ফজরের আযানের জন্য সবাই অপেক্ষা করছিলো৷ আজানের ঠিক কয়েক মিনিট আগে জানালার উপর ধাম করে কি যেন একটা পড়ে এমন শব্দ হলো যেন জানালা ভেঙ্গে গেলো৷ এবং দুই তিন মিনিট পর গভীর নিস্তব্ধতা। পুরো বাড়ী যেন হালকা হয়ে গেলো৷ সাথে সবার গা ও হালকা হয়ে গেলো৷ সূর্য উঠতে চললো, চারিদিক কিছুটা আলোকিত হলো। লাভলী বেগম লাবন্যের মাথায় হাত বুলাতে গিয়ে দেখে মাথা সহ পুরো বালিস ভেজা৷ আবছা আলোতে তিনি দেখলেন বালিশ পুরো রক্তে ভেজা৷ লবন্যের গলাতে চোখ পড়লো। লাবন্যের গলাটা নীল হয়ে গেছে৷ লাভলী বেগম মোবাইলের লাইট দিয়ে দেখলেন, পুরো বালিশ রক্তারক্তি হয়ে আছে৷ তিনি তাড়াতাড়ি সবাইকে ডাকলেন৷ কান্নায় সবাই ভেঙে পড়ছে৷ লাভলী বেগম দেরি না করে পাশের বাড়ীর আতর আলীকে খবর দিলেন৷
সুরাইয়া লাবন্যের মাথা মুছে মেয়েকে কাপড় বদলে দিলেন৷ মেয়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছে৷ সে জানেই না তার সাথে কি হচ্ছে৷ বাড়ীর সবার মন খারাপ৷ লাবন্যের এ অবস্থা দেখে সবাই কান্না কাটি শুরু করে দিয়েছে৷
সকাল তখন দশটা৷ আতর আলী আসলো৷ ঘরে ঢোকার আগেই আতর আলী বললো, এই ঘরে বহুত খারাপ একখান জিনিস ঢুইক্কা হড়ছে৷ মুই ঘরে ঢুইক্কুম না৷ তাইলে হ্যায় মোরেও কাবু হইরা ফেলবো৷ পিছনের উডানের দুয়ার খানা খুইলে দেন৷
আতর আলীর অভ্যেস হলো কিছুক্ষন পর পর আতর ছিটায়, আর ভালো খারাপ যে কোনো কিছুতে সে হেহ হেহ হেহ করে। এটা হাসি বা কান্না নয়৷ শুধু হেহ হেহ হেহ৷ পেছনের উঠোনের মাঝ বরাবর এসে আতর আলী বললো, “খবর বেশী বালো নহে৷ রাইত না অইলে কাইত করোন যাইতোনা৷ রাইত ফর্যন্ত অফেক্কা কইত্তে অইবে৷ হেহ হেহ হেহ”৷
বলে তিনি কামরাঙ্গা গাছের দিকে তিক্ন দৃষ্টিতে তাকালেন৷ ততখনাত কামরাঙ্গা গাছের উপর যেনো একটা ঝড় বয়ে গেলো এমন ভাবে কামরাঙ্গা গাছের পাতা নড়ে উঠলো৷ বেশ কিছু পাতা ঝরে গিয়ে কামরাঙ্গা গাছ যেন খালি হয়ে গেলো। এবার আতর আলী একটু একটু করে কোদাল দিয়ে মাটিতে কোপ মেরে মেরে ঠিক কামরাঙ্গা গাছের নীচ বরাবর কোদালটা গেড়ে বসে রইলেন এবং তিনি সবাইকে বললেন, ফতিস্থিতি বালো নহে৷ কেউ আমার লগে কতা কইবেন না৷ বলেই উনি ধ্যানে বসলেন৷
মাগরিবের নামাজের আযান পর্যন্ত তিনি ধ্যানেই রইলেন কামরাঙ্গা গাছের নীচে৷ যেই মাত্র মাগরিবের আযান হলো, আতর আলী একটা বড় কোপ মারলেন মাটিতে৷ ধুপ করে গাছ থেকে একটা জিনিস মাটিতে পড়লো৷ সারা বাড়ী গন্ধে ভরে গেলো৷ আতর আলী গর্ত করতে শুরু করলেন কামরাঙ্গা গাছের নীচে৷ কয়েক সেকেন্ড পর ধুপ করে পড়া জিনিসটা একটা বিদঘুটে কালো বিড়ালে পরিনত হয়ে গেলো৷
এদিকে লাবন্য ঘুমাচ্ছে৷ আতর আলীর কথা অনুযায়ী লাবন্যকে কেউ ঘুম থেকে জাগালো না৷ সুরাইয়া শুধু চামচ দিয়ে একটু একটু করে আতর আলীর দেয়া পড়া পানি দিয়ে গেলো তার মুখে৷
মাগরিবের নামাজ শেষে আতর আলীর নির্দেশ অনুযায়ী একটা চকিতে লাবন্যকে বাড়ীর উঠোনের মাঝখানে নিয়ে শোয়ানো হলো৷ লাভলী বেগম তার মাথার কাছে কোরান শরীফ পড়ছেন৷
