আলহামদুলিল্লাহ, রাখে আল্লাহ মারে কে!

Photo of author

By Fatema Hossain

এ যাবৎ আমি অনেকবার আমার জীবনে শৈশব থেকে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনা ও দুর্ঘটনার কথা বলেছি।আবার অনেক ঘটনা ভুলে গেছি। হঠাৎ হঠাৎ ই মনে এসে পড়ে। তখন মনে হয় এটা তো লিখিনি!সেরকম ই একটি দুর্ঘটনার কথা তিন চার দিন আগে মনে পড়ে গেল। তাই ভাবলাম এটাও লিখে ফেলি!

২০০৬ সাল, ডিসেম্বর মাসের ৬ তারিখ। আমি আমার দুইপুত্র ও মেজ ভাসুরের ছোটো ছেলে জনি কে নিয়ে সুবর্ন ট্রেনে করে ঢাকায় আসছি।তার ঠিক এক সপ্তাহ আগে জনি তার চাচা(আমার হাসবেন্ড) র সাথে চট্টগ্রামে গিয়েছিল বেড়াতে। তখন আমার দুই ছেলের ই বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষা শেষ হল পাঁচ তারিখ, আমরা ছয় তারিখ রওনা হলাম।

আমাদের চার টা সিট।টয়লেট এর সাথে দুইটা তার আগে একটা আর বাম পাশে সিংগেল একটা। সিংগেল টায় জনি বসেছে। পাশের ডাবল টায় আমি ছোটো ছেলে কে নিয়ে বসেছি।সামনের সিটে বড়ো ছেলে। আমাদের সিট ঢাকার দিকে পিছন চট্টগ্রামের দিকে মুখ ফেরানো। জনির সামনে না পিছনের সিটে এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক একা বসে আসছিলেন।

আমার ছোটো ছেলে ছোট্ট বেলা থেকে খুব মিশুক সে ট্রাভেলিং এর সময় ছয় মাস বয়স থেকে কখনো আমার কাছে থাকতো না। যাত্রী ও এটেনডেন্ট দের কাছে চলে যেতো। সেদিন কেন জানি পুরা রাস্তায় সে মোটামুটি চুপচাপ করেই বসেছিল। আমি সাধারণত জানালার পাশেই বসি বাচ্চাদের দেই না। কারণ দুর্ঘটনার ভয়।

ঐদিন সারারাস্তা আমরা নিরাপদেই আসলাম।আমরা মোহাম্মদপুর কলেজ গেটে বড়ো ননাসের বাড়ি যাব তাই কমলাপুর রেলস্টেশনে নামার জন্য সেখানে যাচ্ছিলাম।এমনিতে আমরা বিমানবন্দর স্টেশনেই নামি।

বিমানবন্দরে অনেক যাত্রী নেমে যাওয়ায় অনেক সিট খালি হয়ে গেল। তখন সামনের সিটে আমার বড়ো ছেলের পাশে একজন এটেনডেন্ট বসে পড়ে। ট্রেন যখন তেজগাঁও ছেড়ে কমলাপুরে ঢুকবে তখন আমার ছোট ছেলে আমার কাছ থেকে সরে সামনে ঐ ছেলেটির কাছে গিয়ে বসে গল্প করতে শুরু করে দিল। আমি পিছনের সিটে হেলান দিয়ে সোজা হয়ে বসে ছিলাম। হঠাৎ ই কি মনে করে সামনের সিটে মাথা দিয়ে ঝুঁকে গেলাম। আওয়াজের সাথে এক গাদা কাঁচের টুকরো গায়ে মাথায় এসে পড়লো আর বাম পাশে জনির সিটের আগে পিছে সে বৃদ্ধ লোকটা চিৎকার করে উঠলেন। তাকিয়ে দেখি উনার মাথা থেকে ব্লিডিং হচ্ছে।কাঁচের টুকরোর আঘাতে কপাল এর উপরে কেটে গেছে। এটেনডেন্ট তাড়াতাড়ি জানালা বন্ধ করতে লাগলো। জনি ঐ ভদ্রলোক কে সাথে থাকা পানি আর ফার্স্ট এইড দিয়ে সেবা করা শুরু করেছে এর মধ্যে ই ট্রেন স্টেশনে ঢুকে গেল। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি হতবিহ্বল হয়ে গেছি।বাচ্চাদের মাথা থেকে কাঁচ পরিস্কার করায় ব্যাস্ত হয়ে গেলাম। জনি ডেকে বল্লো,” চাচি আপনার পাশের জানালার কাঁচটা দেখেন।”

তাকিয়ে দেখি বিশাল এক গর্ত!একটা ছুঁড়ে দেয়া ইট বা পাথরের আঘাতে বামপাশের জানালা ভেংগে ডানপাশের জানালাও ভেংগে চলে গেছে। আমি যদি এক দুই মিনিট আগের মতো সোজা হয়ে থাকা অবস্থায় থাকতাম তাহলে আমার মাথা গাছ থেকে পড়া পাকা বেলের মতো চুর্নবিচুর্ন হয়ে থ্যাতলানো গোবর হয়ে যেতো,তাতে কোনোই সন্দেহ নেই। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া সন্তানদের ঐ দৃশ্য দেখতে হয়নি।তারা অকালে মাতৃহারা হয়ে যায় নি।

ট্রেন থেকে নেমে আসার সময় ও ভালো করে দেখে শিউরে উঠলাম! আলহামদুলিল্লাহ, রাখে আল্লাহ মারে কে!