বৈদ্যুতিক সার্কিটে কোথাও একটা গোলযোগ, বার বার কারেন্ট চলে যাচ্ছে। আমার মত অসুস্থ মানুষেরা ঘুমাতে পারছে না।
কোন কোন মানুষের জীবন এক চক্রব্যূহের ভেতর দিয়ে আবর্তিত হয় ।বার বার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। মনে হয় অলক্ষ্য থেকে কেউ যেন তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
আবার কেউ কেউ কেবলই হাসি, গান আর আনন্দে গা ভাসাচ্ছে। জীবনের এসব হিসেব মিলানো মুশকিল।
চারিপাশের হাজারো ভালো মানুষ কষ্ট গোপন করে সুখে আছে আবার আপাত দৃষ্টিতে খারাপ মানুষেরা বাস্তবিক অর্থেই সুখে আছে।
অর্থ, বিত্ত, ক্ষমতা আর সুখ মোটেও সমার্থক নয় বরং এক ধরনের কাঙালিপনা যত পাই ততো চাই।
মাদাম টেরেসা নাকি আশ্রমের সবাইকে বলতেন দুঃখ-কষ্ট, শারীরিক অসুস্থতা মানে পাপ ক্ষয় । আর কত পাপ ক্ষয় হতে বাকি আছে আমার !
মেডিটেশন করে করে মনকে শান্ত রাখার চেষ্টা করি, নিজে নিজেকে সান্ত্বনা দেই । মেডিটেশন ফলপ্রসূ হওয়ার মুল মন্ত্র হচ্ছে স্বচ্ছতা। প্রতিদিন একটু একটু করে নিজেকে ভালোর থেকে ভালোর দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
নামাজ সবচেয়ে উত্তম মেডিটেশন। মুসলমানদের বলা হয় সঠিক নিয়মে সালাত আদায় কর। সালাত মানে কেবলই নামাজ নয়, সালাত হচ্ছে পরিপূর্ণ জীবন বিধান। অর্থাৎ সমস্ত মিথ্যা, অন্যায়, অপরাধ থেকে নিজেকে দূরে রাখা । অপরের বিপদে সামর্থ্যের মধ্যে সাহায্যের হাতকে প্রসারিত করা।
তাহাজ্জুদের নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। সেই সময়ে অর্থাৎ ভোর বেলা আলো ফোঁটার আগে প্রকৃতি ভীষণ শান্ত থাকে। সেই সময় মন থেকে যা চাওয়া যায় তাই নাকি পাওয়া যায়।
তবে সব ধর্মে, আধ্মাত্মিকতায় এই সময়ের গুরুত্ব অপরিসীম।সব ধর্মে আরেকটি কমন বিষয় হচ্ছে উপবাস এবং ধ্যান, যা আমাদের ধর্মে রোজা এবং নামাজ ।
৬ বছর বয়স থেকে আব্বা-আম্মা তো এসবই শিখিয়েছেন । কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেকে স্রস্টার হাতে সঁপে দিয়েছি সেই কবেই।
সবসময় ভাবি সুস্থ হলে প্রতিদিন তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ব, খাদ্যাভ্যাসে একেবারে ভিগান হয়ে যাবো (প্রাণীজ প্রোটিন বাদ)। রবি শঙ্করজির প্রাণায়াম দিয়ে শুরু করবো হরদিন।
ভিগান মূলত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য । কিন্তু কনসেপ্টটা আমার ভালো লাগে। তাছাড়া বর্তমান বিজ্ঞান বলছে শরীর আর মনের জন্য ভিগান হওয়া জরুরী।
কারণ পশু নিধনের সময় ওদের শরীর থেকে আতঙ্কে যে বিষক্রিয়া হয় তা নাকি শরীরের সাথে সাথে আমাদের মনকেও প্রভাবিত করে। আমাদের ধর্মে শুকর খাওয়া হারাম আর সনাতন ধর্মে গরু । কিন্তু দুটোই শরীরের জন্য খারাপ।
পৃথিবীর সমস্ত ডাক্তাররা রেড মিট খেতে নিষেধ করেন।
চাইনিজদের একটি উৎসব হয় যেখানে ওরা কুকুর মেরে খায় । অথচ ইউরোপ, অ্যামেরিকা, ক্যানাডায় ওরা কুকুরকে বিশ্বস্ত সহচর মনে করে।
চাইনিজ, কোরিয়ান, জাপানিজ সহ সমস্ত মংলয়েডদের পছন্দের খাবার হচ্ছে কুকুর। ক্ষেত্র বিশেষ ওরা জীবন্ত কুকুরকে থেতলে থেতলে নরম বানায় তারপর রান্না করে খায় । অনেকে আবার জীবন্ত কুকুরকে গরম পানিতে ফেলে সিদ্ধ করে খায় । আহাঃ কি বীভৎস !
তবে স্রস্টাকে এক নাগাড়ে দোষারোপ করা বোধ হয় উচিত হচ্ছে না।
২০১২র ফেব্রুয়ারি মাসে আমার স্বামী ডাঃ জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকুর মৃত্যুর পর থেকে ৪ বার স্বপ্নে দেখেছি আমার ক্যান্সার। শেষবার দেখেছি ৬ মাস আগে। তবে কি এই অসুখটা আমার জন্য পূর্ব নির্ধারিত, তিনি কেবল আমায় সতর্ক করতে চেয়েছেন ।
গত জুন মাস থেকে চিন্তিত ছিলাম আজিজের ভাইয়ের কেরোটিড বডি আরটারির টিউমার যা কোটিতে একজনের হয়, তাঁর অপারেশন নিয়ে। ভয় আর দুশ্চিন্তায় আজিজকে বকে যাচ্ছিলাম ক্রমাগত। ৫ বছর আগের টিউমার আমায় এতদিন পর জানালে কেন ? যদি ক্যান্সার এসে বাসা বাঁধে, যদি মরে যায় ? বকতে বকতেই মনে পরল আমার শরীরেও এমন একটি সমস্যা আছে যার কথা আমি বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলাম।
সেদিনই পত্রিকা খুলে ব্রেস্ট ক্যান্সারের খবর। সুইমিংপুলে নেমে ফুয়ারা আপাকে বলতেই বললেন আজই যাও পরীক্ষা কর।
এই যে নানা মাধ্যমে এতোগুলো তথ্য এলো তাও নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তার তরফ থেকে , তিনি স্বয়ং আমাকে সতর্ক বার্তা পাঠালেন।
আজিজের ভাইকে নিয়ে মাথা না ঘামালে হয়তো মনেও আসত না আমার শরীরেও সমস্যা আছে।
জীবনের প্রতিটি কাজই একটি অপরটির সাথে সম্পর্কিত। যখন আপনি অন্যের ভালোর জন্য কাজ করবেন সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং আপনার ভালো দেখবেন। এ আমার বিশ্বাস।
আজ রাতে DUSFA’ 85 (অর্থাৎ Dhaka University Science Friends Association’ 85) সবাই মিলে আমার সুস্থতার জন্য দোয়া করবে এটাও আমার জন্য গর্বের, অনেক বড় পাওয়া।
জীবনের অর্থ একেক জন মানুষের কাছে একেক রকম । আমার কাছে বিশ্বাস আর নির্ভরযোগ্যতা অর্থাৎ ”আস্থা” অর্জন করাই সবচেয়ে বড় সাফল্য। সেদিক দিয়ে আমি অবশ্যই সফল একজন মানুষ।
চলবে…