একটা সময়ে আতর আলীর কথা অনুযায়ী লাভলী বেগম কোরান শরীফ পড়া বন্ধ করলেন৷ লাভলী বেগমকে বলা হলো তিনি যেন, একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ান। তিনি একটু দূরে যেতেই বেশ কয়েকটি কালো বিড়াল লাবন্যের চকির আশপাশ ঘিরে ফেললো৷ আর সবচেয়ে বড় বিড়ালটা লাবন্যের গায়ের উপর উঠে তার চুলের গন্ধ নেয়া শুরু করলো। আতর আলী বিড়ালকে উদ্দেশ্য করে কিছু পড়লেন, যেমন…ধ্রুম্ম ধ্রুম্ম ঢাং ধ্রুমকুলাঙ্গা ধ্রুম্ম ধ্রুম্ম ঢাং, বস করলাম আমি তোকে ধ্রউম্ম ধ্রুম্মম্মম্মম্মম্ম ঢাং।
সঙ্গে সঙ্গে বিড়ালটি আতর আলীর সামনে গিয়ে হাজির৷ আতর আলী তার গায়ে কিছু আতর ছিটিয়ে বললো যা তুই তোর বাচ্চাদের নিয়ে আয়৷
এদিকে ক্লান্ত লাবন্য উঠে বসে তার চুলকে জোরে ঝেড়ে নিলো দুইবার৷ সবাই দেখলো চুল থেকে দুইটা ভারি বস্তার মতো জিনিস পড়লো৷ কালো বিড়ালটি সেই দুটো জিনিসকে কামড় দিয়ে সোজা আতর আলীর কাছে গিয়ে হাজির৷ আতর আলী বললো, তোরা এ বাড়ীর বহুত নিমক খাইছস৷ তবুও নিমক হারামী ক্যারে? গাছের উপর থেকে অনেক জোরে আওয়াজ আসলো, আমার বাচ্চাদের গলা চেপে চুলের সাথে বেঁধে নিয়েছিলো৷ আমিকি তবে তাদের ছেড়ে দেবো? আতর আলী বললো, না জেইনে বাইন্ধেছে৷ তাই বইলে কি তুই মাইয়াডার রক্ত খাইবি? আইজ তোরে মইরতেই অইবো৷ বলে আতর আলী কামরাঙ্গা গাছের গোড়ায় কুপিয়ে তাকে গাছ থেকে গর্তে ফেললো। এবং সে কালো বিড়াল গুলোও এসে গর্তে পড়লো। আতর আলী বললো, “বহুত দিন ধইরা আমি তোদের খুঁইজতাছি। আইজ পাইয়াছি। ছাড়াছাড়ি নাইক্কা”৷
কেরোসিন ঢেলে বিড়াল গুলিকে সহ গর্তে আগুন জালিয়ে দিলো৷ ধাউধাউ করে আগুন জলছে৷ চারিদিকে প্রচন্ড দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লো৷ সে পেতনি সহ তার পুরো পরিবার মরে গেলো৷
লাভলী বেগম আতর আলীর কাছে জানতে চাইলো কি হয়েছিলো, আতর আলী বললো, হাইঞ্জের বেলা চুল ছাইড়া রাহোন ঠিক নহে৷ ছাড়া চুলে মাইয়াডা বইয়া আছিল যহন তহন পেতনির জমজ বাইচ্চারা খোলা চুলের ভিতরে হান্দাইয়া খেলতাছিলো৷ আর তহনই চুল বান্দন্ডা ঠিক অয়নাইক্কা৷ হ্যের চুল দিয়া তাগো গলায় ফাঁস লাইজ্ঞা গেছলো৷ আর তক্ষন তক্ষনই বাইচ্চা গুলান আধমরা অইয়ে গিয়েছিলো৷ হ্যের লাইজ্ঞা ফেত্তুনির ঝি ফেত্তুনির বাচ্চারা হ্যার মাথায় কামড়াইয়া দিছলো৷ আর হ্যের লাইজ্ঞা লাবন্যের মাতায়ও ফ্রচন্ড ব্যদনা হইয়েছিলো। তার যন্যি রক্তে বালিশ ভিজ্জা গেইয়েছিলো৷ রাইতে পেত্নি বিলাইর রূপ ধইরে লাবইন্যের চুল থেইক্কা তার বাচ্চাগো উদ্ধার কইরতে গেছলো৷ কিন্তু তাকে মারধর কইরে বাইর কইরে দেওনে হ্যায় ছেইত্তা গেছে৷ বাচ্চাগোরে কইছে লাবইন্যের মাথা থেইক্কা রক্ত খাইয়ে লইতে৷ ব্যাফারটা ছিলো এই৷
তার পর থেকে কেউ আর খোলা চুলে কামরাঙ্গা গাছের নীচে যেতো না৷ যদিও সে পেতনিকে পরিবার সহ পুড়িয়ে মারা হয়েছিলো৷
(সমাপ্ত)