আবর্ত

বিনে টিকেটে চড়ে বসেছি রেলগাড়িতে,
বগি গুলো একে একে সাজানো,
আমাকে বয়ে নিতে দুটি চাকা সমান্তরালে দাঁড়িয়েছিল,
চাকার শক্ত কাঁধে চড়ে আমি,
অবাক চোখের কাছে সব নতুন লাগে।

আমি বগি ধরে চলতে লাগলাম হামাগুড়ি দিয়ে,
টলোমলো পায়ে পৌঁছে যাই পরের বগিতে,
দাঁড়াতে চাইলে এগিয়ে আসে সেই দুটি চাকা।
আমি চলতে শিখি,দৌড়াতে শিখি,
চোখে রঙিন স্বপ্ন হয়ে ধরা দেয় ঘাসফড়িংয়েরা।
ছুটতে গিয়ে প্রজাপতির পাখায়,
বারেক পিছনে তাকাই,
তখনও আমায় বয়ে নিয়ে চলেছে ঘর্ষণে ক্ষয়ে যাওয়া চাকা।

চাকারা আমার বগি পরিবর্তনেই পুরোনো বেশ,
প্রথম বার একটা বগি পেরুতে চাইলাম নিজের পায়ে চেপে,
জানালা গলে দেখতে চাইলাম পৃথিবী।
ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দে চাকা জানান দিল অজানা আশংকায় কেঁপেছে তার বুক,
তার বাই ফোকাল চশমার আড়ালে ভাঁজ পড়া অভিজ্ঞ চোখের জল।

আমি লাফ দিয়ে পেরিয়ে গেলাম একটা বগি,
বগিটি ঝকঝকে, তকতকে।
চোখে নতুন স্বপ্ন নিয়ে বাসা বুনি,
সহযাত্রী তুলি,
বগির চাকচিক্য রাখতে আমার জুতা জোড়া ক্ষয়প্রাপ্ত,
চলতে চলতে পদদ্বয় ক্লান্ত।
পিছনে ফিরতে চাইতেই দেখি আমার এক চাকা খুলে গেছে অজান্তে।
কাত হওয়া বগির পতন ঠেকাতে আমি পা নামিয়ে দেই।

আজকাল বগি পার হই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে,
কাছিমের গতিতে।
ঝকঝকে বগির রঙ চটেছে,
সেও পা নামিয়েছে সমান্তরালে, খসে পড়েছে পুরাতন চাকাটিও।
চাকা হয়ে আমি ফিরতে চেয়েছি,
আমার ফেলে আসা বগিরা হারিয়ে গেছে কুজ্ঝটিকায়,
ফেরার পথ রুদ্ধ।
সিটি বাজিয়ে ট্রেন জানান দিচ্ছে সামনে স্টেশন।

তাসনূভা ঝিনুক
১২/৮/২০২১
সন্ধ্যা ৭ টা ৪৩ মিনিট