- ব্রিলিয়্যান্ট ছেলে তৈরির বিদ্যা বিপনিবিতান ও প্রাসঙ্গিক কিছু ভাবনা।
- আনোয়ার হাকিম।
আমাদের সন্তানদের বিদ্যা শিক্ষা লইয়া এখন আর দুঃশ্চিন্তার কিছু নাই বলিয়াই মনে হইতেছে। আমরা আমাদের উত্তরাধিকারদেরকে দুধে ভাতে রাখিবার বাসনায় প্রথমত ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করাকেই নিয়ামক ধরিয়া লইয়াছি। দ্বিতীয়ত ইহাকে আভিজাত্যের, কৌলিন্যের প্রতীকও বানাইয়া ফেলিয়াছি। সমাজের লোকেরা কি বলিবে বা ‘ওয়াও’ বলিয়া মারহাবা টাইপের আশকারা দিয়া গৌরবান্বিত করিবে এবং ইহাতে জাত- মান উভয়ই রক্ষা পাইবে ইহাও মননে মস্তিষ্কে গাঁথিয়া লইয়াছি। তৃতীয়ত শিক্ষা পন্ডিতগণও শিশু বয়সে “যাহাই দিবেন তাহাই সহিবে” এমন ছবক দিয়া যাইতেছেন। তাই বিদ্যার্থীদের পিঠে সাত কেজি ওজনের বিদ্যার বালিশ চড়াইয়া দিতে আমরা রীতিমত প্রতিযোগিতা করিয়া চলিতেছি। চতুর্থত বানিজ্যে লক্ষীর বসবাস এই মন্ত্রে বাঙ্গালী বড়ই অগ্রণী। যাহাই ব্যতিক্রম, যাহাই কঠিন, যাহাই হাই ফাই আর যাহাই রঙ ঢং এ মোড়ানো তাহাই টংকার অংকে চড়া হইবে অর্থনীতির এই সূত্র অতি স্বভাবিক। তাই বিদ্যা বিপনীবিতান গুলা নানা নামে, নানা বর্ণে নিজেদেরকে সাজাইয়া খদ্দের ধরার প্রয়াস পাইতেছে।খদ্দেরগণও সিস্টেমের কাছে কিছুটা অসহায় হইয়া, কিছুটা ‘সোসাইটি ভাইব’ অক্ষুণ্ণ রাখিবার খায়েসে আর প্রকারান্তরে ‘উন্নত মাল’ বিদেশে এক্সপোর্ট করিবার অভিলক্ষ্যে এইসব বিদ্যা বিপনিবিতানের গিলোটিনে নিজেদের লম্বা শক্তপোক্ত মাংসল গ্রীবা পাতিয়া দিয়া চলিয়াছেন। ইহাই ঘটমান বাস্তব।ইহার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া লোকজনকে সোসাইটির লোকেরা গেঁয়ো, নেটিভ, টিপিক্যাল বেঙ্গলী ইত্যাদি অভিধায় ভূষিত করিয়া হামাম দিস্তায় পিষিতে পিছপা হইবেনা। অতএব, স্বাভাবিক নিয়মেই ইহার বিপরীত কোন কথা বা পোস্ট অনেকের কাছে নিরর্থক ও হাস্যকর হিসাবে প্রতিভাত হইবে। যে কেউ টি টুয়েন্টিতে ব্যাট করিতে নামিয়া খুচরা রান করিতে থাকিলে তাহার প্রত্যাহার, তিরষ্কার ও বহিষ্কার যেমন স্বাভাবিক ইহাও এক প্রকার তেমনি। চার, ছক্কার বাহিরে আর অন্য কোন চিন্তা করিবার সুযোগ নাই। আজকাল অভিভাবকগণ ‘অতিভাবক’ হইয়া গিয়াছেন। ইহাকে দুষনীয় বলিলে পিন্ডি চটকাইতে চটকাইতে চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করিয়া ছাড়িবে।
মাল্টিন্যাশনাল আর কসমোপলিটন ফ্লেভারের এই যুগে অনুকূল হাওয়ায় পাল তুলিয়া নিশ্চিন্ত হওয়া ছাড়া আর বিকল্প কিছু আপাতত দেখিতেছিনা। তবে ইহাও ভাবিবার মোটেই অবকাশ নাই যে, যাহারা বাংলা মিডিয়ামে তাহাদের শিশুদেরকে দীক্ষিত করিতে পাঠাইয়াছেন তাহারা নিছক দেশ প্রেম আর বাংলা প্রেমে উদ্বুদ্ধ হইয়া এই কাজটি করিতেছেন। হয় ইহাদের ট্যাকের জোর কম, নাহয় ইহাতে অর্থ বিনিয়োগ অলাভজনক বা দেখাই যাক কি হয় জাতীয় ললাট নির্ভর হইয়াই পাঠাইতেছেন।সাধ্য থাকিলে তার্কিস, স্কটিস, স্যুইডিস,দিল্লীস, ব্রিটিস,আমেরিকানস, আগা খানস গোত্রের বিদ্যা বিপনিবিতান ঠিকই খুঁজিয়া লইতেন। খেলারাম খেলিয়া যাইতেছে। দেখারাম দেখিয়া যাইতেছে। শোনারাম শুনিয়া যাইতেছে। আর হাবারামরা হা করিয়া সার্কাস দেখিতেছে। এতকিছুর পরেও শুভ দাস গুপ্তের ‘ব্রিলিয়ান্ট ছেলে’ কবিতার কথা স্মরণ করিয়া শিহরিত না হইয়া পারিতেছিনা। যাহারা এই কবিতা পাঠ করিয়াছেন তাহারা অন্তত ইহার মর্মকথা বুঝিয়াছেন। আমলে নিন আর না-ই নিন। আর যাহারা অদ্যাবধি পাঠ করেন নাই তাহাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ,অন্তত গুগল বাবাজীর সাহায্য নিয়া হইলেও, একটিবার কবিতাটি পাঠ করুন। আমলে নিন আর না-ই নিন।