অভ্যাস

Photo of author

By Israt Sharmin

সারাটা রাত আট বছরের রিভিউ করতে করতে পার হয়ে গেল। তাজা ঘায়ের উপর পুরানো পুড়ে যাবার তীব্র গন্ধে সকাল হলো।

রোবটের মত নিয়মিত কাজগুলো সারা হয়ে গেল। কেন সে এগুলি করছে সে জানে না। আজ তার এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার কথা। তারপরেও দৈনিক ধরাবাধা সব কাজ শেষ করল। বাদ দেয়া হলোনা।

নীরা চাপা কষ্ট প্রসাধনে ঢেকে ঘর থেকে বের হলো, কর্মক্ষেত্রে প্রতিদিনের মত হাসি মুখে সেবা দিয়ে গেল। কেউ টের পায়নি কিছুই।

সবকিছুই তো একটা শেষ আছে, কর্মঘন্টা শেষ হলো, নীরা নেমে আসল পথে, এলোমেলো ঘুরপাক খেল এ পথে সে পথে। খুব করে ভাবল, যাই ঘটে যাক তার যে দরজার আজ বিস্ফোরণের শব্দে বন্ধ হয়ে গেছে সে ঘরের দরজার সামনে দাঁড়াবে না, বেল বাজাবে না, আর চাবি তার কাছে নেই।

বাবা-মা ভাই বোন যারা তাকে সম্প্রদান করেছে তারা তো তাকে রাত কাটানোর জন্য ঠাই দেবে কিন্ত ঘর তো দিবে না। এত বছর পরে আজ ঠাই চাইতে ইচ্ছে করছে না।

তারপর সে একটা খাবার রেস্টুরেন্টে বসল। খেতে গিয়ে তার মনে হলো তার কেনা চামচ সেটের কথা, নতুন পোরসেলিনের ডিনার সেটের কথা, গত মাসে শেষ কিস্তি দেয়া ফ্রিজের কথা, দুমাস ধরে ধুতে না পারা পর্দার কথা।
বারান্দার খাচায় পোষা পাখি দুটির কথা, ওদের খাবার পানি দেবার কথা।

খাচার নীচে ছয় টবে বসানো গানগুলির মাটি শুকিয়ে গেল কিনা সে কথা।
আহা কি ছিল ঐ ঘরটাতে একটা ছোট খাট আর মাথার উপর কালসিটে দাগ পড়া একটা ফ্যান। মাস না ঘুরতেই সেই ফ্যানে রং পড়ল, দরজা জানালায় পর্দা ঝুলল, পরের মাসে পথ খরচা বাচিয়ে দুটো হাড়ি যোগ হলো সাথে একটা সেলফ।
এর পরে আর খাওয়াটা হলো না। বিল দিয়ে চলে আসল আমিন বাজার ব্রীজ। নেমে বুঝতে পারল কয়েক মিনিট কান্নার পর্যন্ত জায়গা নেই এই নিষ্ঠুর শহরে। লোকে দাড়তে দিল না। ঝাপ দিয়ে মরা তো দূর।

একটু আগাতে আগাতে বন্ধ করা ফোনের দিকে তাকালো। তারপর ভাবল নয়টা বেজে গেছে দেখি শাওন ফোন দিল কিনা। সুইচ অন মিসকল এলার্ট চেক করল। টেইলার ছাড়া কেউ তাকে খোজেনি। পাওনা টাকার জন্য হয়তো ফোন করেছিল। এছাড়া কোন কল নেই, মেসেজ নেই।

তারপর নাড়া ঠিক করল বাড়ি ফিরবে না। বেচে থাকলে নিজের একটা ঘর করবে। যেখানে ফিরতে কারো অনুগ্রহ লাগে। যে বাড়ির দরজার তার নেইমপ্লেট থাকবে। নিজের ঘর। হোক খুব ছোট তবুও নিজের।

আপন হাটতে হাটতে থাকল। নতুন করে জীবনের গতি সাজাতে সাজাতে খেয়াল করল তার পাড়ায় ঢুকে পড়েছে। বাড়ির সামনে এসে পা আর চলে না।

হায়রে ঘরে ফেরার অভ্যাস।

একটা চামচের প্রতি, একটা পাপোসের, খাচার পাখির প্রতি, বারান্দার গাছের প্রতি কি ভয়ানক মায়া থাকে একটা মেয়ের। যে বাড়ি সে সকালে ছেড়ে গেল। সেখানেই সে….

হায়রে ঘরে ফেরার অভ্যাস। হায়রে মেয়ে মানুষ।

~ইসরাত শারমীন