্বান
    পাথর ঘষা জীবন ছিলো, শাখা লতায় বাঁধা ছিলো তীরধনুকের প্রাণ!

    এক নামে নয়, হাজার নামে ডেকেছিলাম,
    জানে এই মন তা
    এই তুমি-ই বঁধু নিশিকালের ইলোরা, আমার দিবসবেলার অজন্তা!

    …এবং বারে বারে ইমন কল্যাণে
    মেঘমল্লারে সুরে সুরে
    ডেকেছিল পর্ণ কুটিরে প্রাসাদ প্রাঙ্গণে
    অন্দর অন্তঃপুরে!

    চাঁদ ডোবা আঁধার সভায় এসেছিলে
    অপরূপ শোভায়
    বলেছিলে, ‘তুমি কোথায়?’ আমিও বলেছিলাম,
    ’তুমি কোথায়?‘

    চারিদিকে প্রাণ ছিলো, প্রেম ছিলো, আনন্দালয় ছিলো আলো ভরা
    মাথা তুলে চোখ মেলে দেখেছিলাম কখনো অজন্তা, কখনো ইলোরা!

  • মানুষ খুঁজি

    আমি এখন মানুষ খুঁজি
    মনে মনে মানুষ খুঁজি
    দিন চলে যায় রাত কেটে যায়
    ভোরের আলো ফোঁটার সময়
    তখন আমি মানুষ খুঁজি।

    দিনের আলোর সবুজ পাতায়
    কাদামাটির খেলার মাঠে
    বাঁশের ঝাড়ে খোলা হাওয়ায়
    শুধুই আমি মানুষ খুঁজি।

    রাতের তারায় চাঁদের আলোয়
    বনের মাঝে, নদীর পারে
    দিগন্তের ঐ সেই সুদুরে
    আমি এখন মানুষ খুঁজি।

    পথের কাছে, গাছের কাছে
    বিষন্নতার সেই বাতাসে
    পাখির কাছে, মাছের কাছে
    আমি তবু মানুষ খুঁজি।

    জলের ছায়ায়, রোদের কাছে
    সবুজ ঘাসের সেই শিশিরে
    কচুপাতায়, লেবু পাতায়
    এখন কেবল মানুষ খুঁজি।

    বটের কাছে, আমের বনে
    ধান বাগানের বিশাল ঢেউয়ে
    কাশবনের সেই শুভ্র সাদায়
    আমি এখন মানুষ খুঁজি।

    পাল তোলা সে নাউয়ের কাছে
    কচি পাতা লাউয়ের ডগায়
    কিচিরমিচির চড়ুই পাখি
    ওদের কাছেও মানুষ খুঁজি।

    মানুষ কেবল খুঁজেই বেড়াই
    আসল মানুষ কোথায় যে পাই
    প্রাণ হারিয়ে যায় যে দুরে
    তবু আমি মানুষ না পাই।

  • শেষ বিকেলের তুমিটা

    আমি যখন দাড়িয়েছি দিনের শেষটায়
    সূর্য ঢলে যাওয়ার ঐ পশ্চিমাকাশের দিকে মুখ ফিরিয়ে
    ঠিক তখন অনুভুতির দেয়াল ঘেষে তুমি দাড়ালে
    অদৃশ্য এক অনুভূতির শিহরণ বয়ে গেলো
    অস্তিত্বহীন এক নির্বাক তুমি নামক আলোর ঝলকে
    অন্তর দেশ ভুকম্পিত হয়ে কেঁপে গেলো
    হৃদয় জুড়ে হঠাৎ তোমার নামে ভাবনারা জেগে উঠলো…

    ভাবান্তর মনে সোনালি আলোর দিকে তাকানো
    তোমাকে আলোর পরে আলো করে খুঁজে পাওয়া
    কিন্তু আলোর রশ্মিতে তুমি নেই
    তুমি যেন আজ সূর্যের ও পিঠে চলে গেছো
    তপ্ত আলোয় নিজেকে আড়াল করে রেখেছো।

    কিন্তু কেনো?
    তুমি কি তাহলে শুরুর আমিটা তে ভুলের আভাস পেয়েছিলে
    নাকি এই শেষ বিকেলের তুমিটা হারাবে বলে
    মিথ্যা অজুহাতের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে নিলে?
    প্রশ্ন জাগে মনে,অযথা নয়
    বার বার জানার চেষ্টায় মন জেগে রয়
    এ কেমন তুমি,বোবা প্রেমের নির্বোধ,পঙ্গু পাখি
    উড়তে জানো না,তবুও কেনো আড়ালে লুকাও
    কখনো কি মনের টানে হৃদয় দিয়ে আমাকে চাও?

    তবে কি জানো,আজও আমি শেষ বিকেলে
    তোমার অপেক্ষায় ঐ সোনালি রশ্মিতে নিজেকে রাঙাই
    আলোর পরশে পরশে তোমাকে অনুভবে খুঁজে যাই
    ক্ষনিকের তরে নয়,ক্ষনস্থায়ী করে নিতে চাই
    যদি একবার হঠাৎ তোমাকে পেয়ে যাই।
    সকল ভুল ভ্রান্তির দেয়াল তুলে দিয়ে
    আবারও তোমাকে চাই আমি শেষ বিকেলটায়।

    ✍️ কামরুন্নাহার বীথি

  • সুখের সিক্ত উন্মোচন

    দুদণ্ড সুখের আশায়
    সুবাস খুঁজি তোমার বুকের
    নিছক আনমনে অসহায় হয়ে,

    তুমি হাত বাড়িয়ে দাও
    ছায়ার আবেশ হয়ে
    অমোঘ প্রশান্তি যায় বয়ে।

    জীবন সংগ্রাম আর সংঘাত পেড়িয়ে
    শ্রান্তির ধকল ঝেড়ে নিতে
    তোমার উষ্ণতা বড়ো প্রয়োজন,

    আমি অসম্পূর্ণা রয়ে যাই
    বিরহ বিধুর হয়ে
    সাজে নয়নে নব আয়োজন।

    বসন্তের প্রথম প্রভাতে
    যে বাঁশি বেজেছে মিহি সুরে
    আড়ম্বর ভালোবাসা লয়ে,

    দিগন্ত হেরিয়া তারে
    করেছি বক্ষে ধারণ
    তটিণী-র হিল্লোল বায়ে।

    নয়ন মিলনে বিশ্বছন্দ
    অনুবর্তনে পূর্ণ হলো
    হৃদয়ের পূর্ণতা পেয়ে,

    সুখ উন্মোচনে কদম্ব ঝরে
    শিশির সিক্ত চরণ চুমে
    প্রেমের অলিগলি বেয়ে।