Select Page

পুতুলনাচ

পুতুলনাচ

আমরা ছোটবেলায় পুতুলনাচ দেখেছি খুব মজা নিয়ে….. তখন গ্রামে গঞ্জে মেলা হতো…. মেলায় সার্কাস বসতো,পুতুল নাচ হতো, হতো যাত্রাপালাও আরো ছিলো মৃত্যু কুপে বাইক চালানো….এরকম নানান আয়োজন থাকতো।

মেলায় প্রবেশের পথে থাকতো সিংহদ্বার, মেলায় প্রবেশের টিকিট লাগতো…. তখন বিনোদনের উপায় এখনকার মতো এতো ব্যাপক ছিলনা…. এগুলোর মধ্যেই ছিলো অকৃত্রিম বিনোদন…. বাবা মায়ের হাত ধরে মেলায় ঘোরা আর নানারকম রং বেরং এর জিনিস নিয়ে ঘরে ফেরার মজাই ছিলো অন্যরকম….

এগুলো বলার পেছনে কারণ হলো এইযে ছোটবেলায় পুতুলনাচ দেখে মজা পেয়ে হাততালি দিতাম…. আর এখন পুতুলনাচ দেখে কষ্ট পাই….. কেনো??? তবে বলি….

এইযে করোনার ভয়াবহ থাবায় যখন প্রতিদিন দুশোর উপরে মানুষ মারা যাচ্ছে….. আক্রান্ত ৩০% এর উপরে…. সর্বত্র মৃত্যুর হাতছানি, এই অবস্থায় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া হলো…. কি অবর্ননীয় কষ্ট সহ্য করে ঢাকায় পৌঁছালো শিল্প কারখানা সংশ্লিষ্ট কর্মীরা….

আমার দেখা সবচেয়ে অসহায় পুতুল এখন তারা, আমরা নিত্য তাদের দুঃখজনক পুতুলনাচ দেখি ভারাক্রান্ত চোখ নিয়ে…. যখন ঘোষণা হয় শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ তখন বাড়ি না গেলে খাবে কি, থাকবে কিভাবে, চলবে কিভাবে এসব ভাবনায় শুরু হয়ে যায় বাড়ি ফেরার ভয়াবহ পুতুলনাচ….

ছোটবেলার পুতুলনাচ যেমন আঙুলি হেলনিতে হতো এখনো তেমনই তবে সেটা আনন্দ বিহীন….. ওরা জীবন্ত পুতুল… ওদের হাতে পায়ে মুখেও রয়েছে পুতুলনাচ এর মতো অদৃশ্য সুতোর কারসাজি….. পেট বাঁচানোর তাগিদে, সংসার বাঁচাতে সন্তানের মুখে ভাত তুলে দেওয়ার তাগিদে, একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার তাগিদে ওরা পুতুল হয়ে যায়…..

আমরা জানি ওদের কোনো উপায় নেই….আমার দেখা কিছু মানুষের করোনাকালীন চাকরি হারানোর দৃশ্য আমি দেখেছি… সুন্দর সাজানো গোছানো জীবন ছেড়ে দিয়ে ফিরে যেতে হয়েছে গ্রামে….. সেখানে গিয়েও শান্তি মেলেনি…. পদে পদে অপমান অপদস্ততার সম্মুখীন হতে হচ্ছে….

করোনা শুধুই মৃত্যু ঘটাচ্ছে তা নয়, মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে করে তুলছে দুর্বিষহ….

জীবন আর জীবীকার মধ্যে কোনটাকে বেছে নিবে?? অবশেষে জীবিকাই জিতে যায়……

আর তখন অদৃশ্য সুতোর উপরে জীবনের মায়া ছেড়ে দিয়ে প্রচন্ড অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওরা পুতুল নাচের দুর্দান্ত কুশিলব হয়ে যায়…

~শিমু কলি

About The Author

Recent Comments