ব্রেস্ট ক্যান্সার অপারেশন দু ধরণের। লাপেক্টমি যেখানে শুধু মাত্র ল্যাম্পটা কেটে ফেলা হয় আরেকটা মাস্টেক্টমি। যেখানে পুরো ব্রেস্টই কেটে ফেলতে হয়। হলিউডের বিখ্যাত নায়িকা আঞ্জেলিনা জলি ক্যান্সার হতে পারে সম্ভাবনা থেকে দুই ব্রেস্টই সম্পূর্ণ রিমুভ করেছেন । পরে অবশ্য রিপেয়ার মানে প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে পুনস্থাপন করেছেন।
২০১০ এ আমার স্বামীর ক্যান্সার ধরা পরার পর থেকে গোগল আর ইউটিউব ঘেঁটে কেবল ক্যান্সারের কারণ সমূহ অনুসন্ধান করার চেষ্টা করেছি । ক্যান্সার নিরোধক খাদ্য সমূহ খুঁজে বের করতাম। গাজর, অ্যাপেল, বীট , ব্রোকলি, চিয়া সিড আমার বাসায় সবসময় আছেই। ক্রুসিফেরাস ভেজিটেবল মানে সবুজ শাক সব্জির কোন কমতি নেই সাথে লাল চাল আর লাল আটা। টিংকু ভীষণ মেজবানি খাবার মানে গরুর গোশত খেতে পছন্দ করত বলে বাসায় গরুর গোশত আনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করি। এমন কি কোরবানির গোশতও স্বল্প সময়ে বিলিয়ে দিয়ে বাঁচি।
নামী-দামী ক্লাবে এলকোহলের সহজলভ্যতা । পড়াশুনায় জেনেছি এলকোহল ক্যান্সারের সম্ভাবনাকে ১৬% উস্কে দেয়।ভয়ে ভুলেও এলকোহল স্পর্শ করি না।
আমার আব্বা চেইন স্মোকার ছিলেন। সেই সময় থেকে সিগারেটের প্রতি প্রবল আসক্তি কিন্তু ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর বিধায় বান্ধবীদের সাথে আড্ডায় প্রবল আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলি।
পৃথিবীব্যাপী জনপ্রিয় নতুন খাদ্যাভ্যাসের নাম ভেগান। যেখানে প্রাণীজ প্রোটিন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত। বিভিন্ন ধরণের ডাল, সয়া থেকে বানানো টফু আর মাশরুম হচ্ছে প্রোটিনের মুল উৎস। তাঁদের ভাষায় জীবনের সমস্ত শরীর বৃত্তীয় এবং মানসিক অসুখের মুল কারণ হচ্ছে প্রাণীজ প্রোটিন। তাঁরা গরুর দুধ এবং ডিম খেতেও নারাজ।
কেবল মাছ খাচ্ছিলাম, খাদ্যাভ্যাসে অনেক গুলো ধাপ পার হয়ে ধীর পায়ে ভেগান হওয়ার দিকে এগোচ্ছিলাম।
করোনার শুরু থেকে করছিলাম ইন্টারমিটেনট ফাস্টিং অর্থাৎ ১৬ ঘণ্টা উপবাস। উপবাস নাকি শরীরের খারাপ সেলগুলোকে মেরে ফেলে কই আমার বেলায় এমন হল না তো । প্রতিদিন নিয়ম করে দেড় ঘণ্টা সুইমিং নয়তো জিম করি।
ছেলে-মেয়ে দুজনেই কানাডা থাকে বিধায় একা মানুষ, প্রাণপণ চেষ্টা করছিলাম সুস্থ থাকার। জীবনের নানা জটিলতায় মাঝে মাঝে তীব্র হতাশা এসে গ্রাস করে। এই হতাশা থেকে বাঁচতে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে মেহামেডান ক্লাব আর ঢাকা ক্লাবের ডিরেক্টর নির্বাচিত হলাম।
আমরা তুচ্ছাতি তুচ্ছ সাধারণ মানুষ, যত চেষ্টাই করি সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়কে অতিক্রম করার সাধ্য নেই।
সুস্থতা সৃষ্টিকর্তার সবচেয়ে বড় নেয়ামত। যখন কেউ অসুস্থ হয় কিছু মানুষ বলার চেষ্টা করেন কর্মফল।
আমি সারাক্ষণ তাঁকে প্রশ্ন করি, ” হে আমার খোঁদা আমি কি ওই দুর্নীতিবাজ, লম্পট, ঘুষখোর, ধান্দাবাজ, চোর, বাটপার, এতিমের সম্পদ লুণ্ঠনকারি ওইসব লোকের থেকেও খারাপ ? ” আমার চারিপাশের চিহ্নিত দুষ্কৃতিকারীরা সবাই ভালো আছে, সুস্থ আছে, সুখে আছে আর তুমি কি না সাদাসিধা অতীব সাধারণ আমাকেই বেছে নিলে ।
আম্মা বলতেন রসুলের জীবনী পড়ে দেখো আল্লাহ্ তাঁকে কতোটা কষ্টের মধ্যে ফেলে পরীক্ষা করেছেন। তিনি যাকে ভালোবাসেন তাঁকেই কষ্টে পুড়ে পুড়ে কষ্টি পাঁথরের মত খাঁটি বানান।
আম্মা তুমি কেন আমাকে একা ফেলে চলে গেলে ! ইদানীং সবসময় আব্বা-আম্মার কথা মনে পরে। তাঁদের মত আশ্রয়ের জায়গা এই পৃথিবীতে আর কোথাও নেই। আমি চিৎকার করে করে কাঁদবো আর আব্বা-আম্মা অস্থির হবে, আমার কান্নার উৎস খোঁজার চেষ্টা করবে, আমার কষ্ট কমানোর জন্য দিন-রাত এক করে দিবে । আজ কোথায় তাঁরা, কত দূরে !!
গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় শুয়ে শুয়ে মেডিটেশন করি। মেডিটেশন আর নামাজ আমার নিত্য সঙ্গী।
অনেকেরই মেডিটেশন সম্বন্ধে জানা নেই। মেডিটেশন শরীর আর মনের এক স্থির অবস্থান যেখান থেকে আপনি মানসিক প্রশান্তি পেতে পারেন। আমি মুসলমান বিধায় মেডিটেশনে মূলত স্রস্টার সাথেই কথোপকথনে মেতে উঠি।
মাঝে মাঝে শুয়ে শুয়ে আপনাদের কমেন্ট পড়ি । কতজনের কত দুঃখের কাহিনী, সবাইকে আমার আপন মনে হয়।
বন্ধু শামিমা কাল লিখেছে, ”চল আবার আমরা আড্ডায় মেতে উঠি।” চোখের কোণ ভিজে গেলো শামিমা ।
চলবে…