‘ আজকে একটু বেশি সময় থাকলে তোমার সমস্যা হবে? ‘
‘ কেন ম্যাডাম? কোন কাম আছে? ‘
‘হ্যাঁ! তোমার স্যার কিছু মাছ পাঠাবে। ও একটা কাজে আটকে গেছে। তাই দেরি হচ্ছে। ‘
‘ফুলির আব্বারে আগে জিগাই লই ম্যাডাম। হেই অনুমতি দিলে তারপর থাকুম। ‘
নিশা অবাক হয়ে সালমার দিকে তাকালো। সালমা ওর বাসায় কাজ করে ছয় মাস ধরে। মেয়েটা খুব ভালো আর কাজ করে খুব গুছিয়ে। সাধারণত ছুটা বুয়াদের কাজ এতো গুছানো হয় না।
সালমা কাজ করেও পরিষ্কার পরিছন্নভাবে। আগে যতজন ছুটা বুয়া ছিলো কেউ চুরি করতো, কেউ অপরিষ্কার, কেউ সময়মতো আসতো না ইত্যাদি। সালমার এমন কোন সমস্যা নেই। সময়মত আসে, ঠিকঠাক কাজ করে চলে যায়। কথা বলে খুব কম। প্রয়োজন ছাড়া কোন কথা বলে না।
সালমার আগে যে কাজে ছিলো ওই ছুটা বুয়া খুব নোংরা ছিলো। ওকে দিয়ে দুইদিন কাজ করিয়ে নিশা পুরো মাসের বেতন দিয়ে বিদায় করে দিয়েছে। তারপর নিজেই কয়েকদিন ঘরের কাজ করেছে। অনভ্যস্ত হাতে নিশা খুব একটা গুছিয়ে উঠতে পারেনি। সাথে ৩বছরের একমাত্র মেয়ে খুব বিরক্ত করে।
তাছাড়া নিশা অসুস্থ থাকে একটু বেশিই। দারোয়ানকে বলে রেখেছিলো যেভাবেই হোক দ্রুত একজন ছুটা বুয়া জোগাড় করে দিতে। দারোয়ান তার এক বোনের মাধ্যমে সালমার খোঁজ পায়। তারপর সরাসরি সালমার সাথে নিশার পরিচয় করিয়ে দেয়। পরদিন থেকেই সালমা নিশার বাসায় কাজ করে। নিশা সালমার কাজে, ব্যবহারে খুব খুশী।
‘তোমার ফুলির আব্বা অনুমতি দিলো ?’
‘জি ম্যাডাম!’
‘সবকিছুতে ফুলির আব্বার অনুমতি নেওয়া লাগে ?’
‘ ফুলির আব্বাও তার হগল কামে আমার অনুমতি নেয়। আমিও আমার কামে হের অনুমতি নেই। ‘
‘ তোমাদের বিয়ে হয়েছে কতবছর ? ‘
‘ পাঁচ বছর ম্যাডাম। ‘
‘ ফুলির বয়স কত ?’
‘দুই বছর ‘
‘ফুলি কার কাছে থাকে? ‘
‘ফুলি তার আব্বার কাছে থাকে। ‘
‘ফুলির আব্বা কোন কাজ করে না ?’
‘ফুলির আব্বা অসুস্থ ম্যাডাম। ‘
নিশার খুব ইচ্ছে হলো সালমার জীবনের গল্প শোনার। কিন্তু হুট করে জিজ্ঞেস করতে কেমন বিব্রত লাগছে তার। আর সালমাও এতো অল্প কথায় উত্তর দেয় নিশার মনে হয় সালমা খুব বেশি কথা বলতে পছন্দ করে না। অথবা সে তার জীবনের গল্প হয়তো বাহিরে কাউকে বলতে চায় না। এমন সময় ড্রাইভার মাছ নিয়ে হাজির হলো। অনেক গুলো ইলিশ মাছ নিয়ে এসেছে ড্রাইভার।
সালমা মাছ কাটতে বসলো। নিশার মনে হতে লাগলো এমনিতে আজকে সালমাকে আটকে রেখেছে, আবার এতগুলো মাছ কাটতে ওর আরো অনেক দেরি হয়ে যাবে। তাই সে নিজ থেকে এগিয়ে গিয়ে বললো কিছু মাছ আস্ত ড্রিপ ফ্রিজে রেখে দিতে। পরদিন এসে কাটতে। সালমা বললো তার সমস্যা হবে না। সে আজকেই কেটে যাবে।
নিশা একটা চেয়ার টেনে সালমার সামনে বসলো। নিজ থেকেই বললো সামনের সাপ্তাহে তার একমাত্র মেয়ে তানিয়ার জন্মদিন। তানিয়ার বাবার অফিসে কিছু বিদেশী কলিগ আছে।
তাদের জন্য দেশি খাবারের বিশাল আয়োজন করা হবে। আজকের ইলিশ মাছগুলো সেই প্রোগামের জন্যই নিয়ে আসা। সালমা নিশার কথা শুনছে আর মাছ কাটছে। মাঝে মাঝে নিশার কথার সাথে হ্যাঁ, হুম করছে।
‘ফুলির বাবা কবে থেকে অসুস্থ ?’
‘দেড় বছর হইয়া গেলো। ‘
‘কী হয়েছে ফুলির বাবার?’
‘রিক্সা চালাইতো। একসিডেন্ট করছিলো। প্রাইভেট কার ডাইন পায়ের উপর দিয়া গেছে গা। ডাইন পায়ের অর্ধেক এখন নাই হের। ‘
‘কী বলো! তোমার তো অনেক কষ্ট হয় এখন। সব সামাল দাও কিভাবে ?’
‘ঘরের রান্নাবান্না ফুলির আব্বা কইরা রাখে। ফুলিরে রাখে। আমি আফনার বাসা লইয়া ৪বাসায় কাম করি। বাসায় গিয়া কিছুক্ষন ঘুমাই। তারফর কোন কাম থাকলে করি। তয় ঘরের কাম আমার করণ লাগে না। সব ফুলির আব্বা করে। ফুলিরেও রাখে। ‘
‘বাহ্! ফুলির বাবা তো তোমাকে খুব যত্নে রাখে। ‘
‘জি ম্যাডাম!’
নিশা হুট করে উঠে নিজের রুমে চলে গেলো। তানিয়া পেটে থাকতে একদিন রাতে তার ঘুম আসছিলো না। খুব অশান্তি লাগছিলো। বিছানা থেকে উঠে সে কতক্ষন রুমে পায়চারি করে। কিন্তু অশান্তি দূর হচ্ছিলো না। তখন সে আসাদকে আলতো করে ডাকে।
আসাদ চোখ খুলে খুব জোরে নিশাকে ধমক দিয়েছিলো আর বলেছিলো সারাদিন পরিশ্রম করার পর এতরাতে নাটক দেখার সময় তার নেই। আসাদ বরাবরই একটু কেমন জানি! টাকা ইনকাম করাই তার একমাত্র নেশা। পরিবারে আলাদা করে সময় দেওয়া, বৌ মেয়ের আলাদা যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে বরাবরই তার অনীহা।
এই যে তানিয়ার জন্মদিন পালন করবে এটা তানিয়াকে ভালোবেসে না বা তানিয়া তার একমাত্র মেয়ে এইজন্য নয়। অফিসে নিজের স্ট্যাটাস বজায় রাখার জন্য নিজের মেয়ের জন্মদিন বড় করে পালন করছে। অফিসের কলিগদের জন্য সব আলাদা ব্যবস্থা করেছে। বিয়ে করেছে, বাচ্চা নিতে হবে তাই আসাদ বাচ্চা নিয়েছে।
বাচ্চাকে আলাদা সময় দিতে হবে, বাচ্চার টানে ঘরে আসবে বা দিনে বাচ্চার খোঁজ খবর নিবে এসব ব্যাপার আসাদের মধ্যে নেই। আসাদের মাথায় সারাক্ষণ ঘুরে টাকা আর সমাজে, সংসারে, অফিসে তার স্ট্যাটাস কতটুকু বাড়লো বা বাড়ানো গেলো।
আসাদের এমন চিন্তা ভাবনা আর ব্যবহারে নিশার মনে অভিমান জমতে জমতে পাহাড় হয়ে গিয়েছে। কিন্তু নিশা কখনো মুখ ফুটে এসব কথা বলে না। বিয়ের প্রথম প্রথম বলতো কিন্তু যখন দেখলো আসাদের মধ্যে নিজেকে পরিবর্তন করার কোন লক্ষণ নেই তখন চুপ হয়ে গেলো। উল্টা আসাদ নিজের খামখেয়ালিপনা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এইদিকে নিশা নিজের আলাদা জগৎ বানিয়ে নিয়েছে।
কাউকে নিজের কথা বলে না। আত্মীয় স্বজন, বন্ধু -বান্ধব সবাইকে এড়িয়ে চলে। বাহিরে প্রয়োজন ছাড়া তেমন বের হয় না। আজকে সালমার কথা শুনে বহুদিনের জমানো অভিমান কেমন উথলে উঠলো। হুট করে নিশার খুব কান্না পেলো।
ওর বিশাল বাসা টাকা পয়সা, ব্যাংক ব্যালান্স সব আছে কিন্তু পাশে বসে কাঁধে হাত রাখার মানুষ নেই। অথচ সালমার এমন কিছুই নেই কিন্তু ভালোবাসার মানুষ আছে। ঘরে কেউ একজন সালমার জন্য অপেক্ষা করে, সালমার কেয়ার করে, সালমার ভালো মন্দের খেয়াল রাখে। এইদিক থেকে সালমা অনেক ধনী আর সে খুব গরীব।
নিশা দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে হুট করে কেঁদে উঠলো। অনেক দিনের জমানো কান্না একসাথে বের হয়ে আসলো। নিশা সমানে কেঁদে যাচ্ছে।
‘ম্যাডাম! মাছের কাম শেষ। আমি এহন বাড়ি যামু। ‘
নিশা তাড়াহুড়া করে দুইহাত দিয়ে চোখ মুছে মুখ না ফিরিয়ে সালমাকে যেতে বললো। সালমাও চলে গেলো। নিশা ধীরে সুস্থে উঠে দরজা লক করলো। তারপর ভাবলো বিয়ের আগে আসাদ কেমন ছিলো আর বিয়ের পর কিভাবে এবং কতটা বদলে গেলো। কেউ অর্থনৈতিক সচ্ছলতার জন্য লড়াই করে, আর কেউ একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য লড়াই করে।
‘তোমারে এক ম্যাডামের কতা কইছিলাম না? আমার খুব পছন্দের ম্যাডাম। ওর একটা মাইয়াও আছে আমাগো ফুলির মতো। তার জন্মদিন সামনের সাপ্তাহে। বিশাল আয়োজন করতাছে তারা। ‘
‘তাইলে তোমারও কাম বাড়লো। ‘
‘হ! তাতো বারবোই। বিদেশী মেহমানও নাকি আইবো। তাগো লাইগ্যা দেশী খাবারের আয়োজন করবো। আজকে মেলাডি ইলিশ মাছ আনছে। সব কাইটা দিয়া আইলাম। ‘
‘আমি সুস্থ থাকলে আমাগো ফুলির জন্মদিনও বড় কইরা করতাম। তই আমরা দেশী না, বিদেশী খাবারের আয়োজন করতাম। ‘
এই কথা শেষ করে জব্বার আর সালমা দুইজনই হেসে দিলো। জব্বার মন থেকে কথাটা বললেও একটু মজার ছলে বলেছে। সালমা মজা ভেবেই হেসে দিয়েছে। সালমার হাসি দেখে জব্বারও হেসে দিয়েছে। দুইজন আরো কিছুক্ষন নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা শেষ করে ঘুমাতে গেলো।
‘দেখো তো সালমা এই কালারটা কেমন লাগে? ‘
‘রংটা সুন্দর। আফনারে মানাইছে। ‘
‘ঠিক বলছো ?’
‘জি ম্যাডাম! খুব সুন্দর লাগছে আফনারে। ‘
‘তাহলে এই কালারটা ফাইনাল। তানিয়া আর ওর বাবার জন্যও একই কালারের আর ডিজাইনের ড্রেস নিবো। ‘
‘সবাই এক রংয়ের পোশাক পরবেন? ‘
‘হ্যাঁ! ভালো হবে না বলো ?’
‘জি ম্যাডাম!’
‘আচ্ছা সালমা শোন! তোমাকে এই কয়দিন একটু বেশি সময় দিতে হবে। আরেকটা কথা প্রোগ্রামের দিন ফুলি এবং ফুলির বাবাকে অবশ্যই নিয়ে আসবা। সপরিবারে তোমাদের নিমন্ত্রণ। ‘
‘ম্যাডাম! আফনে আমাকে দাওয়াত দিলেন ?’
‘হ্যাঁ! কেন ?’
‘কত বাসায় কাম করি। কোনোদিনও কেউ এমন কইরা দাওয়াত দেয় নাই। ‘
‘এসব কথা বাদ দাও। আনন্দের সময় আনন্দের কথা বলতে হয়। মন খারাপের কথা বাদ দাও। ‘
সালমা চোখ মুছে হাসলো। তানিয়াকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করলো। সেদিনের মতো কাজ শেষ করে বিদায় নিলো।
‘যে ম্যাডামের মাইয়ার জন্মদিন ওই ম্যাডামে তোমারে আর আমাগো ফুলিরেও দাওয়াত করছে। ‘
‘সত্যি কইতাছো ? তোমার ম্যাডামের মন অনেক বড় মনে অইতাছে। ‘
‘ম্যাডাম অনেক ভালা মনের মানুষ। হেই লাইগ্গা তো হেরে আমি অনেক পছন্দ করি। আমার লগে কত সুন্দর কইরা কতা কয়। ‘
‘তোমার ম্যাডামের মাইয়ার লাইগ্গা একটা সুন্দর উপহার কিনতে হইবো। ‘
‘কী দেওন যায় কওতো! ‘
‘মাইয়ার কী পছন্দ হেইডা তো তুমি জানবা ভালো। তুমি কাইল জাইনা আইয়ো। ‘
‘আইচ্ছা!’
অনেকদিন জব্বার বাহিরে যায় না। তাই জব্বারের তেমন কোন নতুন ড্রেস নেই। সালমা ভাবছে জব্বারের জন্য নতুন শার্ট, প্যান্ট কিনতে হবে। ফুলির জন্যও নতুন একটা ফ্রক কিনবে। তার নিজেরও তো তেমন নতুন কিছু নেই।
গ্রাম থেকে আসার পর এই প্রথম তারা কোন দাওয়াতে যাবে । তাও এতো বড়লোকের বাড়ির অনুষ্ঠানে। এইদিকে জব্বারও ভাবছে সালমার নতুন কোন পোশাক নেই। ওর জন্য নতুন পোশাক কিনতে হবে। দুইজনেই দুইজনের জন্য ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো।
পরেরদিন সালমা কাজ শেষ করে নিশার সামনে কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। সালমার দাঁড়ানো দেখে নিশা জানতে চাইলো সালমা কিছু বলবে কিনা।
‘ম্যাডাম! আমার একটা কাম কইরা দিবেন ?’
‘কী কাজ?’
‘কইতে ডর লাগতাছে। আফনে অন্য কিছু মনে করবেন নাতো ?’
‘না না! তুমি বলো। কোন সমস্যা নেই। ‘
‘আপনি নিজের জন্য, স্যারের জন্য আর মামনির জন্য এক রংয়ের পোশাক নিবেন না ? তেমনি এক রংয়ের পোশাক আমার জন্য, ফুলির বাপের জন্য আর ফুলির জন্য কিন্না দিতে পারবেন ? ‘
নিশা অবাক হয়ে সালমার দিকে তাকিয়ে আছে। নিশা পোশাকের দামের ব্যাপারে ভাবছে না। ভাবছে সালমার শখের ব্যাপারে, সাধের ব্যাপারে।
‘পারবো না কেন? অবশ্যই পারবো। তুমি ফুলি আর ফুলির বাবার মাপ জানো ?’
‘কাল জাইন্না আমু। ম্যাডাম টাহা কত লাগবো?’
‘টাকা নিয়ে তোমাকে এখন ভাবতে হবে না। পরে দিও ‘
‘যহন ফুলির বাপে কামাই করতো তখন হেই প্রতিদিন কামে যাওয়ার আগে আমার হাতে কিছু কিছু টাহা দিয়া যাইতো। আমি হেই টাহা সব জমাই রাখছি। এহন প্রতি মাসেও কিছু টাহা আলাদা করে রাহি। এই টাহা জমাইতেছিলাম ফুলির কানের সোনার জিনিসের লাইগ্গা। ফুলি জন্ম নেওয়ার কয়েকমাস পরেই ফুলির বাপের দুর্ঘটনা ঘটে।
এরপর আমাদের হগল আনন্দ মাটি হইয়া গেছে। আপনি দাওয়াত দিলেন ফুলির আব্বায় খুব খুশি হইছে। আপনি কাল কইলেন আপনি, স্যার আর মামনি একরহম পোশাক পরবেন। কাল রাতে আমিও ভাবলাম আমি, ফুলির আব্বা আর ফুলি একরহম পোশাক পড়ুম। ‘
‘তোমার মন খুব সুন্দর সালমা। তোমাকে এই জন্য আমার খুব ভালো লাগে। তুমি কাল মাপ জানাও। টাকা পরে নিবো। ‘
বাকি তিন বাসায় কাজ করে সালমা কত পায় নিশা জানে না। তবে নিশার বাসা থেকে মাস শেষে যতটুকু টাকা সালমা পায় তার কয়েকগুন বেশি টাকা খরচ হবে এই তিনজনের সেইম কালার আর ডিজানের পোশাকে। এই কথাটা নিশার বলতে খারাপ লাগছিলো। দামের কথা শুনে সালমা হয়তো পিছিয়ে যাবে। মনে মনে একই রঙের এবং ডিজাইনের পোশাক পরার যে স্বপ্ন সালমা দেখেছে সেটা হয়তো ভেঙে যাবে।
খুশী খুশী মনে সালমা সেদিন কাজ শেষ করে মার্কেটে গেলো। তানিয়ার জন্য জন্মদিনের উপহার কিনতে হবে। সালমা অনেক ঘুরেও তানিয়ার জন্য উপযুক্ত উপহার খুঁজে পেলো না। যা দেখে তা পছন্দ হয় না, যেগুলো পছন্দ হয় সেগুলো টাকাতে কুলায় না। অনেক ঘুরেফিরে খালি হাতে বাসায় ফিরে আসলো সালমা।
‘তোমার ম্যাডামের মেয়ের জন্য কী কিনবা কিছু ভাবলা ?’
‘আজকে কাম শেষ করে একটু মার্কেটে গেছিলাম। যা পছন্দ হয় সেগুলো সাধ্যে কুলায় না। চাইলেই তো সবকিছু তানিয়া মামণিকে দেওন যাইবো না। ‘
‘আমাগো মাটির ব্যাংকটা ভাইঙ্গা দেহো কত টাহা জমছে। সেই টাহার লগে আরো কিছু টাহা মিলাইয়া সোনার কিছু দেওন যায় কিনা দেহো। ‘
‘আইচ্ছা! দেখতাছি। ‘
মাটির ব্যাংক ভেঙে সালমা দেখলো খুবই সামান্য কিছু টাকা জমেছে। অনেক ভাবনা চিন্তা করে সালমা ঠিক করলো তার ম্যাডামকে পোশাকের টাকা পরের মাসে দিবে।
পোশাকের জন্য যে টাকাটা খরচ করবে বলে ঠিক করেছে সেটা দিয়ে তানিয়ার জন্য উপহার কিনবে। এইদিকে নিশা নিজেদের জন্য সে কালার আর ডিজাইন অর্ডার দিয়েছে, সেইম কালার এবং ডিজাইন সালমা, তার স্বামী এবং মেয়ের জন্য অর্ডার দিলো।
জীবনে কে কবে দেখেছে নিজের মেয়ের জন্মদিনে নিজেরা যেমন ড্রেস পরবে , সেইম একই ড্রেসের অর্ডার কেউ তার হেল্পিং হ্যান্ড এবং তার পরিবারের জন্য করে।
জীবনে কে কবে দেখেছে নিজের মেয়ের কানের দুলের জন্য জমানো টাকা দিয়ে যার বাসায় কাজ করে তার মেয়ের জন্মদিনের উপহার হিসেবে সেই মেয়ের জন্য কানের দুল কিনতে। ভালোবাসা ফিরে আসে। অন্যের জন্য ভালো কিছু করলে নিজের সাথেও ভালো কিছু ঘটে